সব অভিভাবকই নিজের সন্তান-কে বুদ্ধিমান হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে দেখতে চান। সেই লক্ষ্যে পৌঁছোতে তারা নিজেদের দিক থেকে নানারকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যান।
নিজের সন্তান কতটা বুদ্ধিমান তার একটা স্পষ্ট ধারণা মা-বাবার থাকা একান্ত আবশ্যক। শৈশবেই যদি শিশুর উপর যথেষ্ট খেয়াল রাখা হয়— তাহলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে আপনার শিশু কতটা বুদ্ধিমান, কারণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় ঘটে শৈশব থেকেই।
একটু খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন আর পাঁচ-দশটা শিশুর থেকে আপনার সন্তান Intelligence-এর দৌড়ে কতটা এগিয়ে তবে সব শিশুর মধ্যেই নিজের মতো করে কিছু নিজস্বতা থাকে, যা তাকে অপরের থেকে আলাদা করে বা তাকে অসাধারণ করে তোলে। শিশুর মধ্যে কোন গুণগুলি দেখে অভিভাবকেরা তাদের বুদ্ধির আন্দাজ করতে পারবেন, বিশেষজ্ঞের মতামতের উপর নির্ভর করে তারই একটা বিশ্লেষণ এখানে দেওয়া হল।
শিশুর সার্বিক বিকাশ
সাধারণের তুলনায় যেসব শিশুর বুদ্ধি বেশি তাদের সার্বিক বিকাশের স্তরটিও অন্যান্য শিশুদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে থাকে। সময়ের আগে যেসব শিশুরা বসতে, হাঁটতে, কথা বলতে বা কোনও জিনিস ধরে তুলতে শিখে যায়, তারা অন্যান্য সমবয়সি শিশুদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে বুঝতে হবে।
যেসব শিশু নিজের অবিভাবকের চোখে চোখ রেখে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে চেষ্টা করে, হাত-পা নেড়ে, মুখে বিভিন্ন শব্দ করে বড়োদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহ দেখায়, তাদের বুদ্ধির বিকাশ অনেক তাড়াতাড়ি শুরু হয়ে যায়। পারিপার্শ্বিকের যে-কোনওরকম পরিবর্তনই তাদের সংবেদনশীল করে তোলে।
একা থাকার বাসনা ও জেদের প্রকাশ
নিজের সঙ্গে নিজে খেলা করা, একা একা খেলনা নিয়ে খেলা, একা বসে রং করা, এগুলোও শিশুর প্রতিভারই পরিচয় বহন করে। নিজের চেয়ে বয়সে বড়ো বাচ্চাদের সঙ্গে এরা মিশতে পছন্দ করে। একা একা সব কিছু করতে চেয়ে তারা সকলের বাহবা অর্জন করতে চায়। কোনওরকম সমস্যা তৈরি না করেই যে-শিশু নিজের মনোরঞ্জন করতে সক্ষম, তাকে জিনিয়াস বলেই ধরে নেওয়া হয়।
বাচ্চা জেদ করলে আমরা শাসন করে থাকি কিন্তু এই জেদই শিশুর ডিটারমিনেশন-এর সাক্ষ্য বহন করে। জেদ করেই হোক, নিজে যেটা চায় সেটা অর্জন করেই ছাড়ে। নিজের মতামতে অপরের সহমত আদায় করে নেওয়াটাও শিশুর বুদ্ধিমত্তারই পরিচয় বহন করে।
স্মৃতিশক্তি
ভালো স্মৃতিশক্তি শিশুর প্রতিভারই একটি লক্ষণ। কোনও কথা বা কিছু দেখলে তা যদি শিশু দীর্ঘদিন মনে রাখতে পারে তাহলে বুঝতে হবে শিশুটির মধ্যে বিরল প্রতিভা রয়েছে।
কল্পনাপ্রবণ ও পড়াশোনায় মনোযোগ
অনেক শিশুই নিজের মনে বানিয়ে বানিয়ে একটা গল্প দাঁড় করিয়ে দেয়। ঘটনা হয়তো কিছু ঘটেইনি কিন্তু কল্পনাশক্তি প্রয়োগ করে না-ঘটা ঘটনাই শিশু বিস্তারিত ভাবে বড়োদের কাছে শোনায়। পরে এর যথাযথ বিচার করতে গিয়ে বড়োদের হয়তো মনে হতে পারে শিশুটি মিথ্যা বলেছে। কিন্তু সদার্থক মানসিকতা নিয়ে যদি বিচার করা যায়, তাহলে বুঝতে হবে শিশুটির কল্পনাশক্তিরই মিশেল ঘটেছে তার বলে যাওয়া ঘটনাক্রমে। অনেক সময় দেখা যায় কাল্পনিক বন্ধু বানিয়ে বাচ্চা খেলা করছে। এই কল্পনাপ্রবণতা বাচ্চার মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়াটাও শিশুর জিনিয়াস হওয়ারই অন্যতম লক্ষণ। যাদের মধ্যে প্রতিভা রয়েছে তারা স্কুলের পরীক্ষাতে ভালো ফলাফল করে থাকে। স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে থেকে যদি খেলাচ্ছলে শিশুর সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয়, তাহলে তারা নানা ক্ষেত্রে প্রতিভা প্রদর্শন করতে পারে।
জন্ম থেকে ৪-৫ বছর বয়স অবধি শিশুর ৯০ শতাংশ পর্যন্ত Intelligence-এর বিকাশ ঘটে। সন্তানকে এসময় বিশেষ মনোযোগ দেওয়া দরকার। বই পড়া, গল্প লেখা, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে এবং নানা বিষয়ে তাকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করে যাওয়া উচিত। শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য ব্রেন বা মস্তিষ্কের পুষ্টি হওয়া অত্যন্ত জরুরি এবং এতে সবথেকে বেশি সহযোগিতা করতে পারেন অভিভাবকেরাই।