শীতের হিমেল বাতাস প্রাণের আরাম ঠিকই, কিন্তু কিছু কিছু অসুস্থতারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাইনাসাইটিস, সর্দি, কাশি, জয়েন্ট পেইন এই ঋতুর কমন সমস্যা। এই সময় আমাদের ক্ষুধা প্রবৃত্তি অর্থাৎ অ্যাপেটাইট বৃদ্ধি পায়। বারবার খাবার খাওয়ার ফলে ওজন বাড়ে। এর সঙ্গে পেয়ে বসে আলসেমি ও লেথার্জি।

শীতের হাওয়ায় ত্বকের শুষ্কতা বৃদ্ধি পায়। যাদের ড্রাই স্কিন তাদের তো আরও সঙ্গীন অবস্থা। তাই এই সময় শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখা দরকার ভিতর থেকে। কীভাবে করবেন শীতের মোকাবিলা, এখানে দেওয়া হল তারই কিছু Winter health tips।

রোগ প্রতিরোধক খাদ্যগ্রহণ

পাতিলেবু, কমলালেবু, আমলকী, ব্রোকোলি ফুলকপি, স্ট্রবেরি আপনার নিত্য খাদ্য-তালিকায় রাখুন। ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এই খাদ্যগুলি, আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পাচন ক্ষমতা বাড়ায় এমন একটি করে ওষুধ খান রোজ সকালে। এর ফলে আপনার অভ্যন্তরীণ সিস্টেমগুলো ঠিকমতো কাজ করবে এবং ইম্যুনিটি পাওয়ার বাড়বে।

মশলার গুণাগুণ

কাঁচাহলুদ, রসুন, গোলমরিচ, লবঙ্গ, সরষেদানা প্রভৃতি শরীর গরম রাখতে সহায়তা করে। রান্নার সময় দারচিনি ও ধনেগুঁড়োর সঙ্গে এগুলি ব্যবহার করুন। এর ফলে হজমশক্তি বাড়বে, সহজে সর্দিকাশি হবে না।

হালকা আহার

শীতে যেহেতু খাওয়াদাওয়া বেড়ে যায়, তাই কার্বোহাইড্রেট ইনটেক-এর পরিমাণও বেড়ে যায়। ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যাও বৃদ্ধি পায়। ওট্স, পেয়ারা, আমন্ড, ওয়ালনাট, তিল, গুড়, পরিজ, বিন স্প্রাউট্স, কড়াইশুঁটি, স্যালাড, বেশি করে খান। এগুলি ওজন বাড়ায় না। গরমজল খান অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার খাওয়ার পর।

ভেজি ডায়েট

গাজর, ফুলকপি, পালংশাক, লাউ ও বাঁধাকপির অশেষ খাদ্যগুণ। লো-ক্যালোরি হওয়া সত্ত্বেও এগুলিতে উপস্থিত মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস্, আপনাকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। সুপ বা ভেজিটেবল স্টু এই সময়ে অপরিহার্য করে তুলুন আপনার ফুডচার্ট-এ।

রান্নার তেল কেমন হবে?

রান্নায় ব্যবহার করুন সানফ্লাওয়ার অয়েল বা অলিভ অয়েল। এগুলি ওজন বাড়াবে না, অথচ সহজপাচ্য ও রোগ প্রতিরোধক।

আমাদের দেশে জলপাই তেলের প্রচলন খুব বেশি না হলেও একেবারে কমও নয়। এই তেলের দাম অন্যান্য তেলের তুলনায় বেশি হওয়ায় শুধু ধনীদের রান্নাঘরেই এর ব্যবহার বেশি দেখা যায়।

জলপাই তেলের বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ, স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ, হাড় মজবুত করা, ওজন কমানো, মনকে প্রফুল্ল রাখা এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। শুধু খাবারেই নয়, আমাদের ত্বকের যত্নেও জলপাই তেল দারুণ উপকারী। তাই শীতে ত্বক ও চুলের যত্নে নিয়মিত জলপাই তেল ব্যবহার করতে পারেন। শুষ্ক, স্বাভাবিক ও তৈলাক্ত—সব ধরনের ত্বকের জন্যই এই তেল সমান কার্যকর।

আপনি খাবারে যে তেলই ব্যবহার করুন না কেন, এর দোষ-গুণ নির্ভর করে কিভাবে এবং কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করছেন তার ওপর। তাই তেল কেনার আগে অবশ্যই পুষ্টিমান দেখে কিনুন। একটি কথা অবশ্যই মাথায় রাখবেন, তেল যতই ভালো হোক, খাবারে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এবং মাত্রাতিরিক্ত ভাজাপোড়া সবার জন্যই ক্ষতিকর।

অ্যালকোহলের প্রভাব

অ্যালকোহল শরীরকে ডিহাইড্রেটেড করে। জলের এই ঘাটতিতে শরীরে জনের ঘাটতি  হয়ে যেতে পারে। এছাড়া অ্যালকোহল গ্রহণের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হিসাবে, শরীরের রক্তনালিকাগুলিকে প্রসারিত করে। যার ফলে শরীর থেকে দ্রুত তাপ বেরিয়ে যেতে থাকে। মদ্যপান করার সঙ্গে সঙ্গে গরমের অনুভূতি হওয়ার এটাই কারণ। কিন্তু এই প্রক্রিয়া থামার পরই শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎই হ্রাস পেতে পারে। এর ফলে অসুস্থতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই শীতে সুস্থ থাকতে, মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান না করাই শ্রেয়৷

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...