বিদেশে ভারতীয় হিসাবে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অনেকেই আজকাল কিছু ধর্মীয় সংস্কারের শরণাপন্ন হচ্ছেন। নিজের ভারতীয়ত্ব প্রমাণ করতে যুগ যুগ ধরে চলে আসা পূজাপাঠ বা ধর্মীয় রীতি রেওয়াজকেই মূলধন করতে হচ্ছে কেন? বিজ্ঞান চেতনা বা তার্কিক বুদ্ধি দিয়ে কি নিজের অস্তিত্ব এবং চিন্তা দর্শানো এতই কঠিন?
কয়েক মাস আগে কানাডায় দুই যুবতি পরস্পরের সঙ্গে গড়ে ওঠা ভালোবাসার সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিয়েছেন বিয়ের মাধ্যমে। লেসবিয়ান বিবাহ কানাডায় স্বীকৃত। তাই ওই দুজন যুবতি ভারতীয় সংস্কৃতির উদযাপন করতে ভারতীয় মতেই বিবাহ করেন। একজন তামিল ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে, অন্যজন বাংলাদেশি। একটি ডেটিং অ্যাপ-এ দুজনের আলাপ ও সম্পর্ক। দুটি আলাদা দেশ ও সংস্কৃতিকে এক করতে তারা ভারতীয় আচার অনুষ্ঠানকে বিবাহের মাধ্যমে স্বীকৃতি দেন।
তামিল বিবাহে যেমন পাত্র ও পাত্রীর সম্প্রদান হয় পিতার কোলে বসে, এই বিবাহও সম্পাদন হয় একই পদ্ধতিতে। কন্যাদান পর্বের পর অগ্নিসাক্ষী রেখে বিবাহের সমস্ত রীতিই পালন করেন তারা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই পৌরাণিক ভাবধারা তাদের বিবাহকে স্বীকৃত করার জন্য প্রয়োজন হল কেন?
কানাডা যথেষ্ট উদার মানসিকতার দেশ। সেখানে লেসবিয়ান ম্যারেজ আইনসিদ্ধ। ওদেশে বহু ভারতীয় উপার্জন বা অধ্যয়নের জন্য যান। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তারা বসবাসও করেন। ব্যবসায়ীরা বহু বছর ধরে ব্যাবসা বাণিজ্যও করে যাচ্ছেন ওই দেশে। সামাজিক মেলামেশায় তাদের ভারতীয়ত্ব প্রমাণ করার কোনও দায় থাকে না। তাহলে এই বিবাহকে ভারতীয় মোড়ক দিতে পৌরাণিক আচারের বশবর্তী হতে হল কেন ?
বিবাহের দুই পাত্রী সুবীক্ষা এবং টিনা পরস্পরকে ভালোবাসেন। হৃদয় যেখানে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে, সেখানে এই দেশীয় আচার আড়ম্বর কিছুটা লোকদেখানো একটি প্রক্রিয়া নয় কী? কানাডা একটি তামিল ব্রাহ্মণ কন্যা ও বাংলাদেশি মেয়ের বিবাহকে আইনি ভাবে এমনিই স্বীকৃতি দিয়েছে। সেখানে দুটি পরিবার গর্ব করে অন্ধবিশ্বাস প্রচার করার এই উদ্যোগ না নিলেও কিছু কি সত্যিই এসে যেত?