বিকালে কিছু জিনিসপত্র কিনতে দোয়েল বাইরে বেরোল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছেলেটি গান ধরেছে। সে কিছু বলবে ভেবেও বলতে পারে না ছেলেটাকে। ছেলেটার নাম-ধাম কিছুই সে জানে না। দোয়েলের ফ্ল্যাটের মুখোমুখি ফ্ল্যাটে অনামি ছেলেটির বাস। ছেলেটির বয়স বত্রিশের বেশি নয়। শ্যামবর্ণ লম্বা সুঠাম চেহারা। মুখভর্তি চাপ দাড়ি। মাথায় ঢেউখেলানো লালচে চুল। মুখটা বোকা বোকা। দোয়েলকে দেখার পর থেকেই ছেলেটির গান গাওয়া শুরু হয়। অফিসের বাস ধরার জন্য দোয়েল বাস স্টপেজে এলে ছেলেটিও প্রতিদিন তার পা অনুসরণ করে বাস স্টপেজে আসে। দোয়েল বাসে না ওঠা অবধি ছেলেটি সেখান থেকে নড়ে না। বেশ কয়েকদিন দোয়েল এসব লক্ষ্য করছে। রাস্তাঘাটে লোকজন থাকার ফলে ছেলেটাকে দোয়েল কিছু বলতে পারে না।

আজও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল। দোয়েলের পিছনে অনামি ছেলেটিও চলল। একটু তফাতে থেকেই ছেলেটি দোয়েলের পা অনুসরণ করল। দোয়েল ফেরার পর দেখল ছেলেটিকেও নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকতে।

সকালবেলা। স্নিগ্ধ আলোর দেখা নেই। আকাশের আজ মুখ ভার। অঝোরে বৃষ্টি নামতে পারে। কলকাতায় অবশ্য বৃষ্টিটা একটু বিলাসিতা করেই হয়। রমাও তাড়াহুড়ো করে কাজ সেরে চলে গেছে। বৃষ্টি নামার আগে দোয়েল অফিসে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছিল। শ্রাবণের আকাশ যখন তখন জল ঢালবে এ আর নতুন কি!

দোয়েল ডার্ক ব্লু জিন্স, হোয়াইট টপ পরে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল। পাশের ফ্ল্যাটের সেই অনামি ছেলেটিও দোয়েলের পা অনুসরণ করে চলল। আকাশে মেঘের কারণে রাস্তায় লোকজন একটু কম। দোয়েল কিছুটা রাস্তা গিয়ে থেমে গেল। ছেলেটিও সঙ্গে সঙ্গে থেমে গিয়ে ঘাড়ে হাত দিয়ে পিছন ঘুরে দাঁড়াল। দোয়েল চলা শুরু করায়, সেও আবার চলতে শুরু করল। দোয়েল মনে মনে ঠিক করল আজ ছেলেটাকে মজা দেখাবে। বাস স্টপেজের কিছু আগে দোয়েল আবার কী মনে করে চারপাশটা দেখে ছেলেটির দিকে কয়েক পা পিছিয়ে এল।

দোয়েল ছেলেটির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একটু গম্ভীর গলায় বলল— ‘পোশাক পরিচ্ছদ দেখে আপনাকে ভদ্র বাড়ির ছেলে মনে হয়। সবসময় আমাকে ফলো করেন কেন! মেয়ে দেখলেই বেসুরো গলায় সুর বেরোয় তাই না! ছেলেটির মুখটা আমচুরের মতো শুকিয়ে গেল।’

সে আমতা আমতা গলায় বলল— ‘দেখুন, আমার কোনও খারাপ উদ্দেশ্য নেই। আপনি যতটা আমাকে অভদ্র ভাবছেন ততটা অভদ্র আমি নই। আপনাকে দেখতে আমার কেন জানি না খুব ভালো লাগে। আপনাকে দেখতে তাই মন্ত্রমুগ্ধের মতো ছুটে চলি।’

দোয়েল বিরক্তির সুরে বলল— ‘যাক মানছেন যে আপনি আমাকে প্রতিদিন ফলো করেন। আপনাকে যদি দেখি ফারদার আমাকে ফলো করতে তাহলে অন্য স্টেপ নিতে আমি বাধ্য হব।’ হঠাৎ দোয়েল তার অফিসের সুদর্শন, সুপুরুষ অনিন্দ্য রায়ের কথা ভেবে ছেলেটিকে বলল— ‘একটা কথা আপনার জানা দরকার। আমি এনগেজড।’

ছেলেটি কেমন অবাক দৃষ্টিতে দোয়েলের দিকে তাকাল। সে মুখ নামিয়ে বলল— ‘সরি। ভুল হয়েছে।’ সে বাড়ির পথে পা বাড়াল। টুপটাপ বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। দোয়েল হন্তদন্ত হয়ে বাসে উঠে পড়ল।

সারাদিন অফিসের কাজকর্মে দম ফেলার ফুরসত পায়নি দোয়েল। রবিবার অফিস বন্ধ থাকায় সোমবার কাজের চাপ একটু বেশিই হয়। ফাইলপত্র জমা দিয়ে দোয়েল অফিস থেকে বেরোবে এমন সময় অনিন্দ্য বলল— ‘দোয়েল, তোমার সঙ্গে আমার কিছু ব্যক্তিগত কথা আছে। ওয়েট ফর জাস্ট ফাইভ মিনিটস।’

দোয়েল মনে মনে বলল— ‘হয়তো অনিন্দ্যদা আজ তার কাছে ধরা দেবে। মুখ ফুটে বলবে ভালোবাসার কথা। লুকোচুরি শেষ হবে। এসব ভেবে ভোরের সূর‌্যের মতো লজ্জায় রাঙা হয়ে গেল তার মুখ।’

অনিন্দ্য এসে দোয়েলকে বলল— ‘চলো আমরা একটা কফি শপে যাই।’

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...