‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ আসলে এখন ‘মেয়েদের সহানুভূতি দেখাও’-এ পরিণত হয়ে গেছে। এমনিতে তো মেয়েদের উপর অত্যাচার আর ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। আর এক্ষেত্রে যুগযুগ ধরে রাজা-মহারাজারা এটাই প্রমাণ করেছেন যে, অন্য দেশে আক্রমণ করলে যেমন আর্থিক লাভ হয়, ঠিক তেমন-ই নারীদেরও অধিকার করা যায় সহজে। অর্থাৎ, যুদ্ধ মানেই মেয়েদের ধর্ষণ করার যেন রাষ্ট্রীয় অনুমতিপত্র সৈনিকদের হাতের মুঠোয়। এ বড়ো বেদনাদায়ক অধ্যায়।
গত কয়েকদিন যাবৎ কলকাতা সরগরম হয়ে আছে তিলজলায় সাত বছরের একটি নাবালিকার উপর যৌন নির্যাতন ও খুনের ঘটনায়৷ উত্তরপ্রদেশের আম্বেদকর জেলায় গত বছর অক্টোবর মাসে একটি ১৫ বছর বয়সের মেয়ে আত্মহত্যা করে। কারণ, টানা দু’দিন তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল এবং পুলিসে অভিযোগ জানানোর পর শুধু মেডিকেল টেস্ট ছাড়া আর কিছুই হয়নি। এই ঘটনা থেকে এটাই মনে হয়— মেয়েদের বাঁচানোর পরিবর্তে, এ যেন মেয়েদের মরতে দাও অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ধর্ষণের পর মেয়েদের কী পরিস্থিতি হয়, সুপ্রিম কোর্ট-এর সাম্প্রতিক এক রায়ে বিষয়টি সামনে এসেছে। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট সংসদীয় আইন সংশোধনের কথা উল্লেখ করে জানিয়েছে, ধর্ষণের শিকার হওয়া মেয়েরা এবার থেকে ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত করার অনুমতি পাবেন এবং বিবাহিত ধর্ষিতারাও এই অধিকার পাবেন।
দুঃখের বিষয় এই যে, আজও ধর্ষণ হয়, আজও উচ্চ আদালত পর্যন্ত ধর্ষণের মামলা গড়ায়, আজও মেয়েদের আগলে রাখতে হয়, আজও এই ভয় কাজ করে যে, অসাবধান হলে মেয়েরা, তা সে সাবালিকা বা নাবালিকা, যে বয়সেরই হোক– এই পাশবিকতার শিকার হবে।
আসলে ধর্ষণের খুব কম মামলা প্রকাশ্যে আসে। কারণ, বেশিরভাগ রেপ ভিক্টিম চুপচাপ যন্ত্রণা সহ্য করেন। ধর্ষিতার মনে এই ভয় কাজ করে যে, সমাজ, পরিবারের লোকজন সবার কাছে সে তখন শুধুই ‘ধর্ষিতা’, শুধুই সহানুভূতির পাত্র । ‘তুমি বাইরে একা বেরিয়েছিলে কেন?’, ‘এমন ছোটোখাটো পোশাক পরেছিলে কেন?’, ‘এত রাত পর্যন্ত রাস্তায় ছিলে কেন?’ ইত্যাদি হরেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় ধর্ষিতাকে।
রেপ কেস-এর ক্ষেত্রে পুলিশও তেমন গুরুত্ব সহকারে কাজ করে না সবসময়। আসলে তারাও জানে, দীর্ঘদিন মামলা আদালতে চলতে থাকলে, রেপ ভিক্টিম বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পিছু হটে, মামলা তুলে নিতে চায় এবং অনেকে তুলে নেয়ও। তাছাড়া রেপ ভিক্টিম-এর থেকে নয়, পুলিশের পকেট ভরে রেপিস্ট-এর থেকে৷ তাই সত্য ঢাকা পড়ে মেঘের আড়ালে।
যে-পুরুষটি ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ করল, তার দিকে সে ভাবে কেউ আঙুল তোলে না কিংবা ঘৃণার চোখে দেখে না। তাই আজ সময় এসেছে ছোটো থেকেই ছেলেদের সুশিক্ষা দেওয়ার। পুরুষদের শেখাতে হবে মেয়েদের সম্মান করতে।আর এই শিক্ষা একেবারে শৈশব থেকেই দেওয়া দরকার৷
ধর্ষিতা যখন আত্মহত্যা করে, তখন তা আরও বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে পরিবারের লোকজনের কাছে। কারণ, তারা যেমন সন্তানকে হারান, পাশাপাশি সারা জীবন তাদের সামাজিক গ্লানিরও শিকার হতে হয়। কিন্তু ধর্ষিতার মাথায় তখন এসব কথা আসে না, সে শুধু তখন অপমানের কথা ভেবে ভেবে আত্মহননের পথ বেছে নেয়।