প্রযোজক: রমেশ তৌরানি ও আকশায় পুরী

লেখক: নেহা শর্মা ও পবন কৃপালানি

পরিচালক: পবন কৃপালানি

অভিনয়ে: সারা আলি খান, বিক্রান্ত ম্যাসি, চিত্রাঙ্গদা সিং, অক্ষয় ওবেরয়, রাহুল দেব, শিশির শর্মা ও দীপক কালরা।

ওটিটি প্ল্যাটফর্ম: ডিজনি প্লাস হট স্টার

 ২০১১ সালের চলচ্চিত্র রাগিনী এমএমএস-এর লেখক পবন কৃপালানি এই চলচ্চিত্রের ব্যর্থতার পরে ইংরেজি বানানে নিজের নামের ‘ডাব্লু’ অক্ষর টি ‘ভি’-তে পরিবর্তন করেছিলেন। এই পরিবর্তনের পরে, তিনি “ডর অ্যাট দ্য মল” ছবিটি নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু এই ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর আবার পুরনো নামের বানান দিয়েই লেখক ও পরিচালক হিসেবে ‘ফোবিয়া’ ছবিটি নিয়ে আসেন তিনি, যেখানে অভিনয় করেছিলেন রাধিকা আপ্তে ও সত্যদীপ মিশ্র। কিন্তু এই ছবিটিও সফল হয়নি। এরপর আবার নামের সঙ্গে ‘ভি’ যোগ করে ২০২১ সালে ‘ভূত পুলিশ’ ছবিটি নিয়ে আসেন তিনি। সাইফ আলি খান ও অর্জুন কপুর অভিনীত ৪০ কোটি টাকা দিয়ে তৈরি ছবিটি ডিজনি প্লাস হট স্টারে আসে, কিন্তু ছবিটি দর্শকদের পছন্দ হয়নি। এবার সহ-লেখক ও পরিচালক পবন কৃপালানি একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য থ্রিলার ‘Gaslight’ নিয়ে এসেছেন।

ছবিটি ৩১ মার্চ থেকে ডিজনি প্লাস হট স্টারে স্ট্রিমিং হচ্ছে। ছবিতে অভিনয় করেছেন সারা আলি খান, চিত্রাঙ্গদা সিং এবং বিক্রান্ত ম্যাসি। অত্যন্ত দুর্বল গল্প ও চিত্রনাট্যের কারণে এই চলচ্চিত্রটিও একটি দুর্বল চলচ্চিত্রে পরিণত হয়েছে। সাইকোলজি, অ্যাডভেঞ্চার বা রহস্যের কিছুই ধরা পড়েনি সিনেমার কোনও অংশেই। সিনেমা শুরু হওয়ার মাত্র ১৫ মিনিট পরেই দর্শক বুঝতে পেরে যাবে, আসল খলনায়ক বা খুনি কে। বলা যেতে পারে পুরো ছবিটিতে মাত্র দুটি বা তিনটি দৃশ্য রয়েছে যা মানুষের উপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলতে পারে, তবে সেগুলিও খুবই দুর্বল। চলচ্চিত্র নির্মাতার বোঝা উচিত ছিল যে, শুধুমাত্র মোরবির একটি প্রাসাদে গিয়ে চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণ এবং একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করলেই, চলচ্চিত্রের রহস্য এবং রোমাঞ্চকে শক্তিশালী করে তোলা হয় না। পবন কৃপালানি সাইফ আলি খানকে নিয়ে ‘ভূত পুলিশ’ এবং সাইফের মেয়ে সারা আলি খানকে নিয়ে ‘গ্যাসলাইট’ ছবিটি তৈরি করেছেন। এই দুটি চলচ্চিত্রই রমেশ তৌরানি এবং আকশায় পুরী প্রযোজনা করেছেন এবং দুটি চলচ্চিত্রই ডিজনি প্লাস হট স্টারে স্ট্রিমিং হচ্ছে।

গল্প:

‘Gaslight’  ছবির গল্প গুজরাটের মোরবিতে সেট করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে রাজা রতন সিং গায়কওয়াড়ের(শাতাফ আহমেদ ফিগার) প্রাসাদ। ছবিতে রাজা রতন সিং গায়কওয়াড় অর্থাৎ দাতার মেয়ে মিশার(সারা আলি খান) দীর্ঘদিন পরে বাড়িতে ফিরে আসার মাধ্যমে শুরু হয়। একটি দুর্ঘটনায় মিশার মায়ের মৃত্যুর পরে মেয়ে বাবার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে। একই মর্মান্তিক ঘটনা মিশাকেও পঙ্গু করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে, রুক্মিণীর(চিত্রাঙ্গদা সিং) সঙ্গে রতন সিং গায়কওয়াড়ের দ্বিতীয় বিয়ে, বাবা ও মেয়ের মধ্যে বিচ্ছেদকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

দাতার ডাকে অনেক বছর পর বাড়ি ফেরে মিশা। রুক্মিণী জেনে অবাক হন যে, মিশা সোশ্যাল মিডিয়ার থেকে দূরত্ব বজায় রাখে। মিশার সৎমা রুক্মিণী, এমনকী তার বাবাও জানতেন না, মিশা প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর কীরকম দেখতে হয়েছে। মিশা বাড়ি ফেরে ঠিকই, কিন্তু এসে জানতে পারে তার বাবা নিখোঁজ।

রাতের অন্ধকারে পর্দার আড়ালে ছায়ামূর্তি দেখা যায়। চোখের পলকে মেঝেতে গ্যাসলাইটের ল্যানটার্ন এসে পড়ে, যেটা কিনা প্রমাণ করে যে, সেখানে কেউ ছিল। রাতে একটা জিনিসের সঙ্গে অন্য জিনিসের ধাক্কা লাগার শব্দ শোনা যায়। আশ্চর্যের বিষয় যখনই মিশা প্রাসাদে উপস্থিত থেকে সৎমা রুক্মিণীকে এই ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলির কথা জানিয়ে অর্থ খোঁজার চেষ্টা করে, তাকে বলা হয় যে, সে জিনিসগুলি কল্পনা করছে। এদিকে বাবার অনুপস্থিতিতে মিশার সাথে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত ঘটনাগুলো তাকে উপলব্ধি করিয়ে দেয় যে তার বাবার সাথেও নিশ্চয়ই কোনওরকম কিছু অন্যায় করা হয়েছে। কিন্তু মিশার বারবার বলা সত্ত্বেও কেউ তার কথা বিশ্বাস করে না।

মিশা এই রহস্যের গভীরে পৌঁছানোর জন্য তার বাবার একান্ত অনুগত চাকর কপিলের(বিক্রান্ত ম্যাসি) সাহায্য নেয়। মিশার খুড়তুতো ভাই রানা জয় সিং(অক্ষয় ওবেরয়)-এরও এই গল্পে একটি আলাদা অ্যাংগল রয়েছে, যাকে পরে হত্যা করা হয়। পুলিশ ইন্সপেক্টর এসপি অশোক তানওয়ার(রাহুল দেব)। কপিল সমস্ত চরিত্রগুলি সম্পর্কে অনেক নতুন গল্প বলে। কিন্তু মিশা কি তার বাবা অর্থাৎ রাজা রতন সিং গায়কওয়াড়ের সঙ্গে আদৌ দেখা করতে পারবে? যে মেয়েটি প্রাসাদে ফিরে এসেছে সেটা আসল মিশা কিনা, নাকি এটাও একটা কৌশল? পরিবারের এবং রাজা রতন সিংয়ের অনুগত কুকুর কি কোনও ইঙ্গিত দিতে সক্ষম হবে? উত্তরের জন্য ছবিটি দেখতে হবে।

রচনা ও পরিচালনা:

নেহা শর্মাকে নিয়ে গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন পবন কৃপালানি, কিন্তু সত্যিটা হল তিনি কেবল পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছেন, মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে তাঁদের কোনও ধারণা নেই। তাঁরা ছবির রহস্য বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেননি, ফলে মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যেই ছবিটি নিয়ে দর্শকদের আগ্রহের অবসান ঘটে। গল্প ও চিত্রনাট্য এতটাই দুর্বল যে পরিচালক হিসেবে পবন কৃপালানি ছবিটির নাম ‘গ্যাসলাইট’ রেখে দর্শকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন ঠিকই কিন্তু একশো শতাংশ সফল হতে পারেননি। যখন গ্রামে বিদ্যুৎ আসেনি তখন আলোর জন্য ল্যানটার্ন এবং বেশি আলোর জন্য গ্যাসলাইট অর্থাৎ ‘পেট্রোম্যাক্স’ জ্বালানো হতো। এই পেট্রোম্যাক্সের ভিতরে গোলাকার বেলুনের মতো ব্যাগ বাঁধা থাকত, যা চাপের সঙ্গে বেরিয়ে আসা কেরোসিন পুড়িয়ে সাদা আলোয় বদলে দিত। পরিচালক ‘Gaslight’ নামটা এজন্য বেছেছেন, কারণ নামের মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন একজন ব্যক্তির মানসিকতাকে। একজন ব্যক্তিকে মানসিকভাবে প্রচণ্ড বিরক্ত করা হলে সে তার বোধবুদ্ধি, বুদ্ধিমত্তা হারিয়ে ফেলতে বাধ্য। পরিচালক পবন কৃপালানি তাঁর ছবির প্রথম দৃশ্যে রাতে নদী বা সমুদ্রে চলন্ত নৌকায় এই পেট্রোম্যাক্সটি জ্বালিয়ে রেখেছেন। এ ছাড়া মনস্তাত্ত্বিক পর্যায়ে মিশাকে ভয় দেখানোর কিছু দৃশ্য আছে, কিন্তু সেগুলি ভয় না পাইয়ে হাসিরই উদ্রেক করে। সৎমা ও মেয়ের সম্পর্কও সঠিকভাবে গড়ে ওঠেনি। শেষে বলতে হয় সিনেমার কিছু দৃশ্য অবশ্যই ভালো হয়েছে।

অভিনয়:

২০১৮ সালে ‘কেদারনাথ’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন সাইফ আলি খানের মেয়ে সারা আলি খান। কিন্তু এরপর ‘সিম্বা’, ‘লভ আজ কাল’, ‘কুলি নাম্বার ওয়ান’, ‘আতরঙ্গি রে’সহ প্রতিটি ছবিতেই তিনি নিজেকে একজন আবেগহীন অভিনেত্রী হিসেবে উপস্থাপনা করেছেন। সারা আলি খানের এই সমস্ত ছবি ব্যর্থ হয়েছে। মজার ব্যাপার হল, সারা আলি খানের সিনেমাগুলো এখন প্রেক্ষাগৃহের পরিবর্তে ওটিটি-তে আসছে। ‘গ্যাসলাইট’ তাঁর তৃতীয় ছবি, যা ওটিটি-তে স্ট্রিমিং হচ্ছে। এই ছবিতে তিনি মিশা চরিত্রে হুইল চেয়ারে বসে আছেন, তাই তাঁর অভিনয় দেখানোর উপায় সীমিত। কিন্তু তিনি তাঁর পিতার নিখোঁজ হওয়ার অস্বস্তি এবং তার সাথে কী ঘটছে এইসমস্তগুলি, মুখের অভিব্যক্তি দিয়ে দর্শকদের দেখাতে পারতেন, কিন্তু সেখানেও তিনি সফল হতে পারেননি। তিনি সৎমা রুক্মিণীর প্রতি তার রাগ প্রকাশ করতেও অক্ষম, অথচ তাকে তিনি পছন্দ করেন না। কপিলের চরিত্রটিতে বিক্রান্ত ম্যাসির মতো দুর্দান্ত অভিনেতা অভিনয় করেছেন তবে এই ছবিতে নতুন কিছু করতে পারেননি তিনি। এখনও পর্যন্ত তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্র ও সিরিয়ালের দিকে তাকালেই বোঝা যায়, তিনি নিজেকে কিছু চরিত্রের মধ্যে এমনভাবে বেঁধে রাখছেন, যার কারণে তাঁর অভিনয় দক্ষতার সম্ভাব্য বিকাশ ঘটছে না। এর জন্য তিনি নিজেই দায়ী। চলচ্চিত্র নির্বাচনের ব্যাপারে আরও সতর্ক হতে হবে। রুক্মিণীর চরিত্রে চিত্রাঙ্গদা সিংকে দর্শকরা মনে রাখবেন। অক্ষয় ওবেরয়, রাহুল দেব এবং শিশির শর্মা দুর্বল চিত্রনাট্যের কারণে বিশেষ কিছু করতে পারেননি।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...