পাঠকেরা অনেকেই হয়তো দিল্লি বেড়িয়ে এসেছেন বা অনেকে দিল্লি Travel করার জন্য প্ল্যান করছেন। আজ সকলের জন্যই এমন কিছু তথ্য তুলে ধরতে চাই যা পড়ে কিছু জ্ঞান বাড়বে। শুধুমাত্র দিল্লির দর্শনীয় স্থানগুলোর উল্লেখ করেই আলোচনায় সীমাবদ্ধ থাকব না। এর বাইরেও এমন কিছু তথ্য ভাগ করে নিতে চাই যা সাধারণত ভ্রমণ কাহিনিগুলোতে খুঁজে পাবেন না।
আমরা যারা দিল্লির প্রবাসী, তারা অনেকেই হয়তো মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে বা হতাশ হয়ে বলে থাকি— দিল্লি ছেড়ে চলে যাব, আর ভালো লাগছে না। কিন্তু সত্যিই কি মন থেকে আমরা চাই চলে যেতে? মনে হয় না। দিল্লির মোহময়ী আকর্ষণ আমাদের আটকে রাখে তার মায়া জালে। মনে পড়ে যায় দিল্লির সেই পুরাতন দিনের কথাগুলো। নস্টালজিক হয়ে ওঠে মন।
দিল্লির পর্যটকদের জন্য প্রথমেই যেটি বলব সেটি হল খুব বেশি গরমে অর্থাৎ এপ্রিল, মে এবং জুন মাসে এবং খুব বেশি শীতে অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর থেকে ২৬ জানুয়ারি দিল্লি Travel করা উচিত নয়। ওইসময় দিল্লির আবহাওয়া খুব মারাত্মক।
দিল্লিতে বেড়াতে এলে যে জায়গাগুলো না দেখলে ভ্রমণ অসমাপ্ত থেকে যাবে তা হল— – ইন্ডিয়া গেট, কুতুব মিনার, লালকেল্লা, ইন্দিরা গান্ধির বাড়ি, গান্ধি ঘাট, রাষ্ট্রপতি ভবন, মুঘল গার্ডেন, যন্তরমন্তর, রাজঘাট, শক্তিস্থল, বীরভূমি, জুম্মা মসজিদ, বাহাই মন্দির বা লোটাস টেম্পল, বিড়লা মন্দির, দিল্লির কালীবাড়ি ইত্যাদি। তবে দিল্লিতে এসে যদি বাংলার মিষ্টির স্বাদ পেতে চান তবে যেতে হবে চিত্তরঞ্জন পার্কে বা অন্নপূর্ণা মিষ্ঠান্ন ভাণ্ডারে বা বাঙালি কলোনিগুলোতে।
দিল্লি Travel-এর সময় রেলওয়ে স্টেশনে নেমে দালালদের হাত থেকে বেঁচে চলতে হবে। চেষ্টা করবেন ওলা, উবের বা প্রিপেড ট্যাক্সি ধরতে। দিল্লিতে থাকার জন্য কালীবাড়িতে এবং ভারত সেবাশ্রম সংঘে থাকা, খাওয়া এবং দিল্লি, আগ্রা, হরিদ্বার ঘুরে দেখার ভালো বন্দোবস্ত আছে। আগে থেকে ফোনে কথা বলে বুক করে আসাই ভালো৷ কোনও অসুবিধেয় পড়লে ১০০ নম্বরে ফোন করে স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নেওয়া ভালো।
কেউ একবার দিল্লিতে এলে আর সহজে ছেড়ে যেতে চায় না। এখানে অনেককিছু না থেকেও যেন এমন কিছু আছে যা অন্যত্র নেই। রাজধানী দিল্লিতে আজকাল একটি নতুন থিম পার্ক চালু হয়েছে। পর্যটকদের বিনোদনের জন্য এটিতে বিশ্বের কিছু বিখ্যাত স্থাপনার রেপ্লিকা রয়েছে। প্রতিদিনই পর্যটকদের ভিড় উপছে পড়ছে এই পার্কে। দক্ষিণ দিল্লি পৌরসভা (SDMC) এখন ওয়ান্ডার্স অফ ওয়ার্ল্ড পার্কটির, দেখাশোনা এবং তত্ত্বাবধানে আছে।
আশ্চর্যজনক ভাবে, থিম পার্কের সমস্ত ভাস্কর্য এবং প্রতিরূপ শিল্প বর্জ্য দিয়ে তৈরি এবং ছয় একর জমিতে পার্ক-টি তৈরি করা হয়েছে। বর্জ্য থেকে শিল্পের ধারণা জনপ্রিয় করার জন্য এই ধরনের একটি উদ্যোগ। সব মিলিয়ে ১১০ টন বর্জ্য এবং একই সাথে গাড়ির যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়েছে এইসব রেপ্লিকাগুলো বানাতে।
প্রতিটি রেপ্লিকার উচ্চতা ভিন্ন ভিন্ন। বিশ্বের সাতটি বিস্ময়ের মধ্যে ভারতের আগ্রার তাজমহল ২০ ফুট, ইটালির রোমের কলোসিয়াম ১৫ ফুট, ব্রাজিলের রিও ডি জানেইরোর ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার ২৫ ফুট উঁচু। ফ্রান্সের প্যারিসের আইফেল টাওয়ার হল ৬০ ফুট, মিশরের গিজার গ্রেট পিরামিড-এর উচ্চতা ১৮ ফুট। সেলফি তোলা সহজ করার জন্য সমস্ত রেপ্লিকার পাশে একটি বিশেষ জায়গা রাখা হয়েছে। তাজমহলের রেপ্লিকা বা প্রতিরূপটি বানাতে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং এটি সবচেয়ে উঁচু প্রতিরূপ, আইফেল টাওয়ারের রেপ্লিকা বানাতে খরচ হয়েছে ৯৪ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে পার্কটি নির্মাণে মোট খরচ হয়েছে ৫ কোটি টাকা। পার্কটি ইতিমধ্যেই পর্যটক এবং ভ্রমণকারীদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল জাগিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে শনি ও রবিবার এখানে প্রচুর মানুষ ভিড় করছে। রেপ্লিকা দেখার পাশাপাশি, ভ্রমণার্থীরা ২০০ মিটার জঙ্গল বা বনের মধ্যে ঘুরে বেড়ানোর, Travel করার সুযোগ পাচ্ছেন। পার্কটিতে সুন্দর আলোকসজ্জা, বিভিন্ন থিম সহ সবুজ এলাকা, সৌর প্যানেল, ক্যাফেটেরিয়া, বিশেষ শিশুদের খেলাধুলার স্থান এবং হর্টিকালচার বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প দেখার সুযোগ আছে।
প্রমথ নাথ বিশী তাঁর লালকেল্লা গ্রন্থের ভূমিকা লিখতে গিয়ে বলেছেন— ‘মানুষকে যেমন ভূতে পায় আমাকে তেমনি দিল্লিতে পেয়েছিল। পেয়েছিল বা বলি কেন, দিল্লির ভূত এখনও আমার ঘাড় থেকে সম্পূর্ণ নামেনি। আবার কোনওদিন নিশ্চয়ই কলম হাতে দিল্লির প্রসঙ্গে ফিরে আসতে হবে। কিছুই বিস্ময়ের নেই এতে।…