এক সাম্প্রতিক দুর্ঘটনায় কেদারনাথ দর্শন করতে যাওয়া সাত পূণ্যার্থীর মৃত্যু হয়েছে। হেলিকপ্টারে বসা ওই তীর্থযাত্রীরা আন্দাজও করতে পারেননি কুয়াশায় ঢেকে থাকা পাহাড়ে, তাদের কপ্টারটি ধাক্কা খাবে এবং আগুনে ভস্মীভূত হবেন তারা। যবে থেকে চারধাম যাত্রায় এই হেলিকপ্টার ভ্রমণের ব্যবস্থার সূত্রপাত হয়েছে, তবে থেকে প্রায় অটোর মতো সংখ্যাবৃদ্ধি হয়েছে এই কপ্টারগুলির। এগুলি প্রলুব্ধ করেছে সেইসব পূণ্যলোভী মানুষদের, যারা পূণ্যের জন্য ওই দুর্গম পথ পাড়ি দিতে রাজি কিন্তু পায়ে হেঁটে নয়।

হিমালয়ের এইসব দুর্গম স্থানে ধর্মস্থলগুলির প্রতিষ্ঠা হয়েছে এবং যুগ যুগ ধরে সেখানে পৌঁছোনোর জন্য কোনও যানবাহনের ব্যবস্থা ছিল না। পুরাণ কাহিনিতে বর্ণিত সেইসব পুণ্যস্থানের মাহাত্ম্যের বিবরণ পড়ে, সাধারণ মানুষ বিপদ অগ্রাহ্য করেও বছর বছর তীর্থযাত্রায় বেরিয়ে পড়েন। এইসব জায়গায় পৌঁছোনোর রাস্তা অতি কঠিন কিন্তু সেখানেই ব্যাবসা ফেঁদে বসেছেন পুরোহিত-পাণ্ডারা এবং সাধারণ মানুষের ধর্মীয় আবেগই তাদের রোজগারের পথ প্রশস্ত করেছে।

বর্তমানে সব সরকারই এই পুণ্যলোভীদের তাদের ভোট ব্যাংকে ঢোকানোর স্বার্থে ওই দুর্গম গিরিপথেও থাকার ব্যবস্থা, রুমহিটার থেকে আধুনিক সুযোগ সুবিধা যুক্ত নানা পরিষেবা দিতে শুরু করেছে। ফলে পুরোহিত-পাণ্ডারা এখন ওখানেই গুছিয়ে বসেছেন ও তাদের ব্যাবসাও ফুলেফেঁপে উঠছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে বৈষ্ঞদেবী দর্শনের জন্য সহজ মাধ্যম রোপওয়ে (গন্ডোলা) চালু হতে যাচ্ছে৷ হেলিকপ্টার এর মতোই এই যন্ত্রযানেও পিলপিল করে চড়বেন পূণ্যার্থীরা এটাই প্রত্যাশিত৷

কেদারে তীর্থযাত্রার শেষ অংশের পথ, যেখানে পাহাড় সবচেয়ে বেশি খাড়া, সেই জায়গায় যাতে মানুষের পৌঁছোতে অসুবিধা না হয় তাই হেলিকপ্টারের পরিষেবা। দামি টিকিট। এসব সত্ত্বেও বিপর্যয়ে প্রাণ গেল সাত যুবক ও প্রৌঢ়ের। কেন হেলিকপ্টার নিতে হল? অন্ধবিশ্বাস কি তবে এতটাই চেপে বসেছে যে, যে-কোনও প্রকারে তীর্থযাত্রা সম্পূর্ণ করতেই হবে? আর অর্থ থাকলেই পথকে সুগম করবে আধুনিক ব্যবস্থা৷

রাহুল গাঁধি তাঁর ভারতযাত্রায় প্রমাণ করেছেন, পায়ে হেঁটে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছোনো সবচেয়ে ভালো উপায়। বহু যুবক আজ ট্রেকিংকে তাদের প্যাশন করেছেন। তাহলে হেলিকপ্টার কেন? অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল বলেই কি মানুষ বেশি সুবিধা ভোগ করতে চান? ভাবার সময় এসেছে। অ্যাডভেঞ্চার নাকি এক্সাইটমেন্ট? পুণ্যার্জনের জন্য কষ্ট করবেন নাকি টাকা দিয়ে হাসিল করবেন? অর্থের জোর থাকলেই সেটা কখন কোথায় ব্যবহার করবেন, ভেবে দেখুন।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...