বিয়ের পর মেয়েদের কাছে চাকরি ছেড়ে  দেওয়ার আশা করা হয়, কারণ বাড়িতে বিয়ে হয়ে আসা নারীকে, আমাদের সমাজ সংস্কৃতিবান নারী হিসেবে তার উপর মোহর লাগাতে চায় যা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। প্রকৃতপক্ষে, এই সমাজ নারীদের সীমানা শ্বশুরবাড়ির চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি করে রাখতে চায়।  এমন পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে বর্তমান সময়ে নারীদের উচিত বিয়ের পরেও তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়া, এতে হয়তো বাড়িতে বসবাসরত সংস্কৃতিবান নারীর ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে কিন্তু তার স্বাধীনতা নয়।

এই সমাজ নারীদের বিয়ের পর গৃহস্থালী সামলাবার জন্য চাপ দেয় কারণ তারা চায় নারীরা ঘরে বন্দি থাকুক। সমাজ মনে করে যে, মহিলারা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে যখনই  তারা বাড়ির বাইরে পা  রাখবে এবং বছরের পর বছর ধরে চলে আসা রক্ষণশীল ঐতিহ্যগুলি অনুসরণ করতে তারা অস্বীকার করবে।  সমাজের এই অন্ধকারাচ্ছন্ন মনোভাব ভেঙে বাড়ির বাইরে পুরুষের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে চলাটা বিবাহিত নারীদের জন্য একান্ত দরকার। এতে যেমন বিবাহিতার আত্মবিশ্বাস বাড়বে তেমনি সমাজের ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে এক ধরনের বিদ্রোহ ঘোষণা করাও হবে যারা বহু শতাব্দী ধরে কোনও না কোনও ভাবে মহিলাদের শোষণ করে আসছে। নারীদের উচিত এ ধরনের  শোষকদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করা। এই ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হল, বিয়ের পরেও মহিলাদের চাকরি করা।  বিবাহিত নারীদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে। চাকরি কি তাদের জন্য? তাদের জানা  উচিত যে এই কাজ করার মানসিকতা থাকাটা আজ তাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ! এটি কেবল তাদের বাড়ির চার দেয়াল থেকে বের হওয়ার একটি উপায় নয়, এটি তাদের স্বাবলম্বী করে তোলার একটি ধাপ। তাদের   সামর্থ্যকে কাজে লাগাতে হবে।  তাদের চিন্তা করা উচিত যে তারা যদি এটি প্রয়োগ করতে না পারে তবে তাদের শিক্ষার কী লাভ।

আসল কারণ কী

এই সমাজ সবসময় চায় নারীরা ঘরে বন্দি  থাকুক। এজন্য বাড়িতে রান্নাঘরও এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে একবারে মাত্র একজন ব্যক্তি এতে কাজ করতে পারেন। রান্নাঘর শুধু নারীদের জন্যই  প্রচলিত সমাজের এই ধারণা  ভেঙে দিতে হবে। এজন্য প্রথমেই ওপেন কিচেন তৈরি করতে হবে অথবা কিচেন সেটিংস এমনভাবে করতে হবে যাতে সেখানে কমপক্ষে ২ জন একসঙ্গে কাজ করতে পারে।

মেয়েরা যখন তার বাবার বাড়িতে থাকে, তখন সে সহজেই ইচ্ছা মতন নিজেকে চালিত করে। ইচ্ছে মতন চাকরি করে কিন্তু বিয়ের পর মেয়েরা চাকরি করতে চান না কেন? এর অন্যতম কারণ হল তাদের স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকেরা এটি করতে দেন না। বিয়ের পর মেয়েদের চাকরি করতে না যাওয়ার আরেকটি কারণ হল অল্প বয়সে সন্তান হওয়া। এ অবস্থায় শিশুর জন্ম হতে ৯ মাস সময় অতিবাহিত হয় এবং  এরপর পরবর্তী ৩ বছর তার যত্ন নিতে কেটে যায়।

এমন পরিস্থিতিতে সব নারীকেই পড়তে হয়। তাই বিয়ের আগে মেয়েদের পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে হবু স্বামীর সঙ্গে কথা বলা জরুরি। বিয়ের আগে আপনার ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গীর সাথে কথা বলুন। তাকে বলুন যে  বিয়ের পরেও আপনি চাকরি করতে চান।

পরিবারের সদস্যদের সাথে খোলাখুলি কথা বলুন

অনেক মেয়েরাই বিয়ের পর নিজেদের ইচ্ছেকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারা তাদের ভালো কেরিয়ার ছেড়ে দেয়। তাহলে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবলে আগেই উচিত এমন একজন জীবনসঙ্গী চয়ন করা যে কিনা আপনাকে কেরিয়ারে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে।

যেসব মেয়েরা কেরিয়ার নিয়ে অত্যন্ত সচেতন এবং বিয়ের পর চাকরি ছাড়তে চান না, তাদের  উচিত এ বিষয়ে তাদের জীবনসঙ্গী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে  খোলামেলা কথা বলা। এর ফলে মেয়েদের পক্ষে  সেই সব মানুষের উত্তর জেনে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে।

মহিলারা তাদের সম্ভাব্য স্বামীদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন যে, বিয়ের পরে কেরিয়ার এগিয়ে নিয়ে যেতে তারা কীভাবে স্ত্রীদের সাহায্য করতে পারেন?  তারা কি আপনাকে গৃহস্থালির দায়িত্ব পালনে আপনার পাশে দাঁড়াবে নাকি পরিবার বড় হওয়ার পরেও তারা তাদের স্ত্রীকে কেরিয়ার এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করবে?  যদি পরিবারের সদস্যরা বাড়ির বউকে চাকরি ছেড়ে দিতে বলে, তবে এটি কি তার স্বামী বিনা বিরোধিতায় পরিবারের কথা মেনে নেবে? জীবনসঙ্গী কতটা চেষ্টা করবেন স্ত্রীকে নিজের কেরিয়ার গরতে? এমনই কিছু প্রশ্ন  করে মেয়েরা নিজের জন্য সঠিক জীবনসঙ্গী  বেছে নিতে পারেন।

 

বিবাহিত মহিলাদের সময়ের যত্ন নেওয়া উচিত

বিবাহিত মহিলাদের নিজেদের সময়ের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। যারা চাকরি করেন তাদের  উচিত পরের দিনের খাওয়াদাওয়ার জন্য রাতেই প্রস্তুতি নেওয়া, যেমন শাকসবজি কেটে ফ্রিজে রাখা, পরের দিন অফিস কী পরে যাবেন রাতেই সেটা গুছিয়ে রাখা, ব্যাগে কী কী রাখবেন সেটা প্রস্তুত রাখা ইত্যাদি। এইভাবে   মহিলারা তাদের কাজের সময় কিছুটা হলেও বাঁচাতে পারেন।

দিল্লির বাসিন্দা ২৮ বছর বয়সি আনু জানান, তিনি দুই বছর ধরে বিবাহিত। প্রথমদিকে বিয়ের পর  চাকরি করতে গিয়ে অনেক অসুবিধা হয়েছে তাঁর, তারপর নিজের বেতনের একটা অংশ দিয়ে গৃহপরিচারিকা রাখার ব্যবস্থা করেন। এখন বাড়ি আর অফিসের কাজ একসাথে সামলানো অনেক সহজ হয়ে গেছে। বেতনের বেশ কিছুটা অংশ চলে যাওয়াতে তাঁর কোনও আফসোস নেই কারণ তিনি অনেক ভালোভাবে এখন সংসার সামলাতে পারছেন। সব মহিলাদেরই  কাজ করা উচিত এবং বিয়ের পরেও কাজ চালিয়ে যাওয়া  উচিত।

কর্মরতা নারীদের ঘর ও অফিসের কাজ দুটোই করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে, তাদের কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করা উচিত। পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে নিজের নিজের প্রয়োজনের যত্ন নিতে দিন, পকেট চেক  করার পরে, খাওয়া শেষ করে তাদের ঝুড়িতে নোংরা কাপড় ছেড়ে রাখতে বলুন। তাদের এঁটো প্লেট নিজেদের তুলতে বলুন, নিজেদের বিছানা নিজেদের ঝাড়তে বলুন, নিজেদের ঘরের জলের জাগ নিজেরাই ভর্তি করার মতো ছোট ছোট কাজ সকলের মধ্যে ভাগ করে দিন।

পুরুষদেরও কী  করা কর্তব্য? বাড়ি সামলানো কেবল মহিলাদের কাজ নয় কারণ একজন কর্মরত মহিলা হিসাবে অফিস এবং বাড়ি উভয়ই ভালোভাবে পরিচালনা সে তো করছেই, পুরুষের সমান কাজ সে করছে। আপনার সঙ্গী যদি রান্না করতে জানেন, তাহলে তাকেও রান্না করতে বলুন। যদি পরিবারে আরও অন্য সদস্যরা থাকে  তাদের সবার কাছে নম্রভাবে পরিষ্কার করে বলুন যে, আপনি একজন কর্মরত নারী, আপনি  চাকরি করেন, তাই বাড়িতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...