প্রঃ আমার বয়স ত্রিশ৷ বিয়ে হয়েছে পাঁচবছর৷ পারিবারিক পরিচিত বৃত্তের মধ্যে আমাদের সম্বন্ধ করে বিয়ে৷ স্বামীর যে আমায় শুরু থেকে অপছন্দ ছিল তা নয়, কিন্তু আমি বাচ্চা নেওয়ার কথা বললেই সে নানা কারণ দেখিয়ে তা এড়িয়ে যেত৷ ইদানীং সে আমায় অতিরিক্ত অবহেলা করা শুরু করেছে৷ স্বামীর কাছ থেকে  অবহেলার শিকার হয়ে, বুঝতে পারছি সে অন্য কার প্রতি আসক্ত। আমার সন্দেহ সে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়েছে৷

আমরা শোওয়ার ঘরে কিছুটা ব্যক্তিগত সময় কাটাব মনে করলেও দেখেছি, সঙ্গী ফোনের পেছনে সময় ব্যয় করছে। একসঙ্গে বসে থেকে বা ঘুরতে গেলেও সে ফোন নিয়েই ব্যস্ত থাকে, মেসেজ বা ইন্টারনেট ব্রাউজিং করে৷ আমার মনে হচ্ছে নিশ্চিতভাবে এটা অন্য একটি সম্পর্কেরই ইঙ্গিত।

বিনা কারণে অযৌক্তিক রাগ করে, সবসময় খিটখিট করে৷ খেয়াল করে দেখেছি, যে-বিষয়গুলো আগে তার রাগের উদ্রেক করত না, সেসব বিষয়েও ইদানীং সে অকারণে অসহনশীল হয়ে গেছে৷ কথায় কথায় আমাদের দাম্পত্য জীবনকে অভিশাপ হিসেবে অভিহিত করছে৷

আমি কী করব বুঝতে পারছি না৷ আমার সন্দেহ কি অমূলক?

উঃ সমাজ দ্রুত বদলাচ্ছে৷ আজকাল দাম্পত্যজীবন আগের চেয়ে অনেক জটিল হয়ে গেছে৷ বিয়ের সম্পর্ক টিকছে না বেশি দিন। অহরহ ঘটছে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা। তবে বিবাহ বিচ্ছেদের পেছনে অনেক কারণ থাকলেও পরকীয়া একটি অন্যতম কারণ বলে মনে করেছন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা।

পরকীয়ার সম্পর্ক একটি বিষাক্ত সম্পর্ক। একটি সুন্দর, হাসিখুশি সুখের সংসার নিমেষেই গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে৷ দাম্পত্য সম্পর্কে অসুখী হয়ে অশান্তির মধ্যে যারা রয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই বিবাহ বিচ্ছেদে যেতে পারছেন না বা যেতে চাইছেন না৷ তাদের মধ্যে অনেকেই কিন্তু পরকীয়ার মতো অবৈধ একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। অনেকের আবার পরকিয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনও কারণ লাগে না৷ তারা স্বভাবদোষে পরনারীতে আসক্ত হন৷

পরকীয়ার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে ফেসবুক। আপনার স্বামীর ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ফোন নয়, ফেসবুক কিংবা অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যমের প্রতি আসক্তির মাত্রার ওপরও নজর দেবেন।

আপনার স্বামী যদি আপনার ও পরিবারের পেছনে কম সময় ব্যয় করেন, তাহলে এটিও একটি লক্ষণ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। খুব ভালো করে আপনার সঙ্গীর প্রতিদিনকার কাজকর্ম লক্ষ্য করুন। যদি বুঝতে পারেন যে আগের চেয়ে কম সময় পাচ্ছেন, তাহলে বোঝার চেষ্টা করুন সেই বাড়তি সময়টা তিনি কীভাবে ব্যয় করছেন। স্বামী  যদি পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন বিনা কারণে, তাহলে ধরে নিতে পারেন তিনি পরকীয়ায় লিপ্ত।

স্বামী যদি কারণে-অকারণে অজুহাত দেখান তবে বুঝতে হবে এটি পরকীয়ার লক্ষণ। তাকে সময় দেওয়ার কথা বলে দেখুন, একসঙ্গে বসে টিভি দেখার কথা বলুন, তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান, আত্মীয়স্বজনদের ও পারিবারিক বন্ধুদের সময় দেওয়ার কথা বলুন। তিনি যদি আপনাকে অজুহাত দেখিয়ে না বলেন, তাহলে জানার চেষ্টা করুন অজুহাতটি সত্যি কিনা।

আপনার সঙ্গে যৌনসম্পর্কে সঙ্গী যদি উদাসীনতা দেখান তাহলে আপনি এটি পরকীয়ার নিশ্চিত লক্ষণ হিসেবে ধরতে পারেন। যিনি অন্যের সঙ্গে সময় কাটিয়ে আপনার প্রতি উদাসীন, তার মুখের অভিব্যক্তিই আপনাকে সব কথা বলে দেবে। আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সঙ্গী আগ্রহী নন, অর্থাৎ তার চাহিদাটি পূরণ হচ্ছে অন্য কারও মাধ্যমে। এ ছাড়াও অভ্যাসবশত যৌন সম্পর্ক করছেন কিনা- স্রেফ আপনাকে খুশি করতে, সেটিও লক্ষ্য করুন।

আপনার স্বামীর মুখে যদি নতুন কোনও একটি নাম ঘনঘন শুনতে পান, তবে একেও পরকীয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরে নিতে পারেন। সঙ্গীর যে-বন্ধুটির কথা আগে কখনও শোনেননি, এমন কারও কথা ঘনঘন শুনলে তাকে জিজ্ঞেস করুন এবং তার মুখের ভাব লক্ষ্য করুন। যদি তিনি প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান, কিংবা তার মুখের অভিব্যক্তি বদলে যায়, তবে বিষয়টি অবশ্যই  চিন্তার।

আপনি আপনার বিশ্বস্ত কোনও বন্ধু বা স্বামীর কোনও সহকর্মী বা বন্ধুর সাহায্য নিতে পারেন সত্যটি খুঁজে বের করার জন্য৷ তবে অবশ্যই  খেয়াল রাখবেন এই অনুসন্ধান পর্ব কিন্তু রিস্কি গেম৷ আপনার সন্দেহ অমূলক হলে এবং আপনার স্বামী আপনার পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে পারলে, ফল মারাত্মক হতে পারে৷ তাই পাঁচকান না করে আগে নিজে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবে পদক্ষেপ করুন৷

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...