যে-পথে Susunia ঢুকেছিলাম, সেই পথে কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে ডান দিকে বাঁক নিতে হবে শিউলিবোনার রাস্তায়। ওই পথে ঠিক ৪ কিলোমিটার যাওয়ার পর আবার ডান দিকে নেমে গেলাম। শুশুনিয়া পাহাড়ের যে-জায়গাতে মন্দিরের অবস্থান, ঠিক তার বিপরীতে উত্তর দিকে পাহাড়শীর্ষে আমাদের উঠতে হবে। রাস্তা নেই, বড়ো বড়ো পাথরের টুকরো পার হয়ে আমাদের বাইক একটা চাতালের মতো জায়গাতে থেমে গেল। নামেই রাস্তা, যে-কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রায় জনশূন্য এই এলাকা। বাইক রেখে চাতাল থেকে আমরা প্রথমে বেশ কিছুটা নেমে, একেবারে খাড়াই ধরে উঠতে শুরু করলাম। ১,৪৭০ ফুট উঁচুতে ওঠার পর রাজা চন্দ্রবাহনের শিলালিপি।

রাজপুতানার রাজা, শ্রীসিংহ বর্মার পুত্র রাজা চন্দ্র বর্মা, খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে বঙ্গ বিজয় করেন। এই মহান কীর্তির স্মারকস্বরূপ শুশুনিয়া পাহাড়ের শীর্ষদেশে এই শিলালিপি খোদাই করেন। শুশুনিয়া লিপির দুটি অংশ, উপরের অংশে থাকা বৃত্ত থেকে রেখা বেরিয়েছে। লিপি বিবর্তনের ফলে, Susunia লিপিটি পরিবর্তিত হয়েছে ভাবলিপিতে। এই রকম লিপির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, কোনও বস্তু বা ভাব বোঝাতে পুরো ছবি না এঁকে অল্প কিছু রেখা বা মোটিফ ব্যবহার করা হতো। গবেষকগণ এই ভাব লিপিকে বিষ্ণুচক্র বলেছেন।

বিষ্ণুচক্রের নীচে এবং পাশে তিনটি ছত্রে খোদিত লিপি আছে। এটা লিপির দ্বিতীয় অংশ। সংস্কৃতে উৎকীর্ণ লিপির অক্ষর হচ্ছে ব্রাহ্মি। এর বাংলা অর্থ— পুষ্করনার অধিপতি মহারাজা শ্রীসিংহ বর্মার সুপুত্র মহারাজা চন্দ্র বর্মার কীর্তি। অধ্যাপক সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, এই লিপি হল, দি ওল্ডেস্ট ব্রাহ্মি ইনস্ক্রিপশন ইন বেঙ্গল। বিষ্ণুচক্রের একটু নীচে, বাঁ দিক ঘেঁসে শঙ্খ আকৃতির আরও একটি লিপি আছে। গবেষকরা বলেন, ওই লিপি তান্ত্রিক শঙ্খ লিপি।

যেন কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে গিয়েছিলাম, ইতিহাসের সেই গলি-ঘুঁজিতে। যে-সময়ে রাজ্য জয়ের দুর্মর আকাঙ্ক্ষা মহারাজা চন্দ্র বর্মাকে সুদূর রাজস্থানের পুষ্করনা থেকে টেনে এনেছিল, এই শস্য শ্যামলা বাংলায়। রাজ্য জয়ের গৌরবকে উৎকীর্ণ করেছিল, এই শুশুনিয়া পাহাড়ের শীর্ষ দেশে। কিন্তু এই ইতিহাস এত অবহেলায় পড়ে আছে কেন? এই প্রশ্নটাকে রেখে এলাম ওই পাহাড় শীর্ষে।

মূল রাস্তা থেকে যে-জায়গাতে ডান দিকে বাঁক নিতে হচ্ছে, সেখানে কি নির্দেশ সম্বলিত বোর্ড লাগানো যায় না? শিলালিপির কাছে যাওয়ার জন্য রাস্তাটি কি একটু চলার যোগ্য করা যায় না? পাহাড় কেটে যদি সিঁড়ি বানানো যেত, তাহলে অনেক বয়স্ক মানুষ ওই শিলালিপি দেখার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারতেন— এইসব প্রশ্নগুলি ওই পাহাড় শীর্ষে রেখে এবারের মতো ফিরে এলাম।

কীভাবে যাবেন: ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলে আসানসোল অথবা বার্ণপুর স্টেশন থেকে যে-কোনও বাঁকুড়াগামী ট্রেনে চেপে ছাতনাতে নামতে হবে। ছাতনা থেকে প্রচুর আটো অথবা টোটো পাওয়া যাবে Susunia যাওয়ার জন্য। দুর্গাপুর থেকে বাঁকুড়াগামী অনেক বাস আছে, বাসে চেপে ছাতনায় নেমে যাওয়া যাবে।

কোথায় থাকবেন: পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিচালিত যুব আবাস অথবা ছোটো বড়ো অনেক প্রাইভেট লজ আছে যার ভাড়া ৪০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...