শীতের এক সুন্দর, মিষ্টি সকালে, আমরা বাইক বাহনে বেরিয়ে পড়লাম শুশুনিয়া পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। সেখানে পাহাড় শীর্ষে রাজা চন্দ্রবাহনের শিলালিপি আছে, আমরা বেরিয়েছি ওই শিলালিপি দেখব বলে। ইতিহাসের পাতা খুঁড়ে আমরা যেতে চাইছি, রাজা চন্দ্রবাহনের রাজত্বকালে। আমাদের যাওয়ার পথটা ছিল, বাঁকুড়া জেলার বিহারীনাথ মন্দির হয়ে। যে-পথ কখনও গাছপালা আচ্ছাদিত, কখনও রুক্ষ। ছমছমে নির্জনতার মধ্যে ক্বচিৎ সাইকেল অথবা মোটর সাইকেল, দেখা দিয়েই মিলিয়ে যাচ্ছিল। এই পথ অনেকটাই ভাঙাচোরা। শালতোড়াতে আসার পর পথটি রাজপথ হয়ে গেল! অর্থাৎ হাইওয়ে পেয়ে গেলাম, থামল একেবারে Susunia-র পাদদেশে এসে।
শুশুনিয়া যাওয়ার জন্য, আমাদের জমায়েত ছিল সকাল ৮টায়, বার্ণপুর বাস স্ট্যান্ডে। বার্ণপুরের রিভার সাইডের পিছন দিকে বিস্তীর্ণ দামোদরের উপর নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। সেই সাঁকো পার হয়ে আমরা যাব প্রথমে বিহারীনাথ। সাঁকোতে বাইক নিয়ে ওঠার পর কোনওরকমে পার হয়ে মনে হল, যেন নতুন জীবন ফিরে পেলাম। সাঁকোর ওপার থেকে বিহারীনাথের পথ ৪ কিলোমিটার। গোয়ালতোড় এবং আরও দু'তিনটি গ্রামের ভিতর দিয়ে, কিছুক্ষণ চলার পরেই পৌঁছে গেলাম বিহারীনাথ। তখনও সেরকম লোক সমাগম হয়নি। প্রায় জনহীন মন্দিরে কিছুটা সময় অতিবাহিত করে, জলযোগ সেরে, এগিয়ে গেলাম শুশুনিয়ার দিকে।
বিহারীনাথ থেকে সড়ক পথে শালতোড়া মোট ৮ কিলোমিটার রাস্তা। আর শালতোড়া থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার। চলতে চলতে এক সময় পৌঁছে গেলাম শুশুনিয়া। সেই Susunia যেখানে অনেকবার আসব আসব করেও আসা হয়নি। পাহাড়ে ওঠার মুখে প্রচুর খাবারের দোকান। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যুব আবাস থেকে শুরু করে ছোটো বড়ো অনেক প্রাইভেট লজ। নিজেদের সাজিয়ে গুছিয়ে অপেক্ষা করছে টুরিস্টদের জন্য। আমরা চা-বিস্কুট খেয়ে উঠে গেলাম পাহাড়ে।
মন্দির এলাকা জমজমাট। প্রচুর দর্শনার্থী। স্থানীয় যারা, তাদের অনেকেই শুশুনিয়ার অন্যতম আকর্ষণ ঝরনার জলে স্নান করছে। অনেকেই তাদের জলের বোতল ভরে নিচ্ছে। আমরাও যে-যার বোতলে ঝরনার জল ভরে নিলাম। মন্দির, দোকান-পসরা, পাথর কেটে তৈরি করা, নানা দেবদেবীর মূর্তি, থালা, গেলাস দেখছিলাম, দেখছিলাম রং-বেরঙের পোশাকে সজ্জিত ভ্রমণার্থীদের।