দিল্লির এমন অনেক জমি আছে, যা কেন্দ্র সরকার চাষিদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছিল অনেক বছর আগে। এর মধ্যে বিস্তীর্ণ জায়গা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং কিছু জায়গায় ছোটো শিল্পও শুরু হয়েছে। আবার ওই জমি থেকে বসবাসের জন্যও প্লট দেওয়া হয়েছে। তবে ইন্ডাস্ট্রি, দোকান কিংবা বসবাসের জন্য জমি যে-দামে বিক্রি করা হয়েছে, তার চেয়ে কিছু কম দামে দেওয়া হয়েছে হাসপাতাল, স্কুল এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে।

জমি তো দেওয়া হয়েছে, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল সবই চলছে কিন্তু দিল্লির ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (ডিডিএ) ৪০-৫০ বছর পরও সেইসব জমিতে নিজেদের আইনি অধিকার বলবৎ রেখেছে।

দিল্লির ডেভেলপমেন্ট অথরিটির নীতি হচ্ছে— লিজ হোল্ড ল্যান্ড। ডিডিএ এমন এক কন্ট্রাক্ট পেপার-এ সাইন করিয়ে রেখেছে যে, সেই কন্ট্রাক্ট মোতাবেক জমির লিজ হোল্ডাররা যদি কোনও নিয়ম কিংবা আইন ভাঙে, তাহলে তার লিজ প্রপার্টি অ্যালটমেন্ট বাতিল করা হতে পারে, তা সে জমি যত বছর ধরে ভোগদখল করে আসুক-না কেন।

এখন শহরে বসবাসের ধরন যেমন বদলে গেছে, ঠিক তেমনই কর্মক্ষেত্রের রীতিনীতিও বদলে গেছে কিন্তু লিজ হোল্ড জমির শর্ত বদলায়নি।

কয়েক বছর আগে সুপ্রিম কোর্ট লিজ হোল্ড জমির বিষয়ে জানিয়েছিল যে, দিল্লির লিজ হোল্ড জমির মধ্যে আবাসিক অঞ্চলে কোনও বড়ো ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান করা যাবে না। ৪০- ৫০ বছর আগেও যদি নীতি নির্ধারণ হয়ে থাকে, তাহলেও আবসিক এলাকাকে ব্যাবসায়িক ক্ষেত্রে পরিণত করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবে এই নীতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলছে ব্যাবসা। দিল্লির খান মার্কেট- -এর দিকে নজর ঘোরালেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়।

দিল্লির এক হাসপাতালের অ্যালটমেন্ট বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। কারণ, লিজ নেওয়া ব্যক্তি হাসপাতাল বানানোর জন্য জমি নিয়ে অন্য কাউকে হস্তান্তর করেছিলেন। ট্রায়াল কোর্ট ডিডিএ-র পক্ষ নিয়েছিল কিন্তু হায়ার কোর্ট ওই মামলা খারিজ করে দিয়েছিল এই বলে যে, এই ক্ষেত্রে শুধু মেম্বার বদল হয়েছিল, মালিকানা নয়।

আসলে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে সরকারের ততটাই নাক গলানো উচিত, যতটা নাক গলালে আমজনতার ক্ষতি হবে না। কারণ, আইনের ভয় দেখিয়ে কিছু করাও সরকারের পক্ষে ভালো হবে না।

দেশের কৃষিজমির উপর সরকারের অধিগ্রহণ নীতি যেমন ভালো নয়, ঠিক তেমনই জনগণকে চাপে রাখাও ঠিক নয়। বলা বাহুল্য, সরকার কৃষিযোগ্য জমি বাঁচানোর লোক দেখানো প্রয়াস জারি রেখেছে ঠিকই, আসলে তো শুধু অর্থ রোজগারের ধান্দা। চেঞ্জ ইন ল্যান্ড নীতি এক হাস্যকর বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সরকার যদি শুধু অর্থ উপার্জন করতে চায়, জনগণের নীতি পরিবর্তনের ১০-২০ বছরের আবেদন-নিবেদন ব্যর্থ হয়ে যাবে।

এখন মহিলারা উত্তরাধিকার সূত্রে জমি পাওয়ার অধিকারী। কিন্তু সেখানেও অনেক আইনি মারপ্যাঁচ। সর্বত্র দালালরাজ। সহজে কিছু পাওয়া যায় না। যে-সব মেয়েরা সরকারি চাকরি করেন, তারা সুবিধামতো বদলি চাইলেও পান না। আসলে সব ক্ষেত্রেই সরকারি ফাঁস গলায় আটকে থাকে, এটাই সত্যি।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...