বস্তুত, সুচন্দ্ৰাই অর্ককে চাবুক মেরে পাগলা ঘোড়ার মতো ছোটাচ্ছে। ওকে পারতেই হবে। সুচন্দ্রাকে পেতেই হবে। অর্কর নিঃশ্বাসে সুচন্দ্রা। প্রশ্বাসে সুচন্দ্রা। শয়নে সুচন্দ্রা। কিন্তু, স্বপ্নে ক্রিকেট। ডবল সেঞ্চুরি।

প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরি করে সবাইকে চমকে দিল অর্ক। পরদিন সব কাগজেই অর্কর ছবি বেরোল। অর্ক হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করল সুচন্দ্রাকে। সুচন্দ্রা সিন হল। কিন্তু রিপ্লাই করল না। তবে রিংকি ফোন করে বলল, “কাগজে তোর ছবি দেখেছে ও। আমি বললাম, কী রে? কিছু বল! ও শুধু হাসল। আমি আর ওকে ঘাঁটাইনি।”

সুকান্তদা অফিস থেকেই ফোন করল। বলল, ‘বড়ো ম্যাচে তোর জায়গাটা পাকা হয়ে গেল। সেঞ্চুরিটাকে বেশি রেলিশ করিস না। টার্গেটটা মাথায় রাখিস।’

একমাস পর ফাইনালে উঠেছে অর্কর ক্লাব। ফাইনালে খেলবে অর্ক। ফাইনাল খেলার দিন সে সুচন্দ্রাকে মাঠে আসতে অনুরোধ করল। রিংকির হাতে ভিআইপি গ্যালারির টিকিটও পাঠাল অর্ক। মাঠে নেমেই গ্যালারিতে চোখ গেল তার। সানগ্লাস চোখে বসে আছে অপরূপা সুচন্দ্রা। পাশে রিংকি। কিন্তু টিমের খুবই খারাপ অবস্থা। অর্ক নেমেছে সেভেন ডাউনে। দু’শোর ওপরে টার্গেট রান। অর্ক মনে মনে ভেবে নেয়, ওর ডবল সেঞ্চুরি ওকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

প্রথম থেকেই বেপরোয়া মার মারতে শুরু করে অর্ক। যেন স্বয়ং শচীন ভর করেছে ওর কাঁধে। শচীনের মতোই বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারির বন্যা বইয়ে দিতে লাগল। গোটা গ্যালারিজুড়ে অর্ক, অর্ক আর অর্ক। চিৎকারে চিয়ার আপ করার ধামাকা কাকে বলে দেখে যা। ঠিক যেন স্বপ্নের মতো স্বপ্নপূরণের দিকে প্রতি বলে বলে এগোচ্ছে অর্ক। গ্যালারি থেকে ওকে লিটল মাস্টার বলে দৃষ্টিভ্রম হচ্ছিল। অবিকল শচীনের মতো ক্রিজে অবিচল। হাফ সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরি। তারপর ডবল সেঞ্চুরি করে রানের পাহাড় তুলে দিল অর্ক। অর্ক নটআউট। দল চ্যাম্পিয়ন।

অর্ক পৌঁছে গেল ওর লক্ষ্যে। করতালি আর চিৎকারে অভিবাদন কুড়োতে কুড়োতে ড্রেসিং রুমে এসে এলিয়ে পড়ে অর্ক। সাংবাদিকরা ওকে ছেঁকে ধরে। তখনই ঠিক সিনেমার লাস্ট সিনে যেমন হয়, তেমন করেই ওর সুচন্দ্রা ওকে অর্ক অর্ক বলে ডাকতে ডাকতে ছুটে এসে ড্রেসিংরুমে ঢুকে পড়ে। অর্কর বুকের কাছে জামাটাকে খামচে ধরে উত্তেজিত কণ্ঠে বলে চলে, ‘অর্ক, তুমি সত্যিই শচীন, তুমি সত্যিই শচীন। সেই ভঙ্গি, সেই ব্যাটিং স্টাইল। আই লভ ইউ অর্ক। আমি রাজি অর্ক। আমি রাজি।’ সুচন্দ্রা উত্তেজনায় ফুটতে থাকে।

ড্রেসিংরুমের সবাই অবাক। হতচকিত হয়ে যায় সাংবাদিকরা। কোচ অভিরূপদাও অবাক হয়ে সুচন্দ্রাকে দেখতে থাকে। সুচন্দ্রার সে নিয়ে কোনও পরোয়া নেই। তাকে এখন থামায় কে? সেই অবস্থা। অর্ক ভিড় থেকে সুচন্দ্রাকে টেনে একটু আড়ালে নিয়ে যায়। বলে, ‘বলো, এবার বলো।”

সুচন্দ্রা বলে, ‘আমি রাজি অর্ক, আমি রাজি। ওহ্, ইউ আর মাই রিয়াল লিটল মাস্টার। তুমি শচীন হতে পেরেছ অর্ক। আমি রাজি।”

সুচন্দ্রার এমন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখে বিস্ময়ে বোবা হয়ে যায় অর্ক। তখনই অর্ক তার নিজের ভিতরে এক আশ্চর্য রূপান্তর উপলব্ধি করে। সে অবাক চোখে খানিক নির্নিমেষ দেখে তার স্বপ্নের রাজকন্যা সুচন্দ্রাকে। কিন্তু এই মুহূর্তে অর্ক তার নিজস্ব সত্তার অদ্ভুত রূপান্তরে নিজেই অবাক হয়ে যায়। তখনই অর্ক ওর খেলাটা খেলে দিল। সুচন্দ্রার চোখে চোখ রেখে সে বলে, “আবার বলো কী বললে।’

সুচন্দ্রা বলল, ‘বললাম তো আমি রাজি, আমি রাজি।”

অর্ক ধীর গম্ভীর গলায় বলল, ‘আমিও রাজি। তবে একটা শর্ত আছে।”

সুচন্দ্রা নূপুরের নিক্কণ তুলে হেসে বলে, ‘বলো, কী শর্ত তোমার।”

অর্ক বলে, “তোমাকে মাধুরি দীক্ষিত হতে হবে।”

ভূমিকম্প থেমে যাওয়ার পরে যখন সম্বিত ফিরে পেল অর্ক, দেখল সে কখন চলে গেছে। আজ একযুগ পরে অর্ক দেখল, ওর স্বপ্নের সুচন্দ্রা শর্ত পূরণ করে অবিকল মাধুরি দীক্ষিত হয়েছে।

সমাপ্ত

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...