ঠিক এরকম একটা ঘটনা ডরোথি শুনেছিল জঙ্গলে মধু শিকারে যাওয়া এক মউলি ছেলের মুখে। তার চোখের সামনে দিয়ে বাঘ তার বাবাকে নিয়ে গিয়েছিল নৌকা থেকে। ঘটনাটা বলতে বলতে তখনও কেঁপে কেঁপে উঠছিল সে, 'আমরা দীর্ঘদিন ধরি জঙ্গলি যেতাম। বাবা তো পেরায় পনেরো ষোলো বছর বয়স থেকি জঙ্গলি যায়। আমার যখন আঠারো বছর বয়স, তখন থেকি আমুও জঙ্গল শুরু কইরলাম। বাবার সঙ্গে জঙ্গলে যায়া কাঁকড়া ধরতাম, মধু কাইটতাম। মরিচঝাঁপির জঙ্গলি যায়া মাছ কাঁকড়া ধইরতাম, বাইরের জঙ্গলিও যেতাম।”
‘একদিন মরিচঝাঁপির জঙ্গলে তখন দুপুর হয়ই গ্যাসে। আমাদের বাড়ির ওপারে সোজা খালটা। খালের ভিতর যায়া দুটো ডাল দু- দিকে গ্যাসে। দক্ষিণের ডালে ঢুকি গেলাম আমরা। যে খালটায় ঢুকিসি পুব্বো দিকে আগা,
পশ্চিমে গোড়া। আমাদের নৌকাটা মোটামুটি চোদ্দ-পনেরো হাত লম্বা হবে। খাল থিক্যা একখান সরু খাল বেরোই চিলমারী কুমিরমারী জঙ্গুলে যায়া জয়েন্ট হইসে। খালের একদম আগায় খুব সরু জায়গায় নৌকা রাখি দিসি। তক্ষনি বর্ষা আসল, ভালো জোরে বর্ষা আসল, দশ পনেরো মিনিট বর্ষা হবার পর আস্তে আস্তে বর্ষা একটু কমে আসল। কমে আসার পর ওরা দু'জন নেমে গেলো, বাবা আর পতিবেশী কাকা।’
‘দক্ষিণ পারে নেমে ওরা শ’দুই ফুট ভেতরে গ্যাসে। আমি নৌকায় বসি রইলাম। এইবার নৌকায় যখন একা বসে আছি, তখন চিন্তা করসি কী করি! জঙ্গলের তো পরিস্থিতি ভালো না! বাঘের চাপ খুব! আমি তাড়াতাড়ি করি নৌকা বেঁধে, ওদের পেসন পেসন গেলাম, জোরে গেলাম। যাওয়ায় ওরা বলল, কেন তুই নৌকা ছেড়ে আসিছিস? আমি বুললাম, জঙ্গলের পরিস্থিতি খারাপ, আমি থাকি তোমাদের সঙ্গে। '
‘এবার কাছাকাছি চারখানা কাঠগড়ান গাছে চাক দেখিসি। চাকে মধুও হইসে খুব। এক একটা চাকে পেরায় তিরিশ কিলো মধু হবি। বাবা বুইল্লো চাক কাটা হবে ধুয়ো করা দরকার। হেতাল পাতার বোলেন হবে, চলো কুমিরমারির দিকে যাই। বর্ষায় হেতাল পাতা সব ভিজি গ্যাসে, শুকনা পাতা চাই। কাকা বলতিসে কুমিরমারী যাব না, যে খাল দিয়ে ঢুকিসি চলো ওখানে যাই। ওখানে হেতাল পাতা আসে। হেতালি গাছের গোড়া খাল থিকে প্রায় ৩০০ ফুট, যেখানে আমরা নৌকা রাখিসি সেখান থেকে। ওই মন্তব্য কইরে নৌকায় আসলাম। দুইজন দুই মাথায় বসি আসে, আমি মাঝায়। নৌকা খালে এমনি ভাসতেছে। খালের মুখ সমান জোয়ার উঠিসে তখন।’





