প্রাচীন রীতিনীতি অনুযায়ী, মেয়ের বিয়ের পর মা-বাবার দায়িত্ব অনেকটাই কমে যেত। বলা যায়, তারা দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতেন। আসলে এছাড়া তাদের আর কোনও রাস্তাও ছিল না। কারণ, মেয়ের বিয়ের পর মা-বাবার অধিকারও খর্ব হতো। মেয়েকে মেনে চলতে হতো শ্বশুরবাড়ির রীতিনীতি এবং শাসন। তাই, মেয়ের বাবা-মা চাইলেও মেয়ের সংসারে নাক গলাতে পারতেন না। কিন্তু বর্তমানে অনেক কিছুর বদল ঘটেছে। বেশিরভাগ সংসারে এখন স্বামীর থেকে স্ত্রী-র কথা-ই বেশি চলে। আর এই জন্য, মেয়ের শ্বশুরবাড়ির সমস্ত ছোটোবড়ো ঘটনায়ও এখন হস্তক্ষেপ করেন মেয়ের মা।
এখন মেয়ে তার সংসারের সবকিছু শেয়ার করে নিজের মায়ের সঙ্গে। স্বামী কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে ছোটোখাটো ঝগড়া অথবা মনোমালিন্য হলেও সেই খবর চলে যায় মেয়ের মায়ের কানে। এর ফলে, যে-ঝগড়া বা মনোমালিন্য খানিক পরেই হয়তো মিটে যেত, তা মেয়ের মায়ের ইন্ধনে জটিল রূপ নেয় অনেকসময়।
মেয়েকে বোঝানোর পরিবর্তে যখন মেয়ের মা তার শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে ঝগড়া-বিবাদের বিষয়ে কৈফিয়ত চান, তখন ঝগড়া-মনোমালিন্যের বিষয়টি আর সাধারণ স্তরে থাকে না। শুরু হয় বাগবিতণ্ডা এবং অবশেষে হার-জিতের অবধারিত লড়াই। আর ঠিক এই অবস্থায় সবথেকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় জামাই। সে তখন তার মা-বাবাকেও কিছু বোঝাতে পারে না, আবার স্ত্রী কিংবা শ্বশুর-শাশুড়িকেও কিছু বলার সাহস পায় না। এই সাংসারিক কূটকচালির জেরে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে চিড় ধরা শুরু হয়। আর এসব জটিলতার অন্তরালে থাকে ইগো বা হার না মানার মতো এক ধরনের অহংবোধ।
হার না মানার জেদ
বিয়ের পর প্রথমদিকে যতদিন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে আবেগ থাকে, ততদিন ঝগড়া-মনোমালিন্য শুরু হলেও তা স্থায়িত্ব পায় না। কিন্তু আবেগ যখন কমতে থাকে, তখন শুরু হয় হার না মানার জেদ। কেউ সামান্য ভুল কিছু বলে ফেললে কিংবা ভুল করলে তখন আর মানিয়ে নেওয়া কিংবা ভুল শোধরানোর সময় কেউ কাউকে দেয় না। আসলে এ এক ধরনের অহংবোধ। যার ইগো যত প্রকট, সে তত বেশি জেদি। আর এই ধরনের জেদ ধীরে-ধীরে সংসারে ঘুণ ধরিয়ে দেয়।
হয়তো মেয়ের মা-বাবাও চান না মেয়ের সংসারে অশান্তি হোক। কিন্তু বারবার মেয়ের কাছ থেকে তার শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের বিষয়ে অভিযোগ শুনতে শুনতে, মেয়ের মা-বাবাও অনেক সময় ধৈর্য হারিয়ে এবং আশঙ্কিত হয়ে ভুল পদক্ষেপ নিয়ে ফেলেন। আবার অনেকসময় অদূরদর্শিতার কারণেও ছোটোখাটো সমস্যায় আতঙ্কিত হয়ে অতি সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে নেন মেয়ের মা-বাবা এবং মেয়েটি নিজেও।
কেউ ভুল বললে কিংবা ভুল করলে অবশ্যই তার বিরোধিতা করা যায়। কিন্তু শুধু অহংকারের বশবর্তী হয়ে হঠকারী পদক্ষেপ নেওয়াও এক ধরনের মুখতা এটা— মাথায় রাখেন না অনেকে।
পছন্দ–অপছন্দের বিষয়
কারও স্বভাব, চলন-বলন আপনার পছন্দ না-ও হতে পারে কিন্তু তাই বলে তাকে বোঝানোর পরিবর্তে সবসময় অপমান করাও শোভা পায় না। মনে রাখবেন, আপনি যেমন অন্যের কিছু বিষয় পছন্দ করেন না কিংবা মানতে পারেন না, ঠিক তেমনই আপনার কোনও বিষয় অন্যের কাছেও অপছন্দের হতে পারে। যেমন কেউ হয়তো জোরেজোরে কথা বললে আপনার অস্বস্তি হয়, ঠিক তেমনই আপনি হয়তো খাবার চিবোনোর সময় অস্বাভাবিক আওয়াজ করেন— যা অন্যের কাছে অস্বস্তিকর হতে পারে। অতএব, ক্ষমার মনোভাব রাখা জরুরি সংসারে সুখশান্তি বজায় রাখার জন্য।