এক ছাদের নীচে একসঙ্গে বসবাস করলেও, প্রত্যেকে নিজের স্বত্তা নিয়ে বাঁচেন। তাই, প্রথমে সবাইকে মানিয়ে নিয়ে চলার মন্ত্র শিখতে হবে। সম্মান পেতে গেলে, সম্মান দিতেও হবে অন্যকে। আপনার অধিকারের বিষয়ে সচেতনও থাকতে হবে। কোথাও বেশি অধিকার ফলানোও যেমন ক্ষতিকারক, ঠিক তেমনই আপনজন আপনাকে বিশ্বাস করে নানারকম স্বাধীনতা দিয়েছেন মানেই আপনি স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠবেন— এটাও ঠিক নয়।

স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করুন

মনে রাখবেন, স্বাধীনতারও সীমা-পরিসীমা আছে। স্বাধীনতা লাগামছাড়া হলেই তা স্বেচ্ছাচারিতার রূপ নেয়। আর স্বেচ্ছাচারিতার জন্ম হয় এক ধরনের অহংবোধ থেকে এবং এই ধরনের অহংবোধের জন্ম নেয় প্রকৃত শিক্ষার অভাব এবং অদূরদর্শিতার কারণে।

প্রথমে শুভাকাঙ্ক্ষীর বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে শিখুন। যেমন, আপনি কোথায় যাচ্ছেন তা যেমন বাড়ির কাউকে জানিয়ে যাওয়া উচিত, ঠিক তেমনই কোথাও গিয়ে ফিরতে দেরি হলে ইনফর্ম করে দিন স্বামী কিংবা শ্বশুর-শাশুড়িকে। এতে আপনার প্রতি তাদের ভালোবাসা আরও বেড়ে যাবে এবং আপনি কোথাও গিয়ে বিপদে পড়লে আপনজনের সাহায্য পাবেন দ্রুত। কিন্তু যদি অহংকারের বশে আপনি ‘ডোন্ট কেয়ার’ মনোভাব নিয়ে চলেন, তাহলে সম্পর্কে ভালোবাসার বন্ধন আলগা হবে, তৈরি হবে দূরত্ব এবং সংসারে ঘুণপোকা বাসা বাঁধবে।

জীবনে সাধ অনেক থাকতে পারে কিন্তু সেইমতো সাধ্য থাকতে হবে। তা যদি না থাকে, তাহলে আপশোশ না করে হাসিমুখে তা মেনে নিতে হবে। আবার আপনার যদি প্রচুর অর্থ-সম্পদ থাকে, তাহলে সেসবের অহংকারে অন্যকে ছোটো করা কিংবা অপমানজনক ইঙ্গিত করাও উচিত নয়। মনে রাখবেন, চিরদিন একই অবস্থা থাকে না সবার। আজ আপনার ভালো অবস্থা আছে, কাল না-ও থাকতে পারে। আবার অন্যের আজ খারাপ অবস্থা আছে, কাল সে আপনার থেকেও বিত্তবান হতে পারে। অতএব, অর্থ-সম্পত্তির অহংকার বর্জন করুন। মানুষের সঙ্গে সবকিছু তছনছ হয়ে যেতে পারে। মুহূর্তের ভুল কিংবা আচমকা কোনও বড়ো দুর্ঘটনা অথবা বড়ো কোনও অসুখে মানুষ অনেকসময় সর্বস্ব হারিয়ে ফেলে। তাই, ভেবেচিন্তে পা ফেলুন।

তুলনামূলক বিচার নয়

এমনকিছু বিষয় আছে, যে-সব ক্ষেত্রে তুলনামূলক বিচার করা ঠিক নয়। যেমন, শ্বশুরবাড়ির অবস্থা যদি আপনার বাপেরবাড়ির থেকে খারাপ হয়, তাহলে কথায়কথায় সেই প্রসঙ্গ তুলে স্বামী কিংবা শ্বশুরবাড়ির লোকেদের অপমান করবেন না। আবার, অন্যের যা আছে আপনাদের তা নেই বলে হীমন্যতায় ভোগাও উচিত নয়। কারণ আপনি এই বিষয়ে আফশোশ করলে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবেন আপনার স্বামী। তিনিও তা অ্যাচিভ করতে চাইবেন আপনাকে খুশি করার জন্য এবং এই অ্যাচিভ করতে গিয়ে তিনি হয়তো এমন কিছু ভুল করে বসবেন কিংবা অনৈতিকতার আশ্রয় নেবেন, যা বিপদ ডেকে আনতে পারে। অতএব, ‘সাকসেস অ্যাট এনি কস্ট’ এই নীতি বর্জন করুন। আপনার যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করুন।

গঠনমূলক চিন্তাভাবনা জরুরি

অহংকার আমাদের গঠনমূলক চিন্তাভাবনার মানসিকতা নষ্ট করে দেয়। তাই, যারা বেশি অহংকারী, তারা কন্সট্রাকটিভ হতে পারেন না। আর কন্সট্রাকটিভ হতে না পারলে, জীবনে সুখশান্তি অধরাই থেকে যাবে। আপনার সবকিছু অনেক আছে। তাই আপনি বিশ্বসেরা আর যার কম আছে সে নরাধম— এমন ভাবনা আসলে আপনার মূর্খতারই নামান্তর। এই ধরনের অহংকার আপনাকে একসময় অন্যদের থেকে আলাদা করে দেবে, আপনি ধীরে-ধীরে ভালোবাসা বর্জিত একা এক মানুষে পরিণত হবেন। আর একাকিত্ব মানেই অবসাদ এবং অবসাদ মানেই সবকিছু থেকেও কিছুই নেই। এক্ষেত্রে অহংবোধ মন থেকে ঝেড়ে ফেলে, ভালোবাসা দিয়ে আপন করে নিতে হবে আত্মীয়স্বজনকে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...