বিয়ে মানেই কেনাকাটা থাকবেই। বর-কনের নিজস্ব কেনাকাটা ছাড়াও দুটো পরিবারের মধ্যে আদানপ্রদানের প্রথা প্রচলিত রয়েছে ভারতবর্ষের সর্বত্র। কলকাতায় থাকেন আশিসবাবু পরিবার নিয়ে। সেই আশিসবাবুর একমাত্র ছেলের বিয়ে। ধুমধাম করে বিয়ে দেবেন মনস্থির করেছেন। বউমা নয়, এতদিন বাড়িতে মেয়ের বড়ো অভাব ছিল তাই মেয়ে নিয়ে আসছেন পরের বাড়ি থেকে। পরের বাড়ি-ই বা বলা যায় কী করে। Marriage স্থির হওয়ার পর দুই বাড়িতে আত্মীয়তা বেড়েছে, যাতায়াতও বেড়েছে। উপহার দেওয়া-নেওয়াও চলছে।
কিন্তু বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে। সুতরাং বিয়ের কেনাকাটা এবার সেরে ফেলতে হবে। বউমার জন্যে স্ত্রী সুরমা বহুদিন ধরে ধীরে ধীরে কেনাকাটা করে আলমারি ভরিয়ে তুলেছেন। কিন্তু শুধু বউমা নয়, বউমার বাড়ির সব আত্মীয়স্বজনকেই গুছিয়ে দেওয়ার বাসনা আশিসবাবুর। ছেলের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়ি তত্ত্ব যাবে। তাতে কনের জিনিস ছাড়াও বাড়ির সকলের জন্যে কিছু না কিছু সাজিয়ে দিতেই হবে।
ছেলের Marriage হোক কি মেয়ের, তত্ত্ব সাজানোটা বিয়ের একটা রেওয়াজ। বর-কনের দরকারি জিনিসপত্র ছাড়াও আরও নানা উপহারসামগ্রী দিয়ে বিয়ের তত্ত্ব সাজিয়ে তোলা হয়। তাতে বাড়ির বড়ো থেকে ছোটো সকলের জন্যেই থাকে উপহারের সম্ভার। বিয়ের তত্ত্বে সাধারণত কী কী জিনিস থাকে বা কী ধরনের কেনাকাটা করা যায়, তার একটা ধারণা করে নেওয়া যাক –
লেডিজ ফার্স্ট : মহিলাদের জিনিস দিয়েই শুরু করা যাক। শাড়ি বা যে-কোনও ধরনের পোশাক তত্ত্বে দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও প্রসাধনসামগ্রী মেয়েদের বড়ো পছন্দের। সুতরাং নানা রকমের নামি কোম্পানির কসমেটিকস, ক্রিম, লোশন, শ্যাম্পু, বাথ জেল উপহার হিসেবে পেতে ভালোই লাগবে বাড়ির মেয়েদের। লিমিটেড বাজেট হলেও নামি কোম্পানি ছাড়া বিউটি প্রোডাক্ট একেবারেই কেনা উচিত নয়। নিম্নমানের স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট শুধুমাত্র ত্বকেরই ক্ষতি করবে না, দুটো পরিবারের মধ্যে সম্পর্কেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
কেউ চাইলে, পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করে গয়নাও তত্ত্বে পাঠাবার আইডিয়া কার্যকরী করতে পারবেন। বাজেট সায় দিলে সোনার গয়নার বিকল্প নেই। অন্যথায় কসটিউম গয়নাও দেওয়া যায়। বাজার এখন ভরে গেছে কসটিউম জুয়েলারিতে।
বিয়ের সময়টা যদি হয় শীতকাল তাহলে স্টোল, শাল, সোয়েটার অপশন হিসেবে তত্ত্বে ঢোকানো যাবে।
পুরুষদের জন্যে দেওয়া যেতে পারে শার্ট-প্যান্ট অথবা তৈরি করে নেওয়ার জন্যে মেটেরিয়াল, ব্লেজার, স্যুট অথবা স্যুটের কাপড়, ধুতি-পাঞ্জাবি, শেভিং সেট ইত্যাদি। আর পুরুষ-নারী উভয়ের জন্যই দেওয়া যেতে পারে পোশাকের সঙ্গে সুন্দর একটি পারফিউম।
তত্ত্বে মিষ্টি দেওয়ার প্রথা চলে আসছে শুরু থেকেই। তাই মিষ্টি রেখেই, ছোটোদেরও মন রাখতে রাখুন চকোলেট, ড্রাই ফ্রুটস। মিষ্টির স্বাদ তো সারা জীবনের জন্য কিন্তু তাই বলে টক-ঝাল থাকবে না! চাই চানাচুর, নিমকি এবং বিভিন্ন ধরনের স্ন্যাক্স, যেগুলি সহজে নষ্ট হবে না।
বেয়াই বাড়ির তত্ত্ব সাজাবার সময় যদি জেনে নেওয়া যায় বাড়ির কারও ডায়াবেটিস আছে কিনা তাহলে আলাদা করে সেই পেশেন্টদের জন্যে একটা ট্রে সাজিয়েই ফেলা যায়। শুধু কিনে ফেলতে হবে ডায়াবেটিক সন্দেশ, চকোলেট, সুগার ফ্রি কুকিজ আর নোনতা তো আছেই। স্বাস্থ্যের বিশেষ খেয়াল রেখে অর্গ্যানিক ফুড হ্যাম্পারও পাঠানো চলতে পারে।
শরীরকে রিল্যাক্স রাখবার বহু প্রোডাক্ট এখন মার্কেটে সহজেই বাছা যায়। বড়ো বড়ো সব কোম্পানিই এখন নানা রকমের বড়ি রিল্যাক্সিং প্রোডাক্ট বানাবার কাজ হাতে নিয়েছে। তত্ত্বের উপহার হিসেবে বাছতেই পারেন শাওয়ার জেল, বডি বাটার-এর শিশি, সুগন্ধি সাবান অথবা অ্যারোমেটিক বডি অয়েল।
গিফ্ট ভাউচার : দোকানে কেনাকাটা করতে বেরিয়ে যদি কারও পছন্দ-অপচ্ছন্দ নিয়ে মনে দ্বন্দ্ব থাকে তাহলে তার নাম করে তত্ত্বে সাজিয়ে দেওয়া যায় কোনও দোকানের গিফট ভাউচার। যার নামে ভাউচার সে নিজে দোকানে গিয়ে ভাউচারটি দেখিয়ে পছন্দের জিনিস বাড়ি নিয়ে আসতে পারবে।
ঘর সাজাবার জিনিস – বাড়ি সাজিয়ে তোলার জন্যে ওয়াল হ্যাংগিং, পেন্টিং, কাঠের স্কাল্পচার, ল্যাম্প শেড ইত্যাদি অনেক কিছুই Marriage Gifts হিসেবে বিয়ের তত্ত্বে পাঠানো যেতে পারে।
ইলেকট্রনিক গ্যাজেটস : বাড়ির ইয়ং জেনারেশনের মন জিতে নিতে ইলেকট্রনিক গ্যাজেটস-এর কথা মাথায় রাখতে পারেন। ভাবুন দেখি একবার, ওদের মুখ-চোখের কী অবস্থা হবে যখন তত্ত্বের ট্রে-তে নিজেদের নামে মোবাইল, আইপড, ফাইভ জি ট্যাব, ডিজিটাল ফোটো ফ্রেম, এমপিথ্রি প্লেয়ার অথবা ডিজিটাল হাতঘড়ি দেখতে পাবে!
তাহলে আর দেরি কেন। নিজের বাজেট অনুযায়ী ধীরেসুস্থে সারুন Marriage-এর জন্য তত্ত্বের কেনাকাটার ফর্দ এবং সহজেই জিতে নিন সকলের মন।
তত্ত্ব সাজানো – বিয়ের জন্য তত্ত্ব সাজানোটাও একটা আর্ট। সুন্দর করে সেলোফেনে মুড়ে দিন ট্রে। তার আগে শাড়ি বা তোয়ালে দিয়ে বানিয়ে ফেলুন, হাঁস, প্রজাপতি, টেডি বেয়ার। ছোট্ট করে ছড়া লিখে দিন, যার উপহার তার উদ্দেশ্যে।