২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এক ব্যক্তি বিয়ে করলেও স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বনিবনা হয়নি। এক বছরের মধ্যে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যে তাঁর মনে হয়, এই সম্পর্কের মধ্যে থাকলে তিনি মারা যাবেন। তাই তিনি তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং আদালতে গিয়ে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন।

এই ঘটনায় স্ত্রী ৪৯৮-এ ধারায় মামলা দায়ের করেন। স্বামীর জেল হয়। কিন্তু সত্যটা আসলে কী তা জানার চেষ্টা করেননি কেউ। মিথ্যা মামলা সাজানো হয় স্বামীর বিরুদ্ধে। কোনওভাবে মহিলার স্বামী আদালত থেকে জামিন পান, তখন তিনি নিজের মামলা নিজেই লড়তে সিদ্ধান্ত নেন। ফিজিওথেরাপিস্টের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরে, তিনি আইন অধ্যয়ন করেন যাতে তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেন। তাঁর কঠোর পরিশ্রম ফল দেয় এবং তিনি বেকসুর খালাস পান। স্ত্রীর কাছ থেকেও ডিভোর্স পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু স্ত্রীর কাছ থেকে মুক্ত থাকার জন্য তাঁকে চড়া মূল্য চোকাতে হয়েছিল। সময় ও অর্থেরও অপচয় হয়।

ধৈর্যের বাঁধ যখন ভেঙে যায়

এরকম আরেকটি ঘটনায় বিবাহবিচ্ছেদের পরেও স্ত্রী তার স্বামীর পিছু ছাড়তে অস্বীকার করেন। তিনি তার স্বামীর অফিসে গিয়ে হট্টগোল শুরু করতেন, তাঁকে গালিগালাজ করতেন। ওই ব্যক্তি চাকরি ছেড়ে পালিয়ে গেলে স্ত্রী হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে তাঁকে হয়রান করতে শুরু করেন। লোক দিয়ে স্বামীকে মারধর করান, অপহরণ করে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসে তালাবদ্ধ করে রাখেন। শুধু তাই নয়, পুলিশকে ফোন করে বলেন যে স্বামী তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন।  ধর্ষণ মামলায় ওই ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানো হয়। দীর্ঘ সুইসাইড নোট লিখে ওই ব্যক্তি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

কী দোষ ছিল ওই ব্যক্তির? একজন পুরুষ তাই? আদালতের কি তাঁর কথা শোনা উচিত ছিল না এবং তাদের দুজনের কথা শোনা কি সমাজের কর্তব্য ছিল না? এখানেও কি সেই Gender Discrimination?

মিরাটের এক মহিলা তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে একটি সরকারি হাসপাতাল থেকে জাল মেডিকেল সার্টিফিকেট তৈরি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মহিলার কথায় পুলিশ তার স্বামীকে গ্রেফতার করে। কিন্তু পরে এই মামলার তদন্তে জানা যায়, ওই নারীর সঙ্গে অন্য এক পুরুষের অবৈধ সম্পর্ক ছিল এবং স্বামী তাতে আপত্তি জানান। স্বামীকে পথ থেকে সরানোর জন্য ওই নারী এই পরিকল্পনা করে স্বামীকে মিথ্যা মামলায় জড়ায় এবং তাকে জেলে পাঠায়।

পুরুষরাও পারিবারিক হিংসার শিকার হন

গার্হস্থ্য হিংসা ও শোষণের কথা বাড়ির চার দেয়াল থেকে খুব কমই বাইরে বের হতে পারে এবং তা এলেও সাধারণত সকলেই ধরে নেন ভুক্তভোগী নিশ্চয়ই একজন নারী। কিন্তু অনেক সময় পুরুষরাও চুপ করে থেকে এসব কষ্ট ভোগ করেন। লজ্জা, সমাজের ভয়ের কারণে তারা তাদের বেদনা প্রকাশ করতে পারেন না এবং ভেতরে ভেতরে শ্বাসরুদ্ধ অবস্থা হয় তাঁদের।

হলিউড সুপারস্টার জনি ডেপের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। স্ত্রীর হাতে গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হওয়া সত্ত্বেও জনসাধারণ ও সমাজ তাঁর সম্পর্কে কী বলবে সে বিষয়ে ভেবে তিনি নীরব থাকাটাই শ্রেয় মনে করেন।

জনি ডেপের প্রাক্তন স্ত্রী অ্যাম্বার ডেপ স্বামীর বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ এনে বলেন, ডেপ মদ্যপ অবস্থায় তাকে যৌন নিপীড়ন করেন এবং হত্যার হুমকি দেন। অ্যাম্বারের পক্ষ থেকে তাঁর ডাক্তার আরও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে মদ্যপ অবস্থায় জনি জোর করে তার সাথে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেছিল এবং তাকে আক্রমণও করেছিল। ডাক্তার সাক্ষ্যে আরও বলেছিলেন যে একবার জনি এতটাই হিংস্র হয়ে পড়েছিল যে, সে অ্যাম্বারের শরীরের গোপনাংশে কোকেন খোঁজার চেষ্টা শুরু করেছিল। কিন্তু সব সাক্ষী, প্রমাণ, ভিডিও, অডিও এবং শত শত মেসেজ পরীক্ষা করে দেখা যায়, জন ডেপের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগই মিথ্যা।

করোনাকালে সারা দেশে লকডাউনের কারণে মানুষ ঘরে বন্দি হয়ে পড়েছিল। সেই সময়ে, গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু সে সময় শুধু নারীরাই পারিবারিক হিংসার শিকার হননি, অনেক পুরুষও পারিবারিক হিংসার শিকার হয়েছিলেন। এটা অন্য বিষয় যে ভারতে এখনও পর্যন্ত পারিবারিক হিংসার শিকার পুরুষদের সংখ্যা খুঁজে বের করার জন্য কোনও সরকারি গবেষণা বা জরিপ হয়নি। তবে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অবশ্যই এই দিশায় কাজ করছে।

বিশ্বব্যাপী, নৃশংসতার ঘটনা কেবল নারী ও শিশুদের সাথে নয়, Gender Discrimination-এর মতো ঘটনা পুরুষদের সাথেও ঘটছে, রিপোর্ট বলছে। শুধু ভারতেই বিয়ের জন্য যৌতুক, গার্হস্থ্য হিংসা, ধর্ষণের মতো মিথ্যা মামলার কারণে প্রতি বছর ৬৫ হাজারেরও বেশি বিবাহিত পুরুষ আত্মহত্যা করেন।

ধর্ষণ, যৌতুক প্রভৃতি আইন নারীর নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয়, কিন্তু কিছু মহিলা এই আইনগুলিকে অস্ত্র বানিয়ে অপব্যবহারও করছেন। এই ধরনের মামলায় আটকে পড়া বা জড়িত পুরুষদের সম্মান, সময় এবং অর্থের ক্ষতির ক্ষতিপূরণ কে দেবে? বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় আইনের অপব্যবহার বন্ধ করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে, অন্যথায় নিরপরাধ মানুষের জীবন মিথ্যা মামলায় বিষময় হয়ে উঠবে সন্দেহ নেই।

হাসির পাত্র

সেভ ইন্ডিয়া ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন এবং মাই নেশন নামের একটি এনজিও-র এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতে ৯০ শতাংশেরও বেশি স্বামী, তিন বছরের সম্পর্কের মধ্যে অন্তত একবার পারিবারিক হিংসার শিকার হয়েছেন। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, পুরুষরা যখন পুলিশ বা অন্য কোনও প্ল্যাটফর্মে অভিযোগ জানাতে চেয়েছেন, তখন লোকেরা তাদের কথা বিশ্বাস করেনি, বরং তারা হাসির পাত্র হয়ে উঠেছেন।

তবে একটি গবেষণা বলছে, গুরুতর হিংসার ঘটনা মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে কিছুটা কম দেখা যায়।

পুরুষদের মিথ্যা ধর্ষণের মামলায় জড়ানো হচ্ছে

দিল্লির আত্মা রাম সনাতন ধর্ম কলেজের আর্টসের ছাত্রী আয়ুশি ভাটিয়া গত এক বছরে বিভিন্ন থানায় সাতটি ধর্ষণের মামলা দায়ের করে ছিল। কিন্তু এগুলো সবই ছিল মিথ্যা ধর্ষণের মামলা। পুলিশের সামনে আয়ুশি স্বীকার করে যে সে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ এনে ছেলেদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করত।

জিম, ইন্সটা, অনলাইন ডেটিং অ্যাপে ২০ থেকে ২২ বছর বয়সি ছেলেদের সঙ্গে আয়ুশি কোনও অছিলায় বন্ধুত্ব করত এবং তারপর তাদের সঙ্গে দেখা করত। ছেলেটির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক ও কারও সঙ্গে প্রেমের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনত সে। ধর্ষণ শুধু একটি জঘন্য অপরাধই নয়, এর চেয়েও জঘন্য হল যখন একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে ধর্ষক হিসেবে চিহ্নিত করা হয় কারণ এখানে একজন নিরপরাধ ব্যক্তির সুনাম বিপন্ন হয় এবং তার জীবনও গ্লানিময় হয়ে ওঠে।

কয়েক বছর আগে নয়াদিল্লির কারাওয়াল নগরের ইব্রাহিম খানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং এই অভিযোগ অন্য কেউ করেননি, তাঁর নিজের মেয়ে করেছিলেন। গুরুতর অভিযোগ ছিল যে তিনি তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছিলেন, যার কারণে সে গর্ভবতী হয়েছিল। এই অভিযোগের পর ইব্রাহিমকে সামাজিকভাবে বয়কট করা হয় এবং তাকে কারাগারেও পাঠানো হয়। কারাগারে বন্দিদের হাতে তাকে মারও খেতে হয়েছিল।

৭ বছর জেলে থাকার পর প্রমাণিত হয় যে, তার মেয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল কারণ সে মেয়ের দেহ ব্যাবসায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। মেয়ের পেটের শিশুটিও তার ছিল না। আদালত ইব্রাহিমকে নির্দোষ প্রমাণ করার পরে তাকে বেকসুর খালাস দেয়, তবে ততক্ষণে তার পুরো জগৎটাই ধ্বংস হয়ে গেছে।

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...