মধ্যপ্রদেশে ধর্ষণের মিথ্যা মামলা দায়ের
মধ্যপ্রদেশে সরকারি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি ধর্ষণের মামলা দায়ের করা হয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে, বেশিরভাগ মামলাই মিথ্যা এবং সরকারি ক্ষতিপূরণের জন্য ছিল। প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রদেশে এসসিএসটি নৃশংসতা আইনের আওতায় ভুক্তভোগী মহিলাকে ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয় রাজ্য সরকার। মামলায় এফআইআর দায়ের করার সময় ১ লক্ষ টাকা এবং আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়ার সময় ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়, অর্থাৎ সাজা হওয়ার আগে ৩ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। অভিযুক্তের শাস্তি হলে আরও ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। শাস্তি না পেলেও আগে দেওয়া ক্ষতিপূরণ ফেরত চাওয়া হয় না। এই বিধানটি শুধুমাত্র এসসি/এসটি বিভাগের জন্য, অন্যদের জন্য নয়।
কেন মিথ্যা ধর্ষণ মামলার গুজব ছড়ানো হয়েছিল?
সাগরের এক মহিলা তার মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হলে এবং আদালতে মামলার বিচার শুরু হলে দলিত মহিলা ট্রায়াল কোর্টে স্বীকার করে যে, সে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তার নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণের মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিল। এখানে ক্ষতিপূরণের লোভ এতটাই বেড়ে গেছে যে মিথ্যা অভিযোগ করে সরকারি ক্ষতিপূরণ আদায় করা হচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশের বেরেলি শহরের নেহা গুপ্তা এবং সাফিয়া নামের দুজন মেয়ে টাকার জন্য পুরুষদের ফাঁদে ফেলার চক্র চালাচ্ছিল। অনেক ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মিথ্যা মামলা করে টাকা আদায় করে তারা ধরা পড়ে।
আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞা হল যখন কোনও মহিলার সাথে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সম্মতি ছাড়াই, জোরজবরদস্তি করা, ভুল উপস্থাপনা বা জালিয়াতির মাধ্যমে বা এমন সময়ে এই ধরনের আচরণ(জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন) করা হয় যখন মেয়েটি মদ্যপ অবস্থায় বা বেহুঁশ অবস্থায় থাকে অথবা মেয়েটি অস্বাস্থ্যকর মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে থাকে। এছাড়াও যদি তার বয়স ১৮ বছরের কম হয়, তাহলে পুরো ব্যাপারটা ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু কিছু নারী পুরুষদের বদনাম করার জন্য, তাদের জন্য প্রণীত আইনের সুযোগ নিয়ে থাকে।
ক্ষতিগ্রস্থদের উপর খারাপ প্রভাব
উত্তর ইংল্যান্ডের গবেষক এলিজাবেথ বেটস-এর মতামত অনুযায়ী, সমাজ পুরুষদের অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করতে বেশি সময় নেয় না, কিন্তু পুরুষরাও যে শিকার হতে পারে সেটা ভেবে নিতে তাদের সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, টিভি-তে কমেডি শো-তে অনেক সময় মানুষকে হাসানোর জন্য পুরুষদের নির্যাতন করা দেখানো হয়। অতএব, আমাদের সমাজের কাছে এটাই হাস্যকর, যখন কোনও পুরুষকে কোনও মহিলা মারধর করে। এই ধরনের ঘটনা প্রায়শই ভুক্তভোগীদের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।
অনেক সময়, পুরুষরা লজ্জা এবং উপহাসের ভয়ে এগিয়ে আসে না, মেয়েদের হাতে অত্যাচার সহ্য করে নেয় এবং সাহায্য চাইতে দ্বিধা বোধ করে। বেটস-এর গবেষণায় দেখা গেছে যে, সমাজে এই ধরনের ব্যবহারকে যেভাবে দেখা হয় সেটা পারিবারিক হিংসার শিকার পুরুষদের উপর প্রচণ্ড প্রভাব ফেলে। এই ধরনের ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেক সময় পারিবারিক বিদ্বেষ দীর্ঘমেয়াদি মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে।
আমাদের দেশে প্রতি ১৫ মিনিটে একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, প্রতি ৫ মিনিটে একটি গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনা ঘটে, প্রতি ৬০ মিনিটে বিয়ের যৌতুক বা পণের জন্য একজন নববধূকে হত্যা করা হয় এবং প্রতি বছর হাজার হাজার মেয়ের ভ্রূণ জন্মের আগেই মায়ের গর্ভে মেরে ফেলা হয়। এরকম সামাজিক পরিবেশেই দীপিকা নারায়ণ ভরদ্বাজ, যিনি একসময় ইনফোসিসে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন এবং পরে চাকরি ছেড়ে সাংবাদিকতায় যোগ দিয়েছিলেন, ডকুমেন্টারি ফিলমও তৈরি করেন। দীপিকার প্রশ্ন শুধু কি নারীরাই, পুরুষরাও কি বৈষম্যের শিকার হয় না? তারা কি গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হতে পারে না?
দীপিকা ২০১২ সালে এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং দেখতে পান যে বেশিরভাগ যৌতুক নিয়ে হয়রানির ঘটনা মিথ্যা। মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পড়ার কারণে মানহানির ভয়ে অনেক ছেলের বাবা-মা আত্মহত্যা করেছেন। দীপিকাই প্রথম মহিলা যিনি দাবি করেছেন যে ভারতে পুরুষরাই প্রকৃত হয়রানির মুখোমুখি হচ্ছেন। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক এমন নয়। নারীরাও গার্হস্থ্য হিংসার কারণে যথেষ্ট হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
দীপিকা নারায়ণের মতে, সমাজে পরিবর্তন আনতে হলে পুরুষের দুর্ব্যবহারের উদাহরণ দিয়ে পুরো পুরুষজাতিকে অপরাধমূলক মানসিকতার অধিকারী দেখিয়ে দোষারোপ না করে, পুরুষদের সহযোগিতা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, যেসব নারী এ ধরনের বেশিরভাগ সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তারা নিজেদেরকে মহান আখ্যায়িত করে, অন্যের কাজে অবাধে কৃতিত্ব অর্জন করছেন, আইন, সংবিধান ও সরকারকে নিজেদের সুবিধায় কাজে লাগিয়ে মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন, যাতে নিজেরা কষ্ট না করেই বিনামূল্যে পেটের জোগান ও প্রশংসা পেতে থাকেন। তাদের জেদের কারণে বহু সংসার বরবাদ হয়ে যাচ্ছে।
পুরুষরা শোষক নয়
এটা সত্যি যে বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যা আজও প্রতিটি স্তরে সংগ্রাম করে যাচ্ছে এবং পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিজেদের প্রাপ্য স্থান পাচ্ছে না। কিন্তু এটাও সমান সত্য যে, সমতার এই সংগ্রামের মাঝে এমন একটি স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে যেখানে পুরুষকে সর্বদা শোষক(Gender Discrimination) এবং নারীদের শোষিত হিসাবে দেখানো হচ্ছে। কিন্তু সত্য হল, ঈর্ষা, বিদ্বেষ, ঘৃণা, ভালোবাসার মতো মানুষের আবেগ যদি নারী-পুরুষের মধ্যে সমানভাবে প্রসারিত হয়, তাহলে শুধু পুরুষরাই কীভাবে শোষক হতে পারে?
এটা বললেও ভুল হবে না যে, আমাদের বিচার ব্যবস্থা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মানুষের কষ্টকে উপেক্ষা করে। গার্হস্থ্য হিংসা, পনপ্রথা, যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, নারীদের সুরক্ষা এবং তাদের মর্যাদাপূর্ণ জীবন দেওয়ার জন্য। লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠার জন্যও এগুলো প্রয়োজন। কিন্তু যখন একজনের প্রতি ন্যায়বিচার করা হবে এবং অন্যের প্রতি অবিচার করা হবে, তখন সমাজ নিজেই ভেঙে পড়বে।
কিছু মহিলা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই আইনগুলি ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। ২০০৫ সালে সুপ্রিম কোর্ট এটিকে আইনি সন্ত্রাসবাদ বলে অভিহিত করেছিল, যখন আইন কমিশন তার ১৫৪ তম রিপোর্টে স্পষ্টভাবে স্বীকার করেছিল যে, আইপিসির ৪৯৮-এর ধারার অপব্যবহার করা হচ্ছে।