শুধু অসীম জলরাশি আর বিশালাকার ঢেউ দেখাই নয়, আরও নতুন অনুভূতি এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের ইচ্ছে থাকলে ঘুরে আসুন এই পাঁচ সাগরবেলায়। শান্ত-স্নিগ্ধ, বর্ণময় সাগরবেলা। দেখুন সূর্যোদয়। মুগ্ধ হবেন। সাগরপাড়ে সিল্ক শাড়ির মেলা দেখে, ফরাসি খাবারের স্বাদও নিতে পারেন। কাজু, কলা, নারকেল, কাঁঠাল প্রভৃতি গাছের ডালপালা আপনাকে স্বাগত জানাবে। সমুদ্রসৈকতের অনতিদূরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সুন্দর বাড়িঘর, বাগান, মন্দির আর টাইলস ও সিরামিক ফ্যাক্টরি দেখার অভিজ্ঞতাও অমলিন হয়ে থাকবে। বালিয়াড়িতে জেলেদের নোঙর ফেলে নৌকো বাঁধা কিংবা মাছ ধরার শুকনো জাল গুটিয়ে বাড়ি ফেরার দৃশ্য উপভোগ করতে-করতে গোধূলির আলো গায়ে মেখে নিরালা সৈকতে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগবেই।

রুশিকুল্যা

ওড়িশার তিনটি সি-বিচের মধ্যে রুশিকুল্যা অন্যতম। এই সি-বিচের সৌন্দর্য এবং বৈচিত্র্যের কথা আগেই শুনেছিলাম অনেকের কাছ থেকে। তাই দলবেঁধে বেরিয়ে পড়েছিলাম রুশিকুল্যার উদ্দেশে।

ভুবনেশ্বর রেলওয়ে স্টেশন থেকে চারচাকার যান ভাড়া করে বেরিয়ে পড়েছিলাম গন্তব্যে। গঞ্জাম জেলায় অবস্থিত রুশিকুল্যা বিচে পৌঁছোতে সময় লেগেছিল মাত্র তিন ঘণ্টা। তখন বিকেল গড়িয়েছে। সূর্যাস্তের সময়। দেখলাম রুশিকুল্যায় সূর্যাস্ত। অপূর্ব! লালচে নরম বালি আর জলের ওপর সূর্যের রক্তিম আভা এক মোহময় পরিবেশ তৈরি করেছিল। সেই সৌন্দর্য শুষে নিয়ে আমরা হোটেলে ফিরেছিলাম।

নৈশভোজের পর সামান্য অপেক্ষা। তারপর ঠিক রাত ১২টায় আবার এসে পৌঁছোলাম রুশিকুল্যা বিচে। জ্যোৎস্না রাত। মায়াবি আলোয় ঘেরা নির্জন সাগরবেলা। মার্চ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে মধ্যরাতে সমুদ্রসৈকতে পৌঁছোনোর কারণ ছিল এই যে, এই সময় কচ্ছপের ডিমপাড়ার দৃশ্য উপভোগ করা যায়। পৃথিবীর বিরলতম অলিভ রিড়লে কচ্ছপে ভরা থাকে এই সমুদ্রসৈকত। নিরালা এই সমুদ্রসৈকতে পুরুষ কচ্ছপরা ঘুরে বেড়ায় এদিক-ওদিক, আর মেয়ে কচ্ছপরা বালির গর্তে ডিম পাড়ে। নিস্তব্ধতা না ভেঙে আমরা সেই কচ্ছপদের ডিমপাড়ার দৃশ্য উপভোগ করেছিলাম এবং ক্যামেরার ফ্ল্যাশলাইট অফ করে সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতেও পেরেছিলাম।

কীভাবে যাবেন : দমদম থেকে বিমানে কিংবা হাওড়া থেকে ট্রেনে ভুবনেশ্বর পৌঁছোন। ওখান থেকে গাড়িতে মাত্র ১৪০ কিলোমিটার পেরোলেই রুশিকুল্যা বিচ। তবে ট্রেনে ভুবনেশ্বর না নেমে, গঞ্জাম স্টেশনেও নামতে পারেন কিন্তু ওখান থেকে গাড়ি পেতে একটু অসুবিধা হয়।

কোথায় থাকবেন : রুশিকুল্যায় ভালোভাবে থাকার আদর্শ জায়গা ফরেস্ট গেস্টহাউস। এসি, নন এসি রুম ছাড়াও রয়েছে তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা।

সূর্যলংকা বিচ

শালিমার স্টেশন থেকে বিকেল চারটে পাঁচের সেকেন্দ্রাবাদ এসি এক্সপ্রেস ধরে রওনা দিয়েছিলাম রাজামুন্দ্রির উদ্দেশে। ষোলো ঘণ্টার জার্নি শেষে পৌঁছেছিলাম স্টেশনে। বিশাখাপত্তনম থেকে ট্রেনে মাত্র দু-ঘণ্টার ব্যবধানে এই স্টেশনটির অবস্থান। স্টেশনের বাইরে এসে গাড়ি ভাড়া করে অল্প সময়ের ব্যবধানে আমরা পৌঁছোলাম কোকোনাট কান্ট্রি রিসর্টে। অসংখ্য নারকেল গাছ বেস্টিত ছায়া সুনিবিড় এই রিসর্টে স্নান-খাওয়া সেরে আমরা রওনা দিলাম সূর্যলংকা বিচের দিকে।

বড়ো রাস্তা ছেড়ে গাড়ি চলল প্রত্যন্ত গ্রামের পথ ধরে। নারকেল পাতায় ছাওয়া বাড়ি আর বাড়ির উঠোনে জমা করা শতসহস্র নারকেলের স্তুপকে দুদিকে রেখে, এগিয়ে চলল গাড়ি। ঘণ্টা দুয়েক এই আবহে কাটানোর পর গাড়ি এসে থামল সূর্যলংকা বিচে। সূর্য তখন সমুদ্রের জলের দিকে ঢলে পড়েছে। লালচে নরম বালির উপর হেঁটে গিয়ে আমরা সমুদ্রের জল ছুঁলাম, দূরে দেখা গেল জাহাজের মাস্তুল। বালিয়াড়িতে দেখা গেল জেলেরা নোঙর ফেলে নৌকো বাঁধছে আর মাছ ধরার শুকনো জাল গুটিয়ে বাড়ি ফেরার উদ্যোগ নিচ্ছে। এসব উপভোগ করতে করতেই গোধূলির আলো গায়ে মেখে নিরালা সৈকতে ঘুরে বেড়াতে বেশ ভালো লাগছিল। রাতে সমুদ্রসৈকতের এক অস্থায়ী রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে-খেতেও রাতের সামুদ্রিক পরিবেশে থাকার আনন্দ নিয়েছিলাম। পরেরদিন সকালে হোটেল থেকে আবার সমুদ্রসৈকতে এসে জেলেদের মাছ ধরা দেখে স্নান সেরে ফিরলাম হোটেলে।

কীভাবে যাবেন : শালিমার স্টেশন থেকে প্রতিদিন বিকেল ৪টে ৫-এ ছাড়ে সেকেন্দ্রাবাদ এসি এক্সপ্রেস। ষোলো ঘণ্টার জার্নি। নামুন রাজামুল্লি স্টেশনে। ওখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছোন। হোটেলে।

কোথায় থাকবেন : এপি টুরিজমের কোকোনাট কান্ট্রি রিসর্টে থেকে আনন্দ পাবেন। দারুণ পরিবেশ অসাধারণ আতিথেয়তা।

যোগাযোগ : এপিটিডিসি

আন্দামান

দমদম বিমানবন্দর থেকে সকাল সাড়ে পাঁচটার বিমানে চেপে, সকাল সাড়ে সাতটায় পৌঁছোলাম আন্দামানের গেটওয়ে বীর সাভারকর বিমানবন্দরে। সময়টা ছিল নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ। বিমানবন্দর থেকে প্রথমে পৌঁছোলাম শহরের কেন্দ্রে। পাঁচ কিলোমিটার দুরের মায়াবন্দর থেকে আবার পাড়ি দিতে হল বারো কিলোমিটার পথ। গম্ভব্য— কর্মাটেং সাগরবেলা। আমাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল সাগরপাড়ের সরকারি অতিথিশালায়। প্রথম দিন স্নান, খাওয়া সেরে আমরা নামলাম বিচে। নির্জন মায়াময় বিচ। জানা-অজানা নানারকম গাছগাছালিতে ভরা সাগরপাড়। পাড়ে রয়েছে বার্মিজ বসতি। ওদের জীবনযাত্রা দর্শন বেশ উপভোগ্য। বিচের অস্থায়ী দোকানগুলিতে সামুদ্রিক কোরাল-শাঁখ-ঝিনুকের মেলা দেখার পাশাপাশি, কেনাকাটাও সারলাম আমরা। তবে শুধু সাগরবেলার অপরূপ সৌন্দর্যদর্শন-ই নয়, তিনদিনের টুরে আমরা দেখে নিয়েছিলাম আশপাশের অনেক কিছু। ঘুরে বেড়িয়েছি ফাইবার গ্লাস লাগানো বোটে জলিবয়, রেড স্কিন ও সিঙ্ক দ্বীপে। দ্বীপের অগভীর স্বচ্ছ জলে রংবেরঙের মাছ, প্রবাল, সামুদ্রিক প্রাণী দর্শনে তৃপ্তির স্বাদ নিয়েছি। এছাড়া বটানিক্যাল গার্ডেন, ফুচি চাঙ বৌদ্ধ মঠ, ব্যাম্বু ফ্ল্যাট প্রভৃতি দর্শনের আনন্দও নিয়েছি।

কীভাবে যাবেন : দমদম বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট-এ পৌঁছোন আন্দামানের সাভারকর বিমানবন্দরে। অথবা চারদিনের জাহাজ যাত্রায়ও পৌঁছোনো যায় আন্দামানে। ওখান থেকে গাড়িতে মায়াবন্দর হয়ে পৌঁছে যান কর্মাটেং সাগরবেলায়।

কোথায় থাকবেন : থাকার জন্য ছোটো-বড়ো অনেক হোটেল আছে, তবে কর্মাটেং বিচ সংলগ্ন সরকারি অতিথিশালায় থাকাই ভালো ৷

যোগাযোগ : আন্দামান অ্যান্ড নিকোবর টিডিসি।

(সমাপ্ত)

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...