হেয়ার এক্সপার্ট-রা বলেন গড়ে ৯০ জন মহিলার চুল সংক্রান্ত সমস্যা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় বর্ষাকালে। দিনে ১০০টি করে চুল পড়া নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু বর্ষাকালে এই সংখ্যাটাই যখন প্রায় এর তিনগুন হয়ে দাঁড়ায়— তখন ব্যাপারটা নিশ্চয়ই চিন্তার। এর মূল কারণ হচ্ছে বর্ষাকালের প্রাকৃতিক হিউমিডিটি। এর কারণেই আমাদের স্ক্যাল্প থেকে ঘাম শুকোতে চায় না। এর উপর খুশকি। বর্ষার জলে মিশে থাকা দূষিত ও অ্যাসিডিক পদার্থ চুলের গোড়ায় চেপে বসে। এরই মাশুল দিতে হয় আমাদের।

চুলে চটচটে ঘাম জমে থাকার কারণে, মাথার তালুতে ফাংগাল ইনফেকশন হওয়াও কমন সমস্যা। এই ফাংগাল ইনফেকশন প্রাথমিক ভাবে নিরীহ মনে হলেও, এটা চুলের বড়োসড়ো ড্যামেজ করে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকার ফলে। তাই গোড়াতেই এর নিরসন দরকার।

ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, বর্ষাকালে মাথার ত্বকের তৈলগ্রন্থিগুলি অতি সক্রিয় থাকে। এর ফলে চুলের গোড়ায় “সিবাম’ জমতে থাকে। চুল চটচটে হয়ে যাওয়া, গোড়ায় চুলকানি হওয়া খুব কমন সমস্যা। বর্ষায় খুশকির প্রকোপও বৃদ্ধি পায়।

এই সমস্যা উপশমে তাই চুল ধোওয়ার ১ ঘন্টা আগে চুলে অয়েল মাসাজ অবশ্যই করুন। প্রতি একদিন অন্তর অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শাম্পু ব্যবহার করুন। এতে চুল পরিষ্কারও থাকবে আর ঘাম জমে চটচটেও হবে না। চুলে শ্যাম্পু করার পর চায়ের লিকার আর লেবুর রস দিয়ে হেয়ার রিন্জ করা সুফলদায়ী বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই হার্বাল হেয়ারকেয়ার পদ্ধতি ব্যবহার করে চুল ধুলে, সত্যিই চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

এর জন্য চায়ের লিকার ফুটিয়ে ঠান্ডা করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। শ্যাম্পুর পর প্রথমে চায়ের লিকার দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। পরে পরিষ্কার জলে লেবুর রস মিশিয়ে চুল ধুলে চুল চকচকে হয়ে উঠবে।

বর্ষায় ৩-৪ বার প্রোটিন প্যাক লাগানো যেতে পারে চুলে। অর্থাৎ প্রতি সপ্তাহে ১ বার করে এই পদ্ধতি অবলম্বন করুন। এর জন্য ডিমের সাদা অংশ ও দই একসঙ্গে ফেটিয়ে নিয়ে চুলে লাগান। ১৫ মিনিট রেখে জল দিয়ে ধুয়ে নিন, তারপর শ্যাম্পু করুন।

৬ পদ্ধতিতে চুল সুন্দর

তেল মালিশ: চুলে অয়েল মাসাজ, চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এতে চুল প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করতে পারে। এর ফলে চুল ভেঙে যাওয়া, চুলের রুক্ষভাব দূর হয়। সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার অয়েল মাসাজ করা যায়। তেল মালিশ করার দু’ঘন্টা পর শ্যাম্পু করতে পারেন বা রাতভর চুলে তেল রেখে, পরদিন শ্যাম্পু করে নিন। চুলের গোড়ায় যাতে নোংরা না জমতে পারে, তার জন্য হট অয়েল মাসাজ কিন্তু অব্যর্থ।

চুল বেঁধে রাখার উপকার: বর্ষায় চেষ্টা করুন চুলগুলি বেঁধে রাখতে। এতে চুলের নিজস্ব ময়েশ্চার চট করে হারাবে না। চুল বর্ষায় পুষ্টির অভাবে ভোগে। তাই চুল পড়ার সমস্যাও বৃদ্ধি পায়। এইসময় যদি দুর্বল চুলে কোনও স্টাইলিংয়ের উপকরণ প্রয়োগ করেন, তাহলে চুলের ক্ষতি আরও বেড়ে যেতে পারে। তাই চুলের উপর কোনও অত্যাচার না করে বেঁধে রাখাই শ্রেয়।

কন্ডিশনারএ বাজিমাত: বর্ষায় চুল ফ্রিজি ধরনের হয়ে যায়। এর কারণ বর্ষার হাওয়া চুলের রুক্ষতা বৃদ্ধি করে। চুলে স্প্লিট এন্ডস-এর সমস্যা অর্থাৎ ডগা ফেটে যাওয়ার সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই হেয়ার ফল ও হেয়ার ড্যামেজ রুখতে, যখনই শ্যাম্পু করবেন, তারপর কন্ডিশনার এর প্রয়োগ অবশ্যই করুন।

চুল শুকনো রাখুন: দীর্ঘক্ষণ ভেজা চুলে থাকলে চুল ড্যামেজ হতে পারে। তাই বৃষ্টিতে ভিজলে, বিশেষ ভাবে নজর দিন যাতে চুল ভিজে অবস্থায় না থেকে যায়। বৃষ্টির দূষিত জল চুলের ক্ষতি করে। শুধু তাই নয়, ভেজা চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায়। সঙ্গে স্ক্যাল্প- এ ফাংগাল ইনফেকশন বৃদ্ধি পায়। বৃষ্টিতে ভেজা চুল অবশ্যই সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার জলে ধুয়ে, হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নিন।

বেরোনোর আগে চুল ঢাকুন: বৃষ্টির দিনে বেরোনোর আগে একটা স্কার্ফ-এর সাহায্যে চুলগুলি ঢেকে নিন। সেই সঙ্গে ছাতাও নিন। এতে চুল সুরক্ষিত থাকবে।

হেলদি ডায়েট: বর্ষায় চুল পড়া রুখতে, বিশেষ ভাবে নজর দিন ডায়েট-এ। ভাজাভুজি কম খান। অয়েলি ফুড ব্লাড সার্কুলেশন- এর গতি কমিয়ে দেয়। চুলে পুষ্টির যোগান হয় এমন খাদ্য গ্রহণ করুন। ভিটামিন ই, ভিটামিন কে এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখুন ডায়েট-এ। ব্যালেন্সড ডায়েট-ই দিতে পারে সুন্দর চুল।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...