সময়টা তখন ১৭৮৬, এক গ্রীষ্মে জর্জ স্মিথ নামে একজন দুষ্কৃতী লন্ডন থেকে এডিনবরা শহরে এসে ক্যাননগেট অঞ্চলে মুদির দোকান খুলে বসলেন। খুব শীঘ্রই নজরে পড়লেন ডিকন ব্রডি’র। এই স্মিথ ও ব্রডি’র শিকার হলেন, বড়ো বড়ো সব ব্যবসায়ী ও সাধারণ গৃহস্থরা। ওই ১৭৮৬ সালে প্রথমে তারা রাতের অন্ধকারে লুঠ করলেন শহরের এক স্বর্ণকার ও এক তামাক ব্যবসায়ীর দোকান। দিনটা ছিল ক্রিসমাসের রাত। এর পরে ব্রডি ও স্মিথ জড়িয়ে পড়লেন আরও দুই দুষ্কৃতীর সঙ্গে, যারা হলেন সাত বছরের জেল খেটে বেরোনো আসামি জন ব্রাউন এবং এক জুতো প্রস্তুতকারক অ্যান্ড্রু এইন্সলি। এই চারজন মিলে ১৭৮৭ সালে একটা চায়ের গুদাম থেকে মহামূল্যবান চা চুরি করেন। এর কয়েকদিনের মধ্যেই ১৭৮৮ সালে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হানা দিলেন এডিনবরা শহরের রয়াল মাইল সড়কের উপরে অবস্থিত চেসেল কোর্টের সরকারি আবগারি দফতরের অফিসে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে মাত্র ১৬ পাউন্ড চুরি করে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে হয় তাদের।

দাগি আসামি জন ব্রাউনকে ১৫০ পাউন্ডের প্রলোভন দেখিয়ে, তার থেকে ওই ডাকাতির পান্ডাদের নাম-ধাম জানতে চাওয়া হলে, শেরিফের দফতরের কেরানির কাছে গিয়ে সে এইন্সলি এবং স্মিথের নাম ফাঁস করে দেয়। তাঁর সব খেলা শেষ বুঝে ডিকন ব্রডি এডিনবরা ছেড়ে পালিয়ে প্রথমে লন্ডনে চলে যান। সেখান থেকে জাহাজে চেপে হল্যান্ডের রাজধানী আমস্টার্ডামে। কিন্তু ব্রডিকে গ্রেফতারের জন্য পুরস্কার ঘোষণার সাথে সাথেই তাকে আমস্টারডামের এক সরাইখানার কাঠের আলমারির ভিতর থেকে গ্রেপ্তার করে এডিনবরা শহরে নিয়ে আসা হয়। এর পরে স্মিথের সাথে তারও বিচার হয়। আভিজাত্যের মুখোশ খসে পড়ে ব্রডির। মাত্র ২১ ঘণ্টার বিচারের পরে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে, ফাঁসির আদেশ প্রদান করে আদালত।

১৭৮৮ সালের পয়লা অক্টোবর ‘ক্যাননগেট’ অঞ্চলে প্রকাশ্যে রাজপথের উপরে চল্লিশ হাজার জনতার উপস্থিতিতে ডিকন ব্রডি’র ফাঁসির আয়োজন করা হয়। সেখানেও ফাঁসুড়েকে হাত করে গলায় রুপার নল লাগিয়ে, তার উপরে ইস্পাতের কলার চাপিয়ে ডিকন ব্রডি ফাঁসির কাঠগড়ায় এসে হাজির হন। উদ্দেশ্য ছিল ফাঁসির পরেই ফাঁসুড়ে দ্রুত তাঁর দেহ সরিয়ে ফেলতে পারলেই, সেই যাত্রায় পরিত্রাণ পেয়ে পালাতে সক্ষম হবেন তিনি। কিন্তু তার পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পরে, ডিকন ব্রডি’র মৃতদেহ চ্যাপেল স্ট্রিটের এক অখ্যাত চার্চের সামনে কবর দেওয়া হয়। সেই স্থানটি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে একটি গাড়ি রাখার (Car Parking) স্থান হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

এডিনবরা শহরের বুকে এখনও জনশ্রুতি হিসাবে মুখে মুখে ঘোরে যে, ফাঁসি কাঠ (Gallow) স্কটল্যান্ডে প্রথম নির্মিত হয়েছিল। প্রখ্যাত হস্তশিল্পী ও স্থপতি ডিকন ব্রডি’র হাতে। শেষপর্যন্ত সেই ফাঁসিকাঠেই ঝোলানো হয়েছিল তাকেই!

আর ব্রডি’স ক্লোস্-এর সামনে থেকে রোজ রাতে কালো রঙের যে বাসে করে Ghost Bus Tour-এর আয়োজন করা হয়, তার সমাপ্তি হয় ওই ব্রডি’স ক্লোস্-এর প্রবেশ পথের সামনে। চারদিকে বৈপরীত্যে ভরা “ডিকন ব্রডি’র অতৃপ্ত আত্মার আর্তনাদের সঙ্গে, যা প্রতিধ্বনিত হতে হতে মিলিয়ে যায় ব্রডি’স ক্লোস-এর গভীর থেকে গভীরতর অভ্যন্তরে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...