শিশুর ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল তাই যে-কোনও প্রোডাক্ট শিশুর ত্বকের জন্য ব্যবহারযোগ্য কিনা জেনে, তবেই সেটা ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ করে বড়োরা যেটা নিজেদের জন্য ব্যবহার করেন সেগুলো শিশুর ত্বকে একদমই চলবে না। শিশুর কোমল ত্বকের জন্য সফ্ট, কেমিক্যাল ফ্রি এবং জেন্টল, প্রোডাক্টের প্রয়োজন। Child’s Skin Care সম্পর্কে এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস-এর ডার্মাটোলজিস্ট অমিত বাংগায়া-র কিছু মতামত প্রকাশিত হল।
বাচ্চার স্নানের সময় ভুলভ্রান্তি যেন না হয়
শিশুর স্নানের জল অবশ্যই ঈষদুষ্ণ গরম হওয়া উচিত। এতে শিশু যেমন সুরক্ষিত থাকবে তেমনি শিশুর ত্বকেও কোনও ক্ষতি হবে না। শিশুকে স্নান করানোর আগে তার তোয়ালে, শ্যাম্পু, শাওয়ার জেল, ময়েশ্চারাইজার, জামাকাপড়— সবকিছু রেডি রেখে তারপর তাকে স্নান করাতে বসুন। জল ১২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার চেয়ে গরম কম হওয়া উচিত।
স্নানের সময় শিশুকে একা রাখবেন না। জলের গভীরতা শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এছাড়াও বাথটাব-টি বড়ো ব্যবহার না করে ছোটো ব্যবহার করুন। ঠান্ডা গরম মিশিয়ে বাচ্চার স্নানের জল রেডি করুন এবং শিশুকে সেই জলে স্নান করাবার আগে নিজের কনুই জলে ডুবিয়ে জলের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে নিন।
প্রথমে শিশুর শরীর এবং পরে মাথা ধোওয়া উচিত, যাতে মাথা দীর্ঘক্ষণ ভেজা না থাকে। ৪ থেকে ৫ মিনিটের বেশি বাচ্চাকে বাথটাবে রাখা উচিত নয় কারণ জলে বেশিক্ষণ রাখলে ত্বক রুক্ষ হয়ে উঠতে পারে এবং সংবেদনশীল ত্বক হওয়ার ফলে ত্বকে র্যাশ বেরোতে পারে আবার চামড়া শুকিয়ে পাপড়ির মতো উঠতেও থাকে। স্নানের সময় এই জিনিসগুলি খেয়াল রাখলে শিশুর ত্বক থাকবে মোলায়েম এবং স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।
স্নানের পর ময়েশ্চারাইজার
অনেক মায়ের মনেই প্রশ্ন থাকে শিশুর জন্য কী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন? প্রথমেই মনে রাখতে হবে সুগন্ধীযুক্ত ময়েশ্চারাইজার শিশুর জন্য কখনওই ব্যবহার করবেন না। শিশুর জন্য কোনও প্রোডাক্ট কেনার আগে দেখে নেওয়া দরকার এতে যেন কোনওরকম ডাই, অ্যালকোহল, প্যারাবেন্স বা সিন্থেটিক সুগন্ধী না থাকে। কারণ সেগুলি Child’s skin-এর জন্য ক্ষতিকারক।
শিশুর ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে স্নানের পর বেবি লোশন লাগানো জরুরি। জিংক অক্সাইড-যুক্ত ময়েশ্চারাইজার অথবা জেন্টল ময়েশ্চারাইজার-ই শিশুর ত্বকের জন্য উপযুক্ত। কারণ শিশুর ত্বকের জন্য এগুলি সুরক্ষিত কবচের কাজ করে।
বেবি পাউডার কেনার আগে পরখ করুন
যে-কোনও বেবি পাউডার শিশুর জন্য বেছে নেওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। বাজারে বহু কোম্পানির বেবি পাউডার কিনতে পাওয়া যায় কিন্তু নিজে আগে সেটা পরখ করে কিংবা ডার্মাটোলজিস্ট-এর পরামর্শমতন বাচ্চার জন্য বেবি পাউডার বাছুন।
শিশুর জন্য জিংক অক্সাইড-যুক্ত জেন্টল বেবি পাউডার বেছে নিতে পারেন। এতে শিশুর ত্বক থাকবে শীতল, ফ্রেশ, তরতাজা এবং প্রাণোজ্জ্বল। এছাড়াও এর হিলিং প্রপার্টিজ শিশুর ত্বক রাখবে মসৃণ। পাউডারে যদি প্রাকৃতিক উপাদান থাকে যেমন রাইস স্টার্চ, তাহলে এটি শিশুর সংবেদনশীল ত্বক সুরক্ষিত রাখার কাজ করবে। এই ধরনের পাউডার ব্যবহার করলে শিশুর ত্বকের পোরস ক্লগ হওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকবে না। ফলে ত্বক স্বভাবিক নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সক্ষম থাকবে।
অ্যালানটোয়াইন ত্বক সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে
সারা রাত যাতে শিশু আরামে ঘুমোতে পারে তার জন্য ডায়াপার পরিয়ে রাখা হয়। কিন্তু এর ফলে Child’s skin-এ লালচে ভাব, ফুসকুড়ি, চুলকানি ইত্যাদির সমস্যা হয়ে থাকে। এর জন্য খানিকটা সময়ের ব্যবধানে ডায়াপার চেঞ্জ করাটা একান্ত জরুরি। ডায়াপার বদলাবার সময় শিশুর ওই অংশ পরিষ্কার জল দিয়ে ভালো করে মুছে তোয়ালে দিয়ে শুকনো করে দেওয়া উচিত। শিশুর ত্বকে অ্যালানটোয়াইন উপাদান-যুক্ত ময়েশ্চারাইজার, লোশন অথবা পাউডার লাগানো উচিত। কারণ শিশুর সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এগুলো একদম উপযুক্ত এবং একই সঙ্গে ত্বককে এক্সফলিয়েট করে ত্বক সারিয়ে তোলারও কাজ করে। এর ফলে ত্বক থাকে কোমল এবং মসৃণ।
ক্র্যাডেল ক্যাপ-এর মোকাবিলা কীভাবে করবেন
এই সমস্যা সাধারণত খুব ছোটো বয়সের বাচ্চাদের মধ্যে দেখা যায়। এই সমস্যা হলে শিশুর স্ক্যাল্পে হলুদ হলুদ বা সাদা রঙের গ্রিজি প্যাচ চোখে পড়ে। কখনও শিশুদের কপালে, ভুরুতে এবং কানের আশেপাশেও এই ধরনের প্যাচ চোখে পড়ে। সাধারণত নিজে থেকেই এই সমস্যা চলে যায়। কিন্তু কোনও মা যদি নিজের শিশুর মাথায় এই ধরনের সমস্যা দেখে হাতে করে খুঁটে এটি তুলে ফেলতে চান, তাহলে তাতে শিশুর সংবেদনশীল ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বেশির ভাগ সময়েই এই সমস্যা, হেয়ার ফলিকলস-এর আশেপাশে, স্কিন গ্ল্যান্ডস দ্বারা অতিরিক্ত অয়েল উৎপাদনের কারণে হয়ে থাকে। নিজের থেকেই এটা সেরে যায় কিন্তু যদি পরিস্থিতি না শোধরায় তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডার্মাটোলজিস্ট দেখানো জরুরি।