আমার বয়স ৪৮ ৷ আমার স্বামী ৫১৷ আমাদের একটি সন্তান আছে৷ সে বিদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে৷ আমার স্বামী এবং আমি দুজনেই অনেক ত্যাগ স্বীকার করে ছেলেকে বড়ো করে তুলেছি৷ আমার স্বামী পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন সন্তানকে মানুষ করা, সুশিক্ষা দেওয়া এবং তার কেরিয়ার গড়ে তোলার কাজে৷ সন্তানেরও কোনও অভিযোগ নেই আমাদের ঘিরে৷
কিন্তু বর্তমানে আমি এবং আমার স্বামী এটা অনুভব করছি যে, সন্তানকে বড়ো করতে গিয়ে আমরা নিজেরা নিজেদের ইচ্ছেপূরণ করিনি৷ নিজেদের সখ-আল্হাদ,স্বপ্ন সবই বিসর্জন দিয়েছি৷ এত বছর ধরে একসঙ্গে সামাজিক ভাবে থেকে বুঝতে পারলাম– আমরা দুজনেই নিজেদের মতো করে আলাদা দুটি মানুষ। আমাদের ভাবনাচিন্তা একদমই আলাদা৷যদিও আমরা উভয়ে ঝগড়া করিনি, মারামারি করিনি, বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য থাকা সত্বেও একে অন্যের উপর মত চাপিয়ে দিইনি৷ বিতর্ক করেছি, অনেক বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত পোষন করেছি, তবুও কখনও আমরা আলাদা থাকিনি, সন্তানের কথা ভেবে মানিয়ে নিয়ে থেকেছি।কিন্তু যেহেতু আমাদের জীবনদর্শনটাই পরস্পরের থেকে আলাদা– আমরা এখন মধ্যবয়সে এসে মিউচুয়াল ডিসিশন-এ সেপারেশন নিতে চাই৷ এই সিদ্ধান্ত কি ঠিক?
শুধু এই কারণে যে আমরা একে অপরকে শ্রদ্ধা করি বা ভালোবাসি, আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের অপূর্ণতা নিয়েই চিরকাল বাঁচব–সেটা উচিত নয়৷ প্রতিটি দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
আপনারা অত্যন্ত ম্যাচিওরড সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ আপনাদের দায়িত্ব, সন্তানকে বড়ো করে তোলার কাজ, সবই সুনিপুণভাবে সম্পন্ন করেছেন আপনারা৷ এবার নিজের নিজের মতো করে বাকি জীবন কাটানোর অধিকার আপনাদের নিশ্চয়ই আছে৷ এবং কোনও অসন্তোষের ঘটনা না ঘটিয়ে, পরস্পরকে কালিমালিপ্ত না করে এই যে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত– তা সত্যিই সমীহ করার মতো৷
এমন নয় যে, আপনারা পরস্পরকে ভালোবাসেননি, দূরে গিয়েও হয়তো আগের মতোই ভালোবাসবেন৷ কিন্তু নিজের ইচ্ছেপূরণের অধিকারও মানুষের থাকা উচিত৷ সাধারণত দাম্পত্য কলহে বড়োদের আচরণ, বাচ্চাদের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷। কিন্তু এখন আপনাদের সন্তানের যা বয়স, তাতে সে আপনাদের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধাই করবে বলে মনে হয়৷
বিবাহবিচ্ছেদ মানেই যে পরস্পরকে গালমন্দ করা, সবসময় তা কিন্তু নয়৷ মিউচুয়াল ডিসিশন-এ কোনও দম্পতি বিবাহবিচ্ছেদ করতেই পারেন৷বিষয়টা এক তরফা হলেও প্রাথমিক মানসিক আঘাত কাটিয়ে, বিচ্ছিন্ন দম্পতি পুনরায় সুসম্পর্কে বা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ফিরতে পারেন৷ এমন উদাহরণ আমাদের সমাজে প্রচুর রয়্ছে৷
বিবাহবিচ্ছেদের পরে পরস্পরের মধ্যে সুসম্পর্ক রাখা, বিপদে পাশে দাঁড়ানো অত্যন্ত মানবিক পদক্ষেপ৷ এতে সন্তানের সঙ্গেও অন্তরঙ্গতা বজায় থাকে৷ সেও তার মা-বাবাকে শ্রদ্ধার আসনে রাখে৷ এই উপলব্ধি যে, আপনারা ভালো থাকার স্বার্থে পৃথক হতে চাইছেন, এতে দোষের কিছু নেই৷ বরং দূরে গিয়েও বন্ধুত্ব আরও নিখুঁত করার জন্য পরস্পরকে জীবনের নানা ক্ষেত্রে পরামর্শ দিন, যাতে সম্পর্ক আগের চেয়েও মধুর হয়।