শুরু হয়ে গেছে ফেস্টিভ সিজন। প্রকৃতিতে লেগেছে তারই ছোঁয়া৷ সকলেই চাইছে সুন্দর হতে। পোশাক, প্রসাধনের সঙ্গে দরকার মানানসই গয়নাও। সোনা অথবা দামী কোনও ধাতুর গহনা কেনার এটাই উপযুক্ত সময়। তার ওপর সামনেই ধনতেরাস এবং দীপাবলির সমারোহ। ধনতেরাসে গয়না কেনার দৌড় এখন পশ্চিমবঙ্গেও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু কী ধরনের গয়নার ফ্যাশন এখন মার্কেটে বেশি চলছে, কী রেঞ্জ-এর ডিমান্ড ক্রেতাদের মধ্যে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এই সবকিছুর খেয়াল রাখতে হচ্ছে Jewellery বিক্রেতাদের।

গয়না কিনতে ইচ্ছুক ক্রেতাদের মধ্যে দু’টি ধরন রয়েছে। যারা পছন্দ করেন পরম্পরাগত ভারী গয়না এবং আজকের প্রজন্মের প্রথম পছন্দ হালকার মধ্যে মডার্ন ডিজাইনের স্লিক গয়না।

পুরোনো দিনের ভারী গয়না বলতে ঝুমকো, কানবালা, কান, রতনচূড়, চূড়, মানতাসা, সীতাহার, চিক, মভচেন, ভারী ওজনের সোনার নানা ডিজাইনের নেকলেস। এই গয়নার ডিজাইনগুলিতে খুব বেশি কিছু একটা হেরফের ঘটেনি। আগেকার দিনে ধনী ব্যক্তিরা নিজেদের প্রতাপ, আর্থিক ক্ষমতা সাধারণ জনমানুষকে দেখাবার উদ্দেশ্যেই, গা-ভর্তি Jewellery পরে ঘুরতেন। বাড়ির মেয়েরা সর্বাঙ্গ সোনায় মুড়ে রাখতেন রূপের দস্তে। রাস্তাঘাটে বিপদের আশঙ্কা কম ছিল ফলে ভারী গয়নার কদর ছিল তখন।

আমাদের দেশে ফ্যাশনের ট্রেন্ড তৈরি হয় সিনেমার পর্দায় নায়ক-নায়িকাদের দেখে। তাদের যে ধরনের পোশাকের স্টাইল, চুলের স্টাইল, গয়নার স্টাইল তাই দেখে কোটি কোটি দর্শক নিজেদের স্টাইল কপি করেন। মধুবালা, সুরাইয়া, মীনা কুমারী থেকে শুরু করে আজকের সোনাম কপূর, সোনাক্ষি সিনহা, বিদ্যা বালন, করিনা কপুর — সকলেরই ফ্যাশন স্টেটমেন্ট আলাদা আলাদা। গয়নার বেলাতেও সেই একই ফরমুলা। পুরোনো অভিনেত্রীদের ভারী গয়নায় যেখানে অভিনয় করতে দেখা যেত, আজ সেখানে সকলেই চান হালকা গয়নাতেই নিজেদের শ্রীবৃদ্ধি করতে।

উদাহরণ হিসেবে ফিল্ম পার্টি বা অ্যাওয়ার্ড সেরেমনিগুলি ধরা যেতে পারে। বহু দর্শকই কৌতূহলী হয়ে থাকেন ফিল্মের নায়িকারা কী ধরনের পোশাক অথবা কোন নতুন ডিজাইনের গয়নায় নিজেকে সজ্জিত করে হাজার দর্শকের সামনে উপস্থিত হচ্ছেন, তা দেখতে। বিদ্যা বালনকে সাধারণত ভারতীয় পোশাকে সজ্জিত হয়েই বেশি দেখা যায়। আবার সেখানেই সোনাম কপূরকে  নতুন প্রজন্মের নায়িকাদের প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা যায় ওয়েস্টার্ন পোশাকে। কিন্তু তাঁর পরনেও থাকে সেই চিরাচরিত ভারতীয় গয়না। আর ভারতীয় এবং ওয়েস্টার্ন সব রূপেই তিনি সমান স্বচ্ছন্দ।

ফ্যাশনের পাতায় নাকে নথ পড়ার কনসেপ্ট একটু সেকেলে। কিন্তু সোনাম, বিদ্যার দেখাদেখি আবার নাকের গয়না, ফ্যাশনে ভীষণভাবে ইন। পুরোনো ফ্যাশন সবসময়েই ফিরে ফিরে আসে। পোশাক, হেয়ার স্টাইল, গয়না ইত্যাদির ক্ষেত্রেও সামান্য পরিবর্তন, তারতম্য নিয়েই পুরোনোকেই অভিনন্দন জানাই আমরা।

যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদের সঙ্গে মেয়েদেরও কর্মজগতে পা রাখতে হচ্ছে। ভারতীয় সভ্যতায় ওয়েস্টার্ন ফ্যাশনের ছোঁয়া লেগেছে। পুরুষরা শার্ট-প্যান্ট পরে কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছেন। খুব বেশি হলে গলায় থাকে সরু সোনার চেন, বড়োজোর হাতে আংটি। মেয়েরাও বাসে-ট্রামে ঝুলে অফিস যাচ্ছেন সুতরাং তাদের শরীরে গয়নার সংখ্যাও সীমিত হয়ে পড়েছে। কানে ও গলায় হালকা সোনার কিছু পরলেও বাড়ির বাইরে বেরোবার সময় ভারী যা-কিছু গয়না সবই বাড়িতে অথবা ব্যাংক-এর লকারে তুলে রাখা।

ভারতীয় পোশাক ছেড়ে ওয়েস্টার্ন পোশাকেই এখন মেয়েরা অনেক বেশি স্বতঃস্ফূর্ত বোধ করেন। হাতে হালকা রিস্লেট, গলায় সরু সোনার চেনের সঙ্গে ছোট্ট লকেট, কানে হালকা দুল-ই এখন সকলের পছন্দের ফ্যাশন হয়েছে। সোনার সঙ্গে হিরের সেটিং এখন মেয়েরা পছন্দ করছেন পরতে। বিভিন্ন রেঞ্জে এই ধরনের হালকা ডিজাইন দোকানে রাখছেন ব্যবসায়ীরা। ভারতীয় পোশাকের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমি পোশাকের সঙ্গেও যা সুন্দর ভাবে মানানসই হচ্ছে।

গয়নার সাজে নিজেকে সাজিয়ে তুলতে মেয়েদের যেমন জুড়ি মেলে না তেমনি গয়নার দোকানেও কেনাকাটার আছিলায় ঢুঁ মারতেও মেয়েরা আনন্দ পায়। কেনাকাটার জন্যে পুরো বছরই রয়েছে। সোনার দাম একটু কমলেই অফিস গোয়ার্স থেকে শুরু করে হাউস ওয়াইফ— সবাই ছোটেন ছোটোখাটো হালকা Jewellery কেনার জন্যে। দীপাবলির সময়টা একটা বিশেষ সময় যখন দেবী লক্ষ্মী বাড়িতে বাড়িতে পূজিত হন। তিনি ধনের দেবী তাই বাড়িতে ধনাগম শুভ বলে মানা হয়। দীপাবলির আগের দিনটিতেই ‘ধনতেরস’ উৎসবে সোনার সামান্য কিছু কেনাও শুভ বলে বিবেচিত হয়। সেদিনটিতে তাই ধনী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও ভিড় করেন সামর্থ্য অনুযায়ী সোনা কিনে ঘরে তোলার জন্য।

সমস্ত শহর-গঞ্জে সোনার দোকানের ছড়াছড়ি। সব জায়গাতেই পাওয়া যায় হালকা-ভারী সব ধরনের গয়নার সম্ভার। এখন আগের মতো স্যাকরা নিজের পছন্দে গয়নার ডিজাইন দেন না। ডিজাইন করার জন্যে বিশেষ ভাবে পড়াশোনা করা গয়নার ডিজাইনার-রা রয়েছেন, যাঁরা দিনরাত্রি ডিজাইন নিয়েই রিসার্চ করছেন। নতুন ডিজাইন তুলে ধরছেন গয়না প্রস্তুতকারীদের কাছে। পরম্পরাগত গয়নার সঙ্গে মডার্ন ডিজাইনেরও মেলবন্ধন ঘটাচ্ছে তারা। গয়নার ডিজাইনারের কেরিয়ারও এখন নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের হাতছানি দিচ্ছে। অনেকেই বেছে নিচ্ছেন এই পেশা। ফলে গয়নার ব্যাবসাও দিনে দিনে ফুলে-ফেঁপে উঠছে নিজেদের নতুন নতুন সম্ভার নিয়ে।

 

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...