চাবি ঘোরানোর জায়গাটা একটু ভালো করে লক্ষ্য করো, কমলাক্ষ বলল।

চাবি প্রবেশ করানোর ছিদ্রটির আশেপাশে সিন্দুকের শরীরে অনেকগুলি দাগের চিহ্ন, খুব স্পষ্ট নয় তবে বোঝা যায়, ঠিক যেন কেউ অনভ্যস্ত হাতে চাবি ঘোরানোর চেষ্টা করেছে।

—কী বুঝছেন, কমলাক্ষবাবু? ইন্সপেক্টর মল্লিক ঠিক আমাদের পেছনে এসে দাঁড়িয়ে প্রশ্নটি করলেন।

—বিশেষ কিছু নয়। আপনি কিছু বুঝতে পারলেন? কমলাক্ষ পালটা প্রশ্ন করল।

—আরে মশাই বাইশ বছর হল এই লাইনে আছি। সপ্তাহে অন্তত একটা এরকম মার্ডার কেস আসেই। ভেরি সিম্পল ডিডাকশন, ছেলে দেনা শোধ করার জন্য বাপকে প্রাণে মেরেছে।

—হুম, তাই বটে, কমলাক্ষ বলল। কিন্তু তার কথায় কোনও উপসংহারের আভাস পেলাম না এবং বুঝলাম ইন্সপেক্টর মহাশয়ের কাছে বিষয়টি জলের মতো সহজ হলেও, কমলাক্ষ আপাতত সেটিকে কাঠিন্যতার পর্যায়েই রেখেছে।

—তাহলে আপনি এখন চললেন? ইন্সপেক্টর মল্লিক বললেন।

—বাড়ির চাকরের সাথে দু’একটা কথা বলেই রওনা দেব। আর একটা কথা পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট…

কমলাক্ষকে কথাটা সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই ইন্সপেক্টর মহাশয় তৎপর হয়ে বললেন, “সে আর বলতে হবে না। রিপোর্টের একটা ফটোকপি আপনার কাছে পৌঁছে যাবে।”

ইন্সপেক্টর মল্লিককে ধন্যবাদ জানিয়ে আমরা সিঁড়ি ধরে নীচে নেমে এলাম। বাড়ি যখন ফিরলাম তখন ঘড়ির কাঁটা দুপুর বারোটা ছুই ছুই। মনোময়বাবুর চাকর, সাধন পান্ডের কাছ থেকে যে একটি বিশেষ তথ্য সংগ্রহ করা গেছে তা এখানে বলে রাখা প্রয়োজন। মনোময়বাবু বিপত্নীক ছিলেন সে কথা আগেই বলেছি। তাঁর এই একাকিত্বের জীবনে একটি নতুন মনোরঞ্জনের উপায় হিসেবে তিনি জুটিয়ে বসলেন একটি বাদ্যযন্ত্র, ইউকোলেলে। শিক্ষিকাও জুটে গেল দ্রুত, নাম মধুলতা বিশ্বাস। যুবতি ও সুন্দরী শিক্ষিকার সাথে মনোময়বাবুর ঘনিষ্ঠতা ছিল বেশ দৃষ্টিকটু। এই নিয়ে ছেলের সাথে বিস্তর ঝামেলাও হয়েছে বেশ কয়েকবার। সবচেয়ে বড়ো কথা, যে- রাতে মনোময়বাবু খুন হন, মধুলতাদেবী সেদিন রাত দশটা পর্যন্ত ওই বাড়িতেই ছিলেন।

সন্ধে পর্যন্ত আমাদের প্রাত্যাহিক রুটিনে কোনও বদল ঘটল না। কমলাক্ষের মধ্যেও বিশেষ কোনও দুশ্চিন্তার ভাব লক্ষ্য করা গেল না। রাত সাতটার পর প্রায় ঘন্টা দুয়েকের মতো কমলাক্ষ একবার উধাও হল। ফিরে এসে, ওর প্রিয় আরাম কেদারাটায় বসে আমার উদ্দেশ্যে বলল, ‘নতুন খবর, কলকাতার এক হোটেল থেকে অখিলেশ গ্রেফতার হয়েছে।”

—অখিলেশ ! কলকাতা থেকে! কিন্তু সে তো…

—সে ভূবনেশ্বর যায়নি। যদিও ব্যাপারটা আগে থেকেই আমি আন্দাজ করেছিলাম।

—ও, তাহলে তো সবটাই জলের মতো পরিষ্কার।

— কোনটা?

—অখিলেশ ভেবেছিল সকলে ভাববে সে ভূবনেশ্বরে আছে এবং সুযোগ বুঝে সে রাতে বাড়ি ফিরে, বাপকে মেরে, পাথরগুলো হাতিয়ে নেবে, সিম্পল।

—ভেবেছিল?

—না, মানে করেছে।

—তোমার যুক্তি যদি মেনেও নেওয়া যায় তাতেও একটা সমস্যা আছে।

—সেটা কী? আমি বেশ বিরক্ত হয়েই জিজ্ঞেস করলাম।

—পাথরগুলো অখিলেশের কাছে পাওয়া যায়নি, কমলাক্ষ বলল।

—পাওয়া যায়নি!

—তোমার প্রথম অনুমানটুকু সঠিক। অখিলেশ রাতে ফিরে লকার খুলেছিল বটে, তবে ততক্ষণে চুরিটি হয়ে গিয়েছে। তার বাবাও যে ইতিমধ্যেই খুন হয়েছেন, সেকথা সে আন্দাজ করতে পারেনি।

(ক্রমশ)

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...