এভাবেই তিনদিন কেটে গেল। তৃতীয় দিনে একজন ইনফরমার খবর দিল যে সে একজনকে সাদা কাপড়ে ঢাকা অবস্থায় রোজ রাতে ওই বাড়ি থেকে বেরোতে দেখেছে। ওই ছায়ামূর্তিটা পাশের ওই জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। ভয়ে সে আর তাকে ফলো করতে পারেনি জঙ্গলের ভিতর পর্যন্ত। সন্দীপ আর দেরি না করে দলবল নিয়ে গিয়ে হাজির হল ওই জঙ্গলটার ভেতরে। দিনের আলোতে অনেক খোঁজার পর দেখল জঙ্গলের এক জায়গায় একটা ঢিবির মতো এবং তার ওপরে কিছু তাজা ফুল। মনে হল কেউ আজই রেখে গেছে। ঢিবিটা দেখে মনে হচ্ছে সদ্য খোঁড়া হয়েছে।
সন্দীপের আদেশে ওই ঢিবিটাকে খোঁড়া হল। খুঁড়ে নজরে এল কাগজে মোড়া কিছু একটা। সেটা খুলতেই চারিদিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ল। সন্দীপ আর সহ্য করতে পারছিল না। বুঝতে পারল ওটা ওই শিশুটিরই হৃৎপিণ্ড। পচন ধরেছে। সন্দীপ রামসিং- কে ওটাকে পরীক্ষা করার জন্য পাঠিয়ে দিতে বলেই জঙ্গলের বাইরে বেরিয়ে এল। এ দৃশ্য তার কিছুতেই সহ্য হচ্ছিল না। থানায় ফিরে সব অনুগত অফিসারদের ডেকে রাতের কর্মসূচীর কথা জানিয়ে দিল।
—দেখুন, যেহেতু এটা খুনের কেস, তাই সকলে নিজেদের আর্মস নিয়ে থাকবেন স্পটে। তবে আমি না বললে গুলি চালাবেন না। যদি জীবন বাঁচাতে গুলি চালাতে হয়, তবে পায়ে গুলি করবেন। আমি হত্যাকারীকে জীবিত ধরতে চাই। কারণ এই গ্রুপের সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা আমাকে জানতে হবে। এই কেসটা সলভ না করতে পারলে জানবেন আপনাদের অনেকেই এই থানা থেকে বদলি হয়ে যাবেন। শুধু তাই নয় মিডিয়াও আমাদের ছেড়ে দেবে না। তাই বি সিরিয়াস।
রাম সিং বলল— “ঠিক বলেছেন স্যার। আমরা আপনার সাথে থাকব। আমি নিশ্চিত হত্যাকারী আমাদের হাতে ধরা পড়বেই।”
নিজের দলের সবাইকে নিয়ে ছদ্মবেশে রাতের বেলা ওই জায়গায় গিয়ে দূরে দূরে পজিশন নিয়ে পাহারা দিতে লাগল। রাত প্রায় ১টা নাগাদ দেখা গেল সাদা কাপড় পরা এক ছায়ামূর্তি ওই ঢিবির কাছে এগিয়ে এসে দু’-হাত ভরে কিছু ফুল ওই ঢিবির ওপর ছড়িয়ে দিচ্ছে। এরপর আর কিছু ভাবার আগেই সন্দীপ দৌড়ে গিয়ে তার সাদা কাপড়টা সরিয়ে দিতেই বিস্ময়ে অবাক হয়ে গেল! ভাবল এ কী করে সম্ভব! দেখল শিশুটির মা তার দিকে হতভম্বের মতো তাকিয়ে আছে। তাকে ধরে নিয়ে আসা হল থানায়।
সন্দীপ নিজের রাগ অনেক কষ্টে সংযত করে বলল— ‘তুমি নিজের শিশুটিকে কেন মারলে? সত্যি না বললে আমি কিন্তু তোমার মতো এমন মহিলার গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করব না।”
—আমি ও আমার পরিবার বাচ্চাদের নিয়ে দারিদ্রের জ্বালায় খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম। একদিন এক তান্ত্রিকের কাছে যাই। ওই তান্ত্রিকই বলেছিল যে, আমরা যদি আমাদের একটি শিশুকে বলি দিতে পারি, তবেই আমাদের অবস্থা ফিরবে।
—তুমি আমাদের ওই তান্ত্রিকের ডেরায় নিয়ে চলো।
এরপর সন্দীপ ওই তান্ত্রিকের ডেরায় গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে। সন্দীপ মনে মনে ভাবে এই তান্ত্রিকের সাথে নিশ্চয়ই দিল্লির অনেক ক্রিমিনালের যোগাযোগ আছে। এর থেকে অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তাই বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দিল— আজ বাড়ি যেতে দেরি হতে পারে। এমনকী না-ও যেতে পারে। বিশেষ কাজে আটকে গেছে। রাম সিং-কেও বলল বাড়িতে জানিয়ে দিতে।
এরপর তান্ত্রিককে নিয়ে এল একটা আলাদা ঘরে। সেখানে রাম সিং আর সন্দীপ ছাড়া কেউ নেই। সন্দীপ তান্ত্রিককে জেরা শুরু করল। তান্ত্রিক হঠাৎ ঝোলার থেকে একটা লাট্টু বের করে ঘোরাতে লাগল। রাম সিং বাঘের মতো থাবা দিয়ে লাট্টুটা তুলে নিল। বলল— সাহেব, আমি লোকের মুখে শুনেছি যে এই তান্ত্রিক নাকি লাটু ঘুরিয়ে সামনের লোকেদের সম্মোহিত করে দেয়। ও হয়তো আমাদেরও তাই করতে চাইছিল। তাই আমি আটকে দিলাম। একথা শুনে সন্দীপের রাগটা আরও বেড়ে গেল।
তান্ত্রিককে বলল, সোজাসুজি আমার সব প্রশ্নের জবাব দেবে নাকি থার্ড ডিগ্রি শুরু করব? এখানে চ্যাঁচালেও কেউ তোমাকে বাঁচাতে আসবে না। সোজাসুজি বলো — তুমি দিল্লির কিডন্যাপার গ্যাংদের কাকে কাকে চেনো।
—রাম সিং, মনে হয় সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না। আমার রুলারটা আর থার্ড ডিগ্রির যন্ত্রপাতিগুলো নিয়ে এসো। আমি আজ একটু হাতটা ঝালিয়ে নিতে চাই। এদের বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই। বাকিটা আমি দেখে নেব রাতের অন্ধকারে।
(চলবে)