সম্পর্ক গড়তে যতটা না সময় লাগে, তার চেয়ে বেশি সময় দিতে হয় ও যত্ন নিতে হয় সেই সম্পর্ককে সুন্দর করে তুলতে আর বাঁচিয়ে রাখতে। সম্পর্ক যখন অভ্যাসে পরিণত হয়, তখন অনেক সময়ই তা একঘেয়ে হয়ে ওঠে। আর এই একঘেয়েমি থেকেই দূরত্ব বাড়তে থাকে সম্পর্কে।
কিন্তু এছাড়াও থাকে কিছু মারাত্মক কারণ৷ যেমন মাত্রাছাড়া অধিকারবোধ৷ প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের কাছে মূল্যবান ঠিকই, পরস্পরের তাকে আগলে রাখার দায়ও আছে বটে– কিন্তু তাই বলে শ্বাসরোধ করা অধিকারবোধ কায়েম করা কিন্তু ক্রমশ তিক্ত হতে থাকা সম্পর্কের কবরে শেষ পেরেক হতে পারে৷
আসলে সব মানুষেরই আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি, ভাবনা ও জীবনদর্শন রয়েছে। তাই তাকে নিজের সঙ্গে গুলিয়ে ফেললে ভুল হবে। জোর করে কাউকে বদলানোর চেষ্টা করা অথবা তাকে একদম পারফেক্ট বানানোর চেষ্টা করা চূড়ান্ত ভুল। প্রেমের সম্পর্কে এটাই ফিরে আসে বার বার। সঙ্গীকে নিজেদের মতো করে বদলানোর চেষ্টা করি আমরা, ফলে কম সময়েই সম্পর্কে বিরক্তি ও তিক্ততা চলে আসে।
আমরা অনেক সময়ই চাই সঙ্গী শুধু আমার সঙ্গেই তার গোটা জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাটাবে৷ তার নিজস্ব কোনও সত্তা কিংবা বৃত্ত থাকবে না৷ তার বন্ধুবান্ধব বা একান্ত ব্যক্তিগত কোনও স্পেস থাকবে না৷এই অন্যায্য ইচ্ছের আমরা একটা ভালোবাসার নাম দিই ‘অধিকারবোধ’৷ কিন্তু ভুললে চলবে না অধিকারবোধ মানে সঙ্গীকে আমার ইচ্ছে অনুযায়ী নিয়ত্র্রণ করা নয়৷ তাই সমস্ত মুভমেন্ট মনিটার করে তাকে আপাতভাবে বন্দি করা কোনও সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্ক হতে পারে না৷ অতিরিক্ত অধিকারবোধ অস্বাস্থ্যকর সম্পর্কের অন্যতম কারণ। সঙ্গীর সব বিষয়ে নিজের মালিকানা ফলানো বা তার ইচ্ছে-অনিচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা আখেরে লাভের থেকে ক্ষতিই বেশি করে।
এই অতিরিক্ত মনিটরিং পার্টনারকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে৷ জবাবদিহি এড়াতে সে তার গতিবিধি গোপন করতে শুরু করে৷ এর থেকে তার স্বামী বা স্ত্রীর আবার শুরু হয় সন্দেহ৷ অর্থাৎ সমস্যা ক্রমাগত নানা পথ বিস্তার করতে থাকে৷পরিসংখ্যান বলছে, ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের সন্দেহপ্রবণতা বেশি। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সন্দেহপ্রবণতার জন্ম হয় অধিকারবোধ থেকে। মনোবিদরা মনে করছেন, অতিরিক্ত অধিকারবোধ আসলে সন্দেহপ্রবণতারই প্রথম ধাপ।
নিজের ভাবনা, মতামতের প্রকাশ না হলে দূরত্ব বাড়বেই। সম্পর্কে অনেক ভুল বোঝাবুঝির সমাধান করতে পারে কিন্তু পারস্পরিক কথোপকথন। রাগ, দুঃখ, অভিমান, ভালোবাসার প্রকাশে পরিবর্তন আনুন। অধিকারবোধ ফলিয়ে পরস্পরের সহজে কথা বলার পথটা বন্ধ করবেন না৷সঙ্গী আপনার সাধের ময়না নয় যে তাকে খাঁচায় ভরে রাখবেন৷
শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্কই সুস্থ প্রেম টিকিয়ে রাখার চাবিকাঠি নয়। অনেকেই ভাবেন সঙ্গী শারীরিক সম্পর্কে আগ্রহ হারাচ্ছে মানে সে অন্যের প্রতি আসক্ত। তখনই কমে যায় কমিউনিকেশন, পরস্পরকে জানা-বোঝার পালাতেও ছেদ পড়ে যায়। ফলে সম্পর্কে দূরত্ব বাড়তে থাকে। মনোবিদরা বলছেন, সবক্ষেত্রেই কমিউনিকেশন জরুরি। পরস্পরের সঙ্গে কথা বলাই সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ। আপনার সঙ্গী আপনারই থাকবে৷ অযথা তাকে সম্পত্তি ভেবে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করবেন না৷ বরং সে কী চায়, সেটাও বোঝার চেষ্টা করুন৷ আপনার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে বলেই তার পুরোনো বৃত্তগুলো থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে বাধ্য, এমনটা ভাবাও ঠিক নয়৷