ইন্ডিগো আর এয়ার ইন্ডিয়া ৫০০টি করে বিমান ক্রয় করেছে এই খবর প্রায় সরকরি উদ্যোগেই সংবাদ মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ যেন সরকারের নিজস্ব কৃতিত্ব! কিন্তু বাস্তব ঘটনা ঠিক এর উলটো। এয়ার ট্রাফিক বাড়ছে মানে বুঝতে হবে যে, দেশে পথ পরিবহণ এবং ট্রেনযাত্রা এখনও হয় সময় সাপেক্ষ আর নয়তো ব্যয়বহুল। সেই কারণেই যার কাছে পয়সা আছে, তিনি চেষ্টা করছেন বিমানেই যাত্রা করতে।
এয়ারপোর্ট গমন ও বিমানযাত্রার বিষয়টি এখন আর বিলাসিতার পর্যায়ে নেই— বরং প্রয়োজনের তালিকায় যোগ হয়েছে। যে-সফরে গন্তব্যে পৌঁছোতে কয়েকটা দিন লেগে যায়, মানুষ তো চেষ্টা করবেই সেই সফরকে কয়েক ঘন্টায় কমিয়ে আনার। আর তাতে যদি কিছু টাকা বেশি দিতে হয়, সেটা মানুষের আর ততটা গায়ে লাগে না। বিশেষ করে কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনে বা ব্যাবসা কিংবা পড়াশোনার সুবাদে বড়ো শহরের মানুষজনকে অন্য শহরে যাতায়াত করতেই হয়। বিমানযাত্রা তাদের ক্ষেত্রে এখন কম সময়ের একটি জরুরি পরিবহণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে সমস্ত বিমান কোম্পানি বেসরকারি হাতে হস্তান্তরিত হয়েছে। বিমানগুলিও তাদের নিজস্ব। এয়ারপোর্টগুলি তত্ত্বাবধান করে কোনও না কোনও ঠিকাদার সংস্থা। এত বিমান কোম্পানি তৈরি হয়েছে বলে আবার ভাববেন না যে, এই প্রতিযোগিতার বাজারে বুঝি যাত্রীদের বিশেষ ফায়দা হচ্ছে। পরিবর্তে এয়ারলাইন্স এখন বুঝে গেছে যাত্রীরা ঠেকায় পড়ে তাদেরই দ্বারস্থ হবে। আর এর ফলে তারাও চড়া দামে অত্যন্ত নিম্নমানের পরিষেবা দিতে শুরু করেছে।
সরকার নানা ক্ষেত্রে নীতিগত ভাবে প্রতিটি জিনিসের একটি নির্দিষ্ট মূল্যমান বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু এয়ার টিকিটের কোনও নির্দিষ্ট এমআরপি নেই। ডায়নামিক ফেয়ার-এর নামে এরা যেমন খুশি লুঠ করছে যাত্রীদের। অনেক সময় দু-তিনটি বিমান পরিবহণ সংস্থা একত্রে কোনও একটি সেক্টারের টিকিট মূল্য ২০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। যে-সমস্ত সেক্টারে যাত্রী কম হয়, সেখানে ইচ্ছেমতো বিমান বাতিল করে দেওয়া হয়। আজকাল এয়ারলাইন্সগুলির কোনও নির্দিষ্ট টাইমটেবল পর্যন্ত নেই। কোনও সেক্টারে একদিনে ৫টি বিমান যায় তো পরদিন একই সেক্টারে যায় মাত্র ২টি। আজকাল যেহেতু বুকিংটা পুরোপুরি অনলাইন-এ হয়, ফলে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জানার উপায় থাকে না কোন বিমান বাতিল হল।
চড়া দামের টিকিটের পাশপাশি রয়েছে দুর্মূল্য খাবার, যা আপনাকে এয়ারপোর্ট বা বিমানেই কিনতে হবে। আপনাকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর ফায়দা করে দিতেই হবে। সরকারও জানে এই ব্যয়বহুলতার কারণেই বিমান যাত্রা সাধারণ মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরের বিষয়।
একসময় শ্রেণিবিভাজন হয়েছিল জাতি ও পেশার নিরিখে। এখন তা সম্পূর্ণ ভাবে অর্থনৈতিক বিভাজনে স্পষ্ট। সাধারণ মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছে আর ধনলোভীদের অর্থ ফুলে ফেঁপে উঠছে।