বিবাহ এমন একটি বন্ধন যা স্বামী ও স্ত্রীকে পরস্পরের সুরক্ষা, একসঙ্গে পথ চলা ও সন্তান প্রতিপালনের দায়িত্বে অঙ্গীকারবদ্ধ করে। একটা নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছে যুবক-যুবতি পরস্পরের সঙ্গে এই বন্ধনে যুক্ত হন। সব যুবকরাই বিয়ের আগে নিজের একটি পৃথক বাসস্থান তৈরি করতে সক্ষম হন না। ভারতে তাই মা-বাবার সঙ্গেই বেশিরভাগ সন্তান থাকেন। বিয়ের পর সেখানেই নববধূকেও নিয়ে আসা হয়। একসঙ্গে থাকার দরুন পারিবারিক বন্ধন গড়ে উঠবে এটাই প্রত্যাশিত এবং সদ্য ঘরে আসা বধূটিও শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করবে এটাই প্রত্যাশা থাকে সমাজের।
কিন্তু বিবাহের অন্যতম শর্ত কি হতে পারে, স্বামীর মা-বাবার দেখাশোনা করা? আজকাল তো একক কন্যা হওয়ার সুবাদে বধূটির মা-বাবারাও দাবি জানাচ্ছে জামাই যেন তাদের বৃদ্ধ বয়সে দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। কিন্তু বিয়ের শর্তে কি এই দায়িত্বও শামিল করা উচিত ?
কলকাতা হাইকোর্ট সম্প্রতি একটি রায়ে বলেছে পুত্রের নৈতিক কর্তব্য বাবা-মায়ের দেখাশোনা করা ও আশ্রয় দেওয়া। কর্তব্য পালনের পথে যদি তার স্ত্রী বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে স্বামীর পূর্ণ অধিকার রয়েছে স্ত্রীকে ডিভোর্স দেওয়ার। হাইকোর্টের জজ ভারতীয় সংস্কৃতির উদাহরণ টেনে এ-ও বলেছেন, বিয়ের পর প্রতিটি পুত্রবধূর কর্তব্য শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করা। না হলে সেটি বৈবাহিক অপরাধ ও বধূটির ক্রূরতা হিসাবে গণ্য হবে।
বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার স্ত্রী বা স্বামী উভয়েরই রয়েছে। দু'জনের মধ্যে কোনও কারণবশত যদি বনিবনা না হয়, তাহলে দেশের কোনও আইন, সমাজ, সংস্কার কখনওই স্বামী-স্ত্রীকে এক শয্যায় শোওয়ার জন্য বাধ্য করতে পারে না। একবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া মানেই সেই সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সঙ্গে সাতটি জন্ম অতিবাহিত করতে হবে এসব ভ্রান্তিমূলক ধারণা। সুতরাং মা-বাবারা তাদের দায়িত্ব যদি বলপূর্বক সন্তানের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন এবং তার জন্য তার বিবাহবিচ্ছেদ পর্যন্ত হওয়ার পরিস্থিতি হয়— তাহলে আদালতের প্রথম দিনের রায়েতেই এই ব্যবস্থা নাকচ হয়ে যাওয়া উচিত।