যৌবন এবং একাকীত্ব, শুনতে অদ্ভুত লাগতে পারে কিন্তু এটাই আজকের বাস্তব সত্য। এই নির্বিকার  Young Generation ভেতর থেকে কতটা নিঃসঙ্গ তা জানার জন্য আজকের কিছু তরুণদের সংস্পর্শে আসাটা একান্ত প্রয়োজন :

উদয়ের জন্ম একটি ছোটো শহরে, বেড়েও উঠেছেন সেখানেই, বয়ঃসন্ধির দ্বারপ্রান্তে পা রাখার সাথে সাথেই তিনি একটি বড়ো শহরে বসতি স্থাপনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। নিজের জন্য ভালো জীবনের স্বপ্ন দেখা কি ভুল? এই স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করা শুরু করলেন। চাকরি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মনে হল যেন একটা নতুন জীবনে তিনি প্রবেশ করেছেন। বড়ো শহরে চলে আসেন তিনি। নতুন চাকরি, নতুন শহর, প্রচুর মানুষের ভালোবাসা। নতুন বন্ধু তৈরি হয়, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তিনি উপলব্ধি করেন যে নতুন শহরের জাদু আর তাঁকে মুগ্ধ করছে না।

প্রিয়জনদের প্রতি ভালোবাসা আর অসচ্ছলতা তাঁর এই নতুন সুখকে হ্রাস করতে শুরু করে। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে তিনি একাকীত্ব কাটাতে বন্ধুদের কাছে ছুটে যেতেন। বন্ধুদের কাছে গিয়েও মানসিক শান্তি পেতেন না। মনে হওয়া শুরু হয় যে বন্ধুরাও তাকে এড়াতে চাইছে। এমনকি বন্ধুদের জমায়েতেও একটি অলিখিত প্ল্যাকার্ড ছিল যেখানে লেখা ছিল ‘যারা মদ্যপানে অনিচ্ছুক তাদের জন্য এটি কোনও পার্টি করার জায়গা নয়’। বাবা-মায়ের দেওয়া সংস্কার মদের মতো জিনিসকে স্পর্শ করতে দিত না। এই একাকীত্বে উদয় ধীরে ধীরে হতাশ হতে আরম্ভ করেন। কিছুদিনেই উদয় অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

বিষণ্ণতা একাকীত্ব সৃষ্টির কারণ

আমাদের আরেক বন্ধু মৈনাক। সে তার বাবা-মায়ের সাথে থাকে। একই শহরে চাকরি পেয়েছে। বাবা-মা খুব খুশি, কিন্তু মৈনাক সুখী হয়েও বিষণ্ণ যে, কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি। কোন স্বাধীনতা, কিসের স্বাধীনতা? উত্তরটি হ’ল আপনি যা চান তা করার স্বাধীনতা।

হ্যাঁ, অনেকেই বলবেন আজকাল কোন বাবা-মা সন্তানদের জীবনে হস্তক্ষেপ করেন! সব সংসারেই কিছু না কিছু সংস্কার থাকে যা বাড়ির ছোটোদের শৈশব থেকেই শেখানো হয়ে থাকে। বাবা-মা কিছু বলুক বা না বলুক, কিন্তু আমরা জানি তারা কী চান। সুতরাং, বন্ধুদের নিজের বাড়িতে ডাকলে খোলাখুলি কথা বলতে পারবেন না। বন্ধুরা যে-ধরনের খাবার বা পানীয় চাইবে সেটা বেশিরভাগ সময়ে বাড়িতে বয়স্ক মানুষ থাকায় খাওয়ানো সম্ভব হয়ে ওঠে না।

আবার আপনি যদি নিজে বন্ধুদের বাড়িতে যান, তবে পার্টির মাঝখানেই আপনাকে উঠতে হবে যে বাবা-মা অপেক্ষা করছেন বলে। বন্ধুদের মজা করাটা অভিভাবকদের থেকে একেবারেই ভিন্ন। মৈনাকের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই, প্রিয়জনদের মধ্যে থেকেও সে একা বোধ করে। এই একাকীত্বই এখন তার বিষণ্ণতার কারণ।

বাবা-মায়ের প্রিয় অবনী, যিনি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসতেন। পড়াশোনা শেষ করার আগেই একজন আইপিএস অফিসারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়ে যায়। তিনি নিজেও একজন আইপিএস অফিসারের মেয়ে ছিলেন। কিন্তু স্বামীর অত্যধিক রাগ এবং স্বামীর মর্যাদাবোধের কারণে আবনী স্বামীকে প্রথম থেকেই ভয় পেয়ে এসেছেন যার ফলে তাঁদের বিবাহিত জীবনে দূরত্ব তৈরি হয়েছে যেটা অবনীর স্বামীও দূর করার চেষ্টা করেননি।

অবনীর বাবা-মা এখন আপশোশ করছেন মেয়ের এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেওয়ার জন্য এবং অবনীও তার একাকীত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তার পড়াশোনা জারি রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সমস্ত দোষ এখন অবনীকেই দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু বিয়ের আগে অবনীর ইচ্ছা জানার প্রয়োজনীয়তা তার বাবা-মা কেন বুঝতে পারেননি?

দোষ কার ?

পিঙ্কি একজন প্রফেসরের মেয়ে, যে মডেলিং করতে ভালোবাসত। কিন্তু পড়াশোনার এই পরিবেশে তার ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা বোঝার জন্য পরিবারে কেউই ছিল না। কিন্তু পিঙ্কি আকাশ স্পর্শ করার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু সাহসের অভাব কোথায় ছিল, যে তার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল! সে সিদ্ধান্ত নিয়ে মুম্বাই চলে গেল। কিন্তু পরিবেশ তাকে এতটাই আঘাত করেছিল যে তাকে শেষমেশ কল গার্ল উপাধিতে ভূষিত হতে হয়েছিল।

তার বাবা-মা যদি তার স্বপ্নকে বোঝার চেষ্টা করতেন এবং তাকে সমর্থন করতেন, আজ হয়তো সে তার লক্ষ্যে পৌঁছোবার চেষ্টা করত এবং একদিন না একদিন ঠিক লক্ষ্যে পৌঁছেও যেত।

পিঙ্কির বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তই কি পিঙ্কির দুর্দশার একমাত্র কারণ? হ্যাঁ, কিছুটা হলেও হয়তো তাই, কিন্তু কেন সে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল? আমাদের সমাজের উচিত এর উত্তর দেওয়া। আমাদের সমাজ কতদিন আর যুবতি মেয়েদের তার পছন্দের কাজ করা থেকে বিরত রাখবে এবং যদি তা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে অনেক সময় ফলাফল এরকম বা আরও খারাপ হবে।

এমন পরিস্থিতিতে সব কিছুতে Young Generation-কে দোষারোপ করা বন্ধ করা দরকার। সমাজেরও উচিত তরুণদের মনের দিকে নজর দেওয়া এবং দেখা যে, তাদেরও স্বপ্ন আছে, তারাও ইচ্ছা অনুযায়ী কিছু করতে চায় এবং সেগুলি অর্জন করতে তারা যে-কোনও কিছু করতে পিছপা নয়।

স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার স্বাধীনতা

আজকের যুবসমাজের প্রশ্ন, সমাজ আর কতদিন সম্মানের নামে তরুণদের মনের কথা বলার অধিকার কেড়ে নেবে? বাবা-মা কখন তাদের বাচ্চাদের সাথে বড়োদের মতো কথা বলতে এবং আচরণ করতে শিখবেন? ছোটো বাচ্চাদেরও অভিভাবকদের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক পিতামাতার মতো আচরণ করতে শেখাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।

একাকীত্বে ভোগা হতাশাগ্রস্ত তরুণদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা বারবার আধুনিক সমাজ কে সতর্ক করছে তাদের যৌবন বাঁচাতে, তাদের একাকীত্ব থেকে বের করে আনতে, আর এর জন্য পিতামাতাকে অবশ্যই তাদের নিজস্ব বন্ধু হতে হবে এবং তারা যা চায় তা বলার এবং করার স্বাধীনতা দিতে হবে। যুবসমাজের সুখের জন্য সমাজের একবার চেষ্টা করা উচিত। যুবসমাজ আজ একটাই কথা বলতে চায়, ‘আমাদের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার স্বাধীনতা দিন এবং আমাদের সমর্থন করুন যাতে আমরা আমাদের হতাশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি।’

 

 

 

 

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...