শীত মানেই নলেন গুড়ের সন্দেশ, টাটকা খেজুর রস আর কমলালেবুর মিষ্টি স্বাদ। কিন্তু শীতের সাইড এফেক্ট হিসেবে এড়ানো যায় না, ফাটা ঠোঁট, শুষ্ক ত্বক, রুক্ষ চুল আর ফাটা গোড়ালি। সমস্যাগুলো জটিল নয় কিন্তু পরিত্রাণ পেতে কিছু আগাম সতর্কতা আর যত্নের প্রয়োজন। সঠিক ভাবে যত্ন নিলে ত্বক ও চুলের সমস্যায় নাজেহাল হতে হবে না শীতকালভর। জেনে নিন উপায়।

ত্বকের হাল ফেরাতে

শীতকাল মানেই রুক্ষ ত্বকের সঙ্গে মোকাবিলা করা। বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায়, তার প্রভাবে ত্বক হয়ে পড়ে রুক্ষ। তাই এই সময়ে ত্বকের আর্দ্রভাব বজায় রাখতে বিশেষ নজর দিন।

  • শীতের এই সময়টা জুড়ে ক্রিম বেসড ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত ফেনা হয় এমন ফেসওয়াশ এড়িয়ে চলুন, এতে কম জল ঘাঁটতে হবে। গরমকালের মতো এই সময় ঘামে ধুলো আটকে যায় না। তাই জেন্টল ফেসওয়াশই যথেষ্ট। প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে মশ্চোরাইজিং টোনার লাগিয়ে নিন।
  • দু’সপ্তাহে একবার স্ক্রাব ব্যবহার করা একান্ত জরুরি। যারা অতিরিক্ত বাইরে ঘোরেন, তাদের অবশ্য প্রতি সপ্তাহান্তে স্ক্রাব ব্যবহার করা উচিত। কোনও জেন্টল ফেসস্ক্রাব ব্যবহার করুন অথবা আপনার রেগুলার স্ক্রাবটির সঙ্গে গ্লিসারিন মিশিয়ে ব্যবহার করুন।
  • সপ্তাহে একদিন করে ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন। বাড়িতেই তৈরি করতে পারেন এটা। ১ চা চামচ মধু, ১ চা চামচ টকদই, ১/২ চা চামচ আমন্ড অয়েল আর ১ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে। ১৫ মিনিট এই প্যাক মুখে লাগিয়ে রেখে, ধুয়ে ফেলুন।
  • শুষ্ক ত্বক হলে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং ছাড়াও, রাতে শুতে যাওয়ার আগে মুখে দুধের সর লাগাতে পারেন। শুকিয়ে গেলে ঈষদুষ্ণ গরম জলে মুখ ধুয়ে, তারপর নাইট ক্রিম ব্যবহার করুন।
  • সপ্তাহে একদিন একটা ময়েশ্চারাইজিং ফেসমাস্ক ব্যবহার করুন। অর্ধেক পাকা কলার সঙ্গে মেশান ১ চা চামচ মধু এবং ১ চা চামচ অলিভ অয়েল। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। স্নানের পর মুখে হাতে পায়ে, গ্লিসারিন জলে গুলে লাগিয়ে নিন।
  • এ সময় ঠোঁট ফাটার প্রবণতা বেশি। তাই লিপ বাম ব্যবহার করতে ভুলবেন না। গোলাপের পাপড়ি, গ্লিসারিন, দুধের সর এবং আমন্ড একসঙ্গে মিশিয়ে বেটে নিন। এটা লিপ বামের বিকল্প। এতে ঠোঁটে রুক্ষ ভাব আসবে না, ঠোঁট কোমল থাকবে।
  • বাড়িতে একটা লিপ স্ক্রাব নিজেই তৈরি করতে পারেন। এর জন্য প্রয়োজন দারচিনি, অলিভ অয়েল এবং চিনি। সবগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে বেটে নিন। সার্কুলার মোশনে ঠোঁট মাসাজ করুন এই স্ক্রাব দিয়ে। এরপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • শীতেও চাই সানস্ক্রিন। বাইরে বেরনোর আগে অন্তত ৪০ এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করুন ত্বককে ট্যানিং-এর হাত থেকে সুরক্ষিত রাখতে।

শরীরের যত্ন নিতে

সারা গায়ের পরিচর্যা প্রয়োজন। আমরা এটা অনেকেই অবহেলা করি, শুধু মুখটুকুর যত্ন নিই।

  • সপ্তাহে একদিন অন্তত লুফা ও মাইল্ড বডিওয়াশ দিয়ে ভালো ভাবে ত্বক ঘষে ঘষে পরিষ্কার করুন। এতে ত্বকের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে, ত্বক হবে কোমল।
  • শীতের বডি ওয়াশ কিন্তু ক্রিম বেসড হওয়াই বাঞ্ছনীয়। মধু, অ্যাভোকাডো, তেল জাতীয় জিনিসে সমৃদ্ধ বডি ওয়াশই আদর্শ।
  • ত্বকের আর্দ্রভাব যাতে শরীরে বজায় থাকে, তাই বডি বাটার ব্যবহার করুন। এ সময় শুধু ময়েশ্চরাইজারই যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে যাদের অনেকক্ষণ কর্মক্ষেত্রে থাকতে হয়। তাই শিয়াবাটার বেসড ক্রিম ব্যবহার করুন। স্নানের আগে অবশ্যই বডি অয়েল ইউজ করবেন।
  • যাদের গোড়ালি ফাটার প্রবণতা আছে, তারা স্নানের আগে মিনারেল সল্টযুক্ত ঈষদুষ্ণ জলে পা ডুবিয়ে রাখুন। তারপর পিউমিস স্টোন দিয়ে ঘষে ঘষে পায়ের ফাঁটা অংশের যত্ন নিন। দুধের সর, অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল আর পাকা কলা দিয়ে একটা ফুট ক্রিম প্যাক তৈরি করুন। এতে পা নরম থাকবে, গোড়ালি ফাটা বন্ধ হবে। রাতে অবশ্যই পায়ে পেট্রোলিয়াম জেলি মাখিয়ে শুতে যান। বেশির ভাগ সময়ই মোজা পরে থাকুন ।

চুলের রুক্ষতা কমাতে

শীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় চুল। তাই এসময় বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।

Winter Hair care tips

  • সপ্তাহে দু’বার শ্যাম্পু করুন এবং কন্ডিশনার ছাড়াও হেয়ার সিরাম ব্যবহার করুন। চুল শ্যাম্পু করলেই, অবশ্যই কন্ডিশনিং ক্রিম ব্যবহার করবেন।
  • চুলের গোড়া ও স্ক্যাল্প যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখুন যাতে খুশকির সমস্যা এড়ানো যায়। হেয়ার স্টইলিং প্রোডাক্ট যতটা পারেন এড়িয়ে চলুন শীতকালে। পরের দিন শ্যাম্পু করার প্ল্যান থাকলে অবশ্যই রাতে হট অয়েল মাসাজ করুন চুলে। শীতে চাইলে প্রতিদিনই অল্প পরিমাণে ননস্টিকি হেয়ার অয়েল ব্যবহার করতে পারেন চুলের রুক্ষতা কমাতে।
  • মাসে একটা হেয়ার স্পা করান। ভালো হয় যদি এই সময় চুলটা ট্রিম করে একটু ম্যানেজেবল করে নেন। এতে চুলের ডগাও ফাটবে না।
  • চুলে প্রোটিন প্যাক ব্যবহার করলে বিশেষ উপকার পাবেন। ডিম, কলা, মধু, অ্যালোভেরা জেল ও অলিভ অয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে বাড়িতেই তৈরি করে নিন চুলের প্রোটিন প্যাক। এক ঘন্টা রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন। উইক এন্ডস-এ চুলের ডগায় এবং স্ক্যাল্পে অ্যালোভেরা জেল মাসাজ করুন। শীতে নিজের যত্ন নিতে ভিটামিন সি-যুক্ত ফল খান। টাটকা কমলা লেবুর রস বিশেষ ভাবে সাহায্য করে স্কিন ভালো রাখতে। এর খোসাও দুধের সরের সঙ্গে বেটে, ত্বকে লাগাতে পারেন। ভিটামিন ই ক্যাপসুল ক্রিমের সঙ্গে মিশিয়ে সারা শরীরে মাসাজ করলেও ত্বকের রুক্ষভাব কমবে, ত্বক কোমল হয়ে উঠবে।
আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...