প্রঃ আমার টিনএজার মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি৷ সে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী৷ বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তনগুলো ওর মধ্যে বেশ স্পষ্ট ভাবে দেখতে পাচ্ছি৷ আমার সঙ্গে আপাত ভাবে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করলেও, বুঝতে পারি যে অনেক কথাই ও আমায় গোপন করা শুরু করেছে৷মনে হচ্ছে ওর কোনও একজন সহপাঠীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে৷ ছেলেটিকে আমি চিনি৷ কী করা উচিত বুঝতে পারছি না৷ এত অল্প বয়সে প্রেম করলে পড়াশোনা শিকেয় উঠবে, সেটা ভেবে আমি শঙ্কিত৷ কী করি বলে দিন৷

উঃ দিনবদলের সঙ্গে বদলে গেছে টিন-এজারদের চরিত্রও। এখন লোকজন কী বলবে তা নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামায় না তারা। প্রায় সবার হাতে আছে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেটে অবাধ প্রবেশ। এসবের হাত ধরে পাল্টেছে টিন-এজ প্রেম। এখনকার টিন-এজারদের মধ্যে সব সময় একটি অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে; যা অনেক সময়  মা-বাবাদের চিন্তায় ফেলে দেয়৷ এসব বিষয়ের সাবধানে মোকাবিলা করতে হবে।

আপনার মেয়ে কোনও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে এটা আন্দাজ করছেন আপনি কিন্তু এখনও হাতে নাতে কোনও প্রমাণ পাননি৷ তাই প্রথমেই রেগে যাবেন না। বয়ঃসন্ধির সময় ছেলেমেয়েদের শরীর ও মনের নানা পরিবর্তন আসে, সে জন্য বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করা খুবই স্বাভাবিক। এতে বিস্মিত হওয়া বা হতাশ হওয়ার কিছু নেই। মেয়ের কাছে গল্পচ্ছলে তার ওই বিশেষ বন্ধুর প্রতি ঠিক কী ফিলিংস, সেটা জানার চেষ্টা করুন৷যতটা সম্ভব স্বাভাবিক ভাবে জেনে নিন তার ওর প্রতি বিশেষ টান বা আগ্রহ আছে কি না৷আপনার কথাবার্তায় যেন সে বুঝতে না পারে আপনি তাকে চাপ দিচ্ছেন বা সে অন্যায় কিছু করছে।

এরপর একদিন সময় মতো আপনি মেয়ের সেই বন্ধুটি-সহ অন্য বন্ধু-বান্ধবদের আপনার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করুন। সবার সঙ্গে অবশ্যই স্বাভাবিক এবং স্নেহসুলভ ব্যবহার করবেন। তবে  এই ছেলেটির সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলুন। জেনে নেন তার পড়াশোনা, পরিবার সম্পর্কে। তাহলে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন মানুষ হিসেবে সে কেমন।মেয়েকে সেই বুঝে ছেলেটির সঙ্গে মিশতে দেবেন কিনা, এবার আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধে হবে৷

ভুলবেন না, আপনার মেয়ে ও তার বিশেষ বন্ধু কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক। তাই এখনই তাদের কাছ থেকে ভবিষ্যৎ জীবনের কোনও কমিটমেন্ট আশা করবেন না। তাদের বন্ধুর মতোই থাকতে দিন। বড়ো হওয়ার পরেও যদি এই সম্পর্ক থেকে যায়, তার থেকে ভালো কিছুই আর হতে পারে না। তাই এখন থেকেই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ওদের স্বাভাবিক বন্ধুত্বে কোনও ভাবেই বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না।

বাড়ির বেসিক ডিসিপ্লিনের ব্যাপারে কমপ্রোমাইজ করবেন না। নির্দিষ্ট সময়ে মেয়ের বাড়ি ফেরা, দেরি হলে ফোন করে জানিয়ে দেওয়া, না জানিয়ে কোথাও চলে যাওয়া, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথা বলা বা কম্পিউটারে চ্যাট করা এসব পরোক্ষ ভাবে আপনার মেয়ের ক্ষতি করতে পারে। তাই চেষ্টা করুন নিজের হাতে এসব নিয়ন্ত্রণ করতে।

যদি দেখেন আপনার মেয়ে তার সম্পর্কটা ঠিকমতো হ্যান্ডেল করতে পারছে না বা ওর ব্যক্তিগত জীবন এতে প্রভাবিত হচ্ছে, পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে, তাহলে প্রথমেই তাকে বকাঝকা করবেন না। ওকে বন্ধুর মতো করে বোঝানোর চেষ্টা করুন। আপনার সন্তানকে সময় দিন। নিজের যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন, নিয়মিত ওর স্কুল, টিউশন সবকিছু সম্পর্কে খোঁজখবর রাখুন। চেষ্টা করুন ওর বন্ধু হয়ে ভরসার মানুষ হয়ে ওঠার, যাতে ও আপনার কাছে কিছু লুকিয়ে না রাখে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...