দুপুরে পৌঁছে গামশালির স্বর্গীয় মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম। অমৃত গঙ্গা এখানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ধৌলিগঙ্গার বুকে। বুক পর্যন্ত সবুজ, মাথায় ধূসর পাহাড়গুলি নিঃশ্বাস ফেলছে ঘাড়ের উপর। ঠান্ডা হাওয়া দুপুরবেলার উষ্ণতা নিয়ে বয়ে চলেছে উপত্যকা জুড়ে। দূরে পাহাড়ের নীচে অযত্নে লালিত সবুজ-লাল ঘাসের গালিচা। তার মধ্যে ছোট্ট শিব মন্দির, নীচে মাথা দোলানো সূর্যমুখী। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা জলধারা পথঘাটের মলিনতা ধুইয়ে নেমে যাচ্ছে অমৃত গঙ্গার বুকে।

এখানে এসে কেন জানি না আমার মনে হল— সরকারি সহায়তায় এই অঞ্চলের ইকো টুরিজম গড়ে তুলতে পারলে খুব ভালো হতো। যাদের সুইজারল্যান্ড বেড়াতে যাওয়ার সামর্থ্য নেই, তাদের সেই অভাব পূরণ হতো! সেই সঙ্গে উন্নয়ন হবে স্থানীয় মানুষদেরও।

কখন যাবেন: বর্ষায় ফুলে ফুলে রঙিন হয়ে ওঠে, পরিপুষ্ট হয় ঝরনা কিন্তু উত্তরাখণ্ডের ধ্বসপ্রবণ পথ বর্ষায় বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এপ্রিল মাস থেকে অক্টোবর এই পথ খোলা থাকে। মে, জুন মাসে গেলে বরফের দেখা মিলবে। সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাসে এই উপত্যকা অপরূপ হয়ে ওঠে।

কীভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে কুম্ভ বা দুন এক্সপ্রেসে হরিদ্বার। এছাড়া কলকাতা বা হাওড়া থেকে নিউ দিল্লি ট্রেনে। দিল্লি থেকে ট্রেনে বা বাসে সহজেই হরিদ্বার বা দেরাদুন। দেরাদুন বা হরিদ্বার থেকে বাসে, শেয়ার গাড়িতে যোশিমঠ ১০ ঘণ্টায় পৌঁছে যাওয়া যায়। ব্যক্তিগত গাড়িতেও দ্রুত যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে পথের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলি উপভোগ করতে পারবেন। যোশিমঠ থেকে বদ্রিনাথ মাত্র ৪১ কিমি৷ অসংখ্য বাস ও শেয়ার গাড়ি চলে।

কোথায় থাকবেন: হরিদ্বার, হৃষিকেশ, দেরাদুন ও যোশিমঠে নানা বাজেটের অসংখ্য হোটেল, আশ্রম, ধর্মশালা এবং গেস্ট হাউস রয়েছে। পকেট পারমিট করলে গাড়োয়াল মণ্ডল বিকাশ নিগমের সরকারি গেস্ট হাউসও ট্রাই করতে পারেন।

গাড়ি : দেরাদুন বা হরিদ্বার থেকে যোশিমঠ প্রাইভেট গাড়ি টাটা সুমো, স্করপিও ভাড়া সিজন অনুসারে আট থেকে দশ হাজার টাকা। বাস ভাড়া ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। ভোর ৩:১৫ মিনিট থেকে সকাল ৭:৪৫ মিনিট পর্যন্ত বাস ছাড়ে। এছাড়া হৃষিকেশ থেকেও প্রচুর বাস ছাড়ে। নটরাজ চক থেকে শেয়ার গাড়ি পাওয়া যায়। যোশিমঠ থেকে মালারি পর্যন্ত নিয়মিত সারাদিন শেয়ার গাড়ি চলে। মালারির আগে যেতে গাড়ি ভাড়া করতে হবে। সারাদিনের জন্য বড়ো গাড়ি পাঁচ-সাড়ে ৫ হাজার টাকা নেবে। রাত্রে থাকলে দুদিনের জন্য খরচ তুলনামুলক একটু কম হয়।

পারমিট: দিনে দিনে ঘুরে এলে মালারিতে পরিচয় জমা দিয়ে পারমিশন দেয়। রাতে থাকলে যোশিমঠের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট অফিস, আইটিবিপি ও ফরেস্ট অফিস থেকে পারমিশন নিতে হবে।

টেন্ট ও পারমিশন করাতে : নন্দাদেবী ট্রেক অ্যান্ড টুর – ০৯৮৩৭৯৩৭৯৪৮ নিজেরাই পারমিশন করতে পারবেন। টেন্ট ও অন্যান্য সাহায্যের জন্য এদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

খরচ:  নির্ভর করবে আপনার উপর, কেমন হোটেল ও পরিবহণ ব্যবহার করবেন। গ্রুপে এলে খরচ কম। তবে সবমিলিয়ে ১০ থেকে ২৫ হাজার টাকা মাথাপিছু ব্যয় ধরে চলতে হবে।

(সমাপ্ত)

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...