ইন্দ্র নীচু স্বরে জিজ্ঞেস করল, ‘বড়োটার সঙ্গে তোর আছে নাকি?’

—না মানে আমাকে লাইক করে। দ্যাখে ট্যাখে।

বাসস্থান অল্পদিনের হলে বেড়াতে এসেছে মনে হয়। ইন্দ্রর মনের অনুভূতিগুলি সেরকম এখন। তাই দুর্গাপুজোয় পাড়ার মেয়েগুলোকে জ্যান্ত দুর্গা মনে হয়। স্টুডেন্ট লাইফে বন্ধুরা মিলে কলকাতার অন্য জায়গায় ঠাকুর দেখতে যেত দল বেঁধে যেমন— কলেজ স্কোয়ার, মহম্মদ আলি পার্ক আরও কত জায়গায়। বেলুড়ে থাকতে মঠের পুজো ছেড়ে দু’বছর হোস্টেলের বন্ধুদের সাথে গেছিল। সারারাত ঘোরা খাওয়ার আনন্দই আলাদা।

সপ্তমীর সকালবেলায় ঈপ্সিতাকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখেছে। হাসি হাসি মুখে ইন্দ্রর দিকে একবার তাকাল প্যান্ডেলের মধ্যে। ব্যাপারটা বোঝার আগেই ইন্দ্র ধরে নিয়েছিল মেয়েটা তাকে চাইছে। এখনকার প্রেম করার থিওরি বেশ আলাদা। ইন্দ্ররই অভ্যাস নেই। তাছাড়া মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা বোধ করে। প্যান্ডেলে যতক্ষণ ইন্দ্র ছিল মেয়েটা ছিল একটু দূরে দূরে। হঠাৎ দেখে, নেই! ইন্দ্র বাড়ি যাবার জন্য উঠতেই একজন বলে উঠল— ‘ও আবার আসবে।’ যে বলল কথাটা তাকে মেয়েটার সঙ্গে দেখেছে। এ পাড়ারই অন্য একটা মেয়ে।

প্যান্ডেল ছেড়ে ভাইয়ের বন্ধু গোরাদের বাড়ি ক্যারাম খেলতে গেছে ইন্দ্র। হঠাৎ দেখে মেয়েটা একটা বন্ধুকে নিয়ে এই দিকেই আসছে। নির্মাল্যকে ইন্দ্রদের পাড়ায় বারোয়ারিতে অষ্টমীতে বেশ ভালো ভাবে পাওয়া গেল। লেখাপড়ায় ভালো হলেও নির্মাল্য বেশ পাকাই। নির্মাল্যকে, ইন্দ্র কমলবাবুর মেয়ের ব্যাপারটা বলাতে ও

প্রেম-পরিণতির ব্যাপারে কমলবাবুর মেয়েই কেন জানতে চাওয়ায় ইন্দ্ৰ বলল, “বিএসসি-র রেজাল্ট তো খারাপ হলই!”

নির্মাল্যর সঙ্গে একসঙ্গে সমান তালে পড়লেও এখন নির্মাল্যের কেরিয়ারের চাবুকেই তার পরিণতি, প্রেম সব আছে। হয়তো সে ভালো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করবে কয়েক বছর বাদেই। কোনও রূপসি রাজকন্যার গলাতে বরমাল্যও পড়াবে। বিয়ের বাজারে ইঞ্জিনিয়র, ডাক্তারদের যেমন অগ্রাধিকার থাকে! কোনও রূপসি হয়তো নির্মাল্যর জন্য এখন থেকেই ওত পেতে আছে। এদিকে ইন্দ্রর সেইসব স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় কমলবাবুর মেয়ে ইন্দ্রর প্রেমে পড়তে চাইছে! কমলবাবু ইউনিভার্সিটির ডিন। এমএসসি কোথাও পেল না। তবে নির্মাল্য প্রযুক্তিবিদ্যার ছাত্র, পড়াশোনা করে নিজের কেরিয়ার প্রায় গুছিয়ে এনেছে।

বন্ধু ইন্দ্রের পরিণতি নিজের মনের মতো ভাবলেও বাঁকা কথাবার্তায় জিজ্ঞেস করল, “কমলবাবুই যদি তোর পছন্দ হয় তবে বড়ো মেয়েটাকে দ্যাখ। এই মেয়েটাই চায় মনে হয়। আসলে টিনএজারদের প্রেম করা সহজ, এদের ভবিষ্যৎ চিন্তা থাকে না।’ এ অবস্থায় এই কথাটায় অ্যাসিড ছিল তা ইন্দ্ৰ বুঝল। ভবিষ্যৎ টবিষ্যৎ নিয়ে ইন্দ্রর চিন্তা করতে ভালো লাগে না এখন। তবে সে-ও বোঝে নিছক রূপের দৌলতেই তার এই প্রেমের সুযোগ।

যাইহোক অষ্টমীর রাতেরবেলায় ঠাকুর দেখতে দেখতে ইন্দ্র আর নির্মাল্য অন্য একটা প্যান্ডেলে মেয়েটাকে দেখে বন্ধুদের সঙ্গে। নির্মাল্যের প্রেরণায় ইন্দ্র হঠাৎ মেয়েটাকে আচমকা ডেকে বলে, ‘এরা আবার কেন? তুমি কি কিছু বলবে?” মেয়েটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। ইন্দ্ৰ ভেবেছিল সব ঠিকই আছে শুধু একবার কথা বলা, জীবনে এ ব্যাপারে প্রথম কথা বলা ৷

মেয়েটা চমকে উঠে বলল, ‘কই কিছু না তো৷’

ইন্দ্র অপ্রস্তুত হয়ে বলল, “অনেকদিন থেকেই দেখছি কিছু বলার চেষ্টা করছ তুমি।”

মেয়েটা আবার বলল, ‘কই কিছু না তো।’ তারপর নেহাতই আটপৌরে হয়ে, ‘তুমি কেকার দাদা তো?” বলে রেগে চলে গেল।

কেকা ইন্দ্রর বোন। একই স্কুলে পড়ে হয়তো। ইন্দ্র কোনওদিন কেকার সঙ্গে দেখেনি। ফিরে আসতে ইন্দ্র নির্মাল্যকে বলল, ‘তাহলে তোর অনুমান ঠিক নয়।’

তবু ইন্দ্ৰ আশা ছাড়ল না। ভাবল বোনের নাম করেছে, হয়তো তার মাধ্যমে প্রেম করতে চায়। নিভৃতে বোনকে জানাতে বোন কেকা শুনেছিল, সেদিন নাকি ঈঙ্গিতা ইন্দ্রকে চড় মেরে দিত! ছেলেটাকে ভালো মনে হয়েছিল বলে রসিকতা করেছিল। ব্যাপারটা ইন্দ্রের মনে হয়েছিল সুযোগ পেয়েও, আনাড়িপনার জন্য তার প্রেম হয়নি! এ ব্যাপারে বন্ধুদের বিশ্বাস করা ঠিক হয়নি।

(ক্রমশ…)

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...