মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই পরিবর্তন চায়। জীবনে যখন একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে বা একঘেয়েমি থাকে, তখন তা জীবনে ছন্দপতন ঘটায়। এই একঘেয়েমি প্রতিটি মানুষই কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। এজন্য নতুন নতুন সমাধান খোঁজে। সেটা খাদ্য বা জীবিকা যে-কোনও বিষয়ই হোক না কেন। মানুষ সবসময় পরিবর্তন চায়।

এটি একটি গুরুতর বিষয় এবং এর একটি মনস্তাত্ত্বিক দিক রয়েছে। পুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কল্পেশ দেশাই-এর মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, মানুষের মস্তিষ্কে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে দুটি গ্রন্থি রয়েছে। এই উভয় গ্রন্থি ২৪ ঘন্টা সক্রিয় থাকে। এমনকী আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি তখনও পরোক্ষ মস্তিষ্ক সজাগ থাকে এবং দিবাস্বপ্ন রূপে মনের অসম্পূর্ণ আকাঙ্ক্ষাগুলি পূরণ করতে থাকে। এই লুকানো আকাঙ্ক্ষাগুলির মধ্যে একটি হল যৌন কল্পনা বা সেক্স ফ্যান্টাসি।

অধ্যাপক দেশাই এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন, ‘এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত দম্পতিরা তাদের মনের মধ্যে যে কাউকে কল্পনা করতে পারেন। সেটা তাদের ক্রাশ বা কলেজের পছন্দ কেউ হতে পারে, আবার লোকালয় বা বাড়ির আশেপাশের যে কোনও ছেলে বা মেয়েও হতে পারে। এটা অবশ্যই আপনি যাকে পছন্দ করেন। তারা এটিকে তাদের কল্পনার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়। হয়তো এটি তাদের যৌন জীবনে একটি নতুন রোমাঞ্চ নিয়ে আসে ঠিকই কিন্তু এটা মানসিক ভাবে ভুল। আপনি যার কথা ভাবছেন তার ব্যক্তিত্বকে আপনি অন্য রূপে কল্পনা করছেন। এর ফলে কল্পনার মানুষটির আসল ব্যক্তিত্বকে আপনি জেনেশুনে হত্যা করছেন। এটা তার আত্মসম্মানে আঘাত করা হল। অজান্তেই তাকে অপমান করা হচ্ছে। সেক্সোলজিস্টরা এটিকে ওষুধ হিসাবে বিবেচনা করতে পারেন তবে মনোবিজ্ঞানীরা কখনওই এটির পরামর্শ দেন না।’

অধ্যাপক কল্পেশ দেশাই-র এই বিশ্লেষণ গৌরবকে দ্বিধায় ফেলে দিলে, তিনি বিষয়টি সমাধানের জন্য মুম্বাইয়ের শহরতলি মালাডের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অঞ্জলি মালভাঙ্করের সাথে দেখা করেন। তিনি গৌরবকে বলেন, ‘যৌন প্রক্রিয়ায় শরীর এবং মন দুই-ই সমান ভাবে ইনভলভড। এই পুরো প্রক্রিয়ায় প্রায় ২০০ ক্যালোরি বার্ন হয়। সহজ কথায় বলতে গেলে, এই পুরো প্রক্রিয়াটি মস্তিষ্ক এবং প্রজনন অঙ্গগুলির মধ্যে একটি সম্পর্ক গড়ে তোলে। মস্তিষ্ক অনেকগুলি হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রধানত ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন এবং টেস্টোস্টেরন। এই লুব্রিকেন্টগুলি কেবল তখনই উৎসারিত হয় যখন আমরা স্বাস্থ্যকর ফোরপ্লে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাই। এর মানে হল যে ফোরপ্লে, মেডিকেল দৃষ্টিকোণ থেকেও যৌন প্রক্রিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর যদি ফোরপ্লে-র জন্য সেক্স ফ্যান্টাসি অবলম্বন করতে হয় তবে তাতে কিছু ভুল নেই।”

খোলাখুলি কথা বলুন

ডা. অঞ্জলি আরও বলেন, “আমাদের ৯০ শতাংশ মহিলা যৌনতা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী কিন্তু তারা এটি সম্পর্কে কথা বলতে লজ্জা পান। তবে এই মহিলারা গুগলে যৌনতা সম্পর্কে সর্বাধিক অনুসন্ধান করেন। তারা যৌনতা জড়িত নানা প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন। একটি সমীক্ষা অনুসারে, ৮০ শতাংশ মেয়েরা যৌনতা এবং অর্গ্যাজম সম্পর্কে অনুসন্ধান করেন, যেখানে মাত্র ৫৫ শতাংশ পুরুষ এই বিষয়গুলিতে অনুসন্ধান করেন। পুরুষরা সেক্স ফ্যান্টাসি সম্পর্কে জানতে অনেক বেশি উৎসুক মহিলাদের থেকে। এটি সম্পর্কে জানার আগ্রহ মহিলাদের মধ্যে প্রায় নেই বললেই চলে। যদিও মহিলাদের এই বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা উচিত এবং ডাক্তারদের পরামর্শ নেওয়া উচিত কারণ ভুল চিকিৎসা বা ভুল ওষুধও ক্ষতির কারণ হতে পারে।’

যৌন কল্পনার সংবেদনশীল দিকটি বিবেচনা করলে, এটি সত্য যে, আশা এবং আকাঙ্ক্ষার কোনও শেষ নেই। এটি এমন একটি আকাঙ্ক্ষা যা একজন ব্যক্তি সর্বদা কামনা করে এবং শেষ পর্যন্ত তার মরীচিকায় পথভ্রষ্ট হয় সে। অতএব, এই মরীচিকার পিছনে দৌড়ানোর পরিবর্তে, এর বিকল্প খুঁজে বের করাই ভালো। আমাদের প্রাকৃতিক যৌনপ্রবৃত্তি এবং সঠিক বিকল্প অর্থাৎ ফোরপ্লে-তেই ফিরে যাওয়াই সঠিক পন্থা।

সেক্স ফ্যান্টাসির কথা বলতে গেলে বলতে হয়, এটি যদি সেক্স প্রসেসে একঘেয়েমি দূর করে, তাহলে এর আশ্রয় নেওয়ায় কোনও ক্ষতি নেই। তবে মনে রাখতে হবে যে— সেক্স ফ্যান্টাসি, সমস্ত বিকল্পগুলির মধ্যে একেবারে শেষে থাকাই বাঞ্ছনীয়। যৌনক্রীড়ার একটি চূড়ান্ত সমাপ্তি হওয়া উচিত শারীরিক পরিতৃপ্তির কারণেই। আমরা সুখী যৌন জীবনের জন্য আকাঙ্ক্ষা যদি রাখি তাহলে মনে রাখতে হবে, এই সুখের ভল্টটি কেবল সন্তুষ্টির চাবিকাঠি দিয়েই খোলে, অন্য আর কিছু দিয়ে নয়।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...