ভারতীয় সমাজে যুগ যুগ ধরে পারম্পরিক বিবাহের সঙ্গে যেসব সামাজিক ও ধর্মীয় রীতি রেওয়াজ যুক্ত হয়ে আছে, সেখানে সমলিঙ্গের দুটি মানুষ বিবাহ করবেন এটা রক্ষণশীলরা মেনে নিতেই নারাজ। অথচ পৃথিবীর বহু দেশই এ বিষয়ে ছাড়পত্র দিয়েছে এবং আইন কানুনেও একই ভাবে তাদের অন্তর্ভুক্তি হয়েছে।
আমাদের সমস্ত সামাজিক ক্রিয়াকলাপ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে বাঁধা। বিবাহ, সন্তানের জন্ম, নামকরণ, পৈতে, হাতেখড়ি থেকে গাড়ি, বাড়ি কেনা— সবই পুজোপাঠ, দক্ষিণা ও ধর্মীয় আচারের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সমকামী বিবাহের ঘটনা যেহেতু হাতে গোনা, তাই পাণ্ডা-পুরোহিতরা এক্ষেত্রে বারবার টাকা রোজগারের উপায় বের করতে পারবেন না। সেই কারণেই তাদের ‘সেম সেক্স ম্যারেজ’-এর এতটা বিরুদ্ধাচরণ।
সমলিঙ্গের মধ্যে বিবাহ হলেও এর কিছু আইনি নিরাপত্তার বা নিশ্চয়তার প্রয়োজন হয়। সাধারণ দম্পতিদের মধ্যে যেমন সম্পত্তি বন্টন বা অন্যান্য বিষয়ে আইনি বলয় কার্যকরী হয়, সমকামীদের বিবাহিত জুটি তা থেকে বঞ্চিত। সাধারণ দম্পতিদের সন্তানরাও সহজেই বাবার পদবী গ্রহণ করতে পারেন এবং দম্পতি যে-কোনও আইনি বিষয়ে পরস্পরের প্রতিনিধিত্বও করতে পারেন।
লিভ ইন সম্পর্কে থাকা দম্পতিদেরও একই সমস্যায় পড়তে হয় সমকামী জুটির মতো। অর্থাৎ স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির আইনি হকদার পরস্পরের ক্ষেত্রে তারা হতে পারেন না। পরস্পরের ‘বন্ধু’ পরিচয়েই সমাজ ও আদালত তাদের স্বীকৃতি দেয় বাস্তবিক ক্ষেত্রে।
স্বামী মারা যাওয়ার পর তাঁর পেনশন বা স্বামীর প্রাপ্য বাড়িভাড়া বিনা ক্লেশেই তাঁর বিধবা স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু বহু কনট্র্যাক্ট বা আইনি কাগজে লিগাল এরর হিসাবে সঙ্গীর নাম নথিভুক্ত করতে পারেন না সমকামীরা।
সমাজকে বুঝতে হবে, দু’জন সমলিঙ্গের মানুষের মধ্যে বিবাহ হলে আকাশ ভেঙে পড়বে না। এটা খুব স্বাভাবিক একটি মানব প্রকৃতির বিষয়। সমলৈঙ্গিক মানুষরা পরস্পরকে ভালোবাসতেই পারেন। চার্চ এই ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করলেও, বাস্তব থেকে আমাদের মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া উচিত নয়। জাতিধর্ম নির্বিশেষে দুটি মানুষের মধ্যে প্রকৃতিগত ভাবে যদি সম্পর্ক তৈরি হয়, তা নিয়ে ধর্মের রক্ষণশীল পাণ্ডাদের কিছু বলার থাকতে পারে না। এই যুগলরা যদি আইনি সুরক্ষা বলয় চান, তাতে দোষের কী আছে!
তবে আইনের তো ফস্কা গেরো আছেই। এই সমকামী দম্পতিরা হয়তো আইনি জটিলতা এড়াতে জয়েন্ট নামে সম্পত্তি কিনবেন। উইল করে সম্পত্তির অধিকার দেবেন সঙ্গীকে কিংবা পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি প্রয়োগ করবেন। পরিবার যতই এদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখুক— এরা পরস্পরের প্রতি যদি সত্যনিষ্ঠ থাকে, তাহলে সম্পর্কের বুনিয়াদ শক্তই হবে।