সাধারণত হিন্দু পরিবারে পুজোপাঠের এক অবিচ্ছিন্ন অঙ্গ হল হোমযজ্ঞ করা। যুগযুগ ধরে চলে আসা এই রীতির স্বপক্ষে ধর্মান্ধরা যে-যুক্তি দিয়ে থাকেন, তা হল যজ্ঞ করার ফলে সামাজিক পাপ নাশ হয় ও চারপাশের পরিমণ্ডল শুদ্ধ হাওয়ায় ভরে ওঠে। অথচ সাধারণ বিজ্ঞানচেতনা যার আছে তিনি অবশ্যই জানবেন, যজ্ঞ করলে কার্বনডাইঅক্সাইড আরও বাড়বে। সুতরাং হাওয়া পরিশুদ্ধ হওয়ার এই যুক্তি সম্পূর্ণরূপে ভুল।
যদি একটু পিছিয়ে যাই তাদলে দেখব, ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর ‘ডেলি গার্জিয়ান’ কাগজে ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তি জিতেন্দ্র তুলি, এই ভুল ধারণার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অত্যন্ত প্রিয়পাত্র তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোলান্ড ট্রাম্প-এর উক্তি তুলে ধরেন তিনি, যেখানে ট্রাম্প বলছেন, ভারতের হাওয়া অত্যন্ত দুষিত ও শ্বাস নেওয়ার অযোগ্য।
জিতেন্দ্র আরও বলেছেন, তাঁর শৈশবে স্পষ্ট ভাবে আকাশ দৃশ্যমান হতো রাতে। আর এখন ভারত এক বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে। কারণ এখানে এখনও মৃতদেহ পোড়ানো হয় কাঠ দিয়ে। পুজোপাঠে ধুপধুনো, হোমযজ্ঞ এবং প্রদীপ জ্বলে হাওয়াকে দুষিত করছে। অথচ সোশ্যাল মিডিয়াতে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে হোমযজ্ঞ পূজাপাঠের সুফল প্রচার করা হচ্ছে।
অ্যালার্জি স্পেশালিস্ট ঋতিক গোয়েল স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন, আজকাল সমস্ত বাচ্চার উপরেই দূষণের প্রভাব পড়ছে। কারণ প্রতিটি বাড়িতেই জ্বলছে ধূপ, মসকুইটো কয়েল কিংবা পুজোর যজ্ঞ। বাইরে বেরোলেই রয়েছে গাড়ি থেকে নির্গত পেট্রল, ডিজেলের দূষিত হাওয়া। কাঠের ধোঁয়া সবচেয়ে ক্ষতিকারক। এর কারণ এর মধ্যে ছোটো পার্টিকুলেট বা অণুর আকারে বিষাক্ত গ্যাস থাকে যা চোখ ও ফুশফুসের ক্ষতি করে। সেই কারণেই আমেরিকায় ফায়ারপ্লেস-এ কাঠ জ্বালানোর বিলাসিতা বন্ধ হয়েছে।
আমরা আর কতকাল কুসংস্কার ছড়িয়ে কার্বন মনোঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রোজেন অক্সাইড প্রভৃতি বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে মেশাতে থাকব!
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, প্রধানমন্ত্রী যদি তাঁর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই হোমযজ্ঞ বন্ধ করুন, তাহলে জনমানসে তার সুফল অবশ্যই পড়বে।