শিখার স্বামী সঞ্জীব, রোহিতের ভালো বন্ধু ছিল। এক মাস আগেই রোহিতের সঙ্গে অঞ্জলির বিয়ের সব ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ এক শনিবার ফোন না করেই অঞ্জলি শিখার সঙ্গে দেখা করতে ওদের বাড়ি এসে হাজির হল। হাসিখুশি অঞ্জলিকে কিছুটা উদাস দেখে শিখা একটু আশ্চর্য হল!

প্রথমটা ও কিছু বলল না, গল্পগুজবে অঞ্জলিকে ব্যস্ত রাখল। বেশ অনেকক্ষণ কথা বলার পর শিখা জিজ্ঞেস করল, ‘আজ তোমাকে কেন এত উদাস লাগছে?’

অঞ্জলি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ‘শিখা বউদি, আমি আমন সম্পর্কে আপনাকে কিছু বলতে চাই।”

—আমন কে হয় তোমার?

—একসময় আমরা একে অপরকে খুব ভালোবাসতাম’, লজ্জিত স্বরে অঞ্জলি শিখাকে খুলে বলল।

—তাহলে তোমরা দু’জনে বিয়ে কেন করলে না? অবাক হয়ে শিখা প্রশ্ন করল!

—আমার আর আমনের জাত আলাদা। ও ওবিসি ক্যাটাগোরির কিন্তু পড়াশোনায় দারুণ। বিরাট চাকরি করে কিন্তু তা সত্ত্বেও আমার বাড়ির সকলে ওর সঙ্গে আমার বিয়ের বিরুদ্ধে ছিল। ছয় মাস আগে ওর পরিবার, নিজের জাতেরই একটি মেয়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করে আমনের বিয়ে দিয়ে দেয়। কিন্তু নতুন বউকে আমন মন থেকে স্বীকার করতে পারেনি। আজও মোবাইলে আমাদের পাঠানো মেসেজ আর ছবি ও সেভ করে রেখেছে। আর ওগুলো দেখে এখন ও চোখের জল ফেলে। কিছুদিন আগেই এসব দেখে ওর বউ ওকে ছেড়ে চলে গেছে। বর্তমানে ওরা আলাদাই থাকছে।

—তোমার সঙ্গে এখনও আমনের দেখা হয়?

—হ্যাঁ হয়। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর অঞ্জলি আমনের সঙ্গে মেলামেশার কথা স্বীকার করে নিল।

—আমনের সঙ্গে দেখা করার পরেই জানতে পারি যে, আমন আমাকে না পেলে আত্মহত্যা করতেও প্রস্তুত!

শিখা প্রথম ধাক্কাটা থেকে নিজেকে একটু সামলে নিয়ে অঞ্জলিকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি, আমন সম্পর্কে আর কী কথা আমাকে বলতে চাও?’

—এখনও ওর সঙ্গে আমাকে দেখা করতে যেতে হয়। বউদি, আমি যদি দেখা করতে না যাই তাহলে আমন হতাশ হয়ে পড়ে আর খালি মরার কথা বলতে থাকে।

—কিন্তু অঞ্জলি, আমার মনে হয় তোমার এখন বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। সুতরাং আমনের সঙ্গে তোমার এখন আর দেখা করা উচিত নয়। রোহিত যদি এটা জানতে পারে, ও পছন্দ করবে না জেনে রাখো।

—বউদি, আমিও এটা খুব ভালো ভাবেই বুঝি। কিন্তু আমি বাধ্য হচ্ছি ওর সঙ্গে দেখা করতে যেতে। ওকে হতাশা এবং অবসাদ থেকে বার করে নিয়ে আসাটা আমি নিজের দায়িত্ব বলে মনে করি।

—অঞ্জলি কয়েক সপ্তাহ পরেই রোহিতের সঙ্গে তোমার বিয়ে হতে যাচ্ছে সুতরাং এই সময় ইমোশনাল হয়ে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে জুয়া খেলো না। এতে তোমারই ক্ষতি হবে।

এই ব্যাপারেই আমার তোমার সাহায্য চাই বউদি। অঞ্জলির কথায় ওর ভিতরের মানসিক যন্ত্রণা স্পষ্ট ফুটে উঠল।

—আমার কাছে তুমি কী সাহায্য আশা করো?

—বউদি, আমি চাই রোহিতের সঙ্গে বিয়ের পরেও যেন আমন সম্পর্কে রোহিত কিছু জানতে না পারে আর এটা তোমার সাহায্য ছাড়া একেবারেই অসম্ভব।

—আমাকে কী সাহায্য করতে হবে? শিখা অজান্তেই একটা বিভ্রান্তির শিকার হয়ে পড়ল।

—বউদি আমি তোমার সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার অছিলায় আমনের সঙ্গে দেখা করতে যাব।

—অঞ্জলি, তুমি এসব কথা বলে আমার মাথা একেবারে খারাপ…

—বউদি, তুমি প্রথমে আমার কথা শোনো প্লিজ। অঞ্জলি শিখাকে মাঝপথেই থামিয়ে দিয়ে বলল, তুমি যদি আমার সঙ্গে থাকো তাহলে রোহিত আমাকে সন্দেহ করবে না। এই পরিস্থিতিতে তোমায় সাহায্য করতেই হবে আমাকে। কারণ যদি আমন আত্মহত্যা… —সরি অঞ্জলি, আমি কিছুতেই তোমার এই অন্যায় কাজে সাহায্য করতে পারব না।

অঞ্জলি অবশ্য শিখার কথায় এতটুকু না দমে বলে যেতে লাগল, ‘আমন আমার মামার বাড়ির পাশেই থাকে। কখনও যদি রোহিত বা সঞ্জীবদা জিজ্ঞাসা করে তাহলে আমরা বলে দেব যে মামা-মামির সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। আমনের মা আমাকে দেখে নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়েছে। তুমি আমার সঙ্গে থাকলে রোহিত বা সঞ্জীবদা কেউ আমাকে সন্দেহ করবে না।”

—তুমি সঞ্জীবের রাগ জানো না অঞ্জলি। এই বিষয়ে তুমি আমার সাহায্যের আশা কোরো না। সোজাসাপটা ভাবে শিখা নিজের মতামত জানিয়ে দিল।

—তাহলে বউদি একটা কাজ করো। আমার দিক থেকে সঞ্জীবদাকে আশ্বস্ত করো যে, আমন মানসিক ভাবে সুস্থ হয়ে গেলে, ওর সঙ্গে দেখা করা আমি পুরোপুরি বন্ধ করে দেব।

—সঞ্জীব এই কাজে তোমাকে সাহায্য করতে কিছুতেই রাজি হবে না।

—তুমি আমাকে বোঝার চেষ্টা করো বউদি। প্লিজ দাদাকে তুমি বোঝাও আর নয়তো আমি ওনার সঙ্গে কাল দেখা করব। অঞ্জলি ক্লান্তস্বরে বলে উঠে দাঁড়াল। তুমি দাদাকে এটুকু অবশ্যই বোলো যে, আমন সম্পর্কে দাদা যেন রোহিতকে কিছু না বলে।

—তুমি যদি বুদ্ধিমতি হও তাহলে আমনের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দাও অঞ্জলি। রোহিত…..

(ক্রমশ…)

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...