সন্তানের মৃত্যু, তার তদন্ত এবং আদালতে বিচারপর্ব—এই বিষয় নিয়েই তৈরি হয়েছে ‘নীরব মৃত্যুদণ্ড’ শীর্ষক একটি ছবি। ‘Cine Verite Studios’ নিবেদিত, এই ছবিটি প্রযোজনা করেছেন বাণী চৌধুরি এবং ছবিটি পরিচালনা করেছেন সৌমিক চৌধুরি।
‘নীরব মৃত্যুদণ্ড’ ছবিটি প্রসঙ্গে পরিচালক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, ‘এ এক অদ্ভুত সময়ে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। অতিমারি-র কারণে সারা বিশ্ব তোলপাড়। জীবন যেখানে অনিশ্চিত, জীবিকা সেখানে শুধুমাত্র টিকে থাকার অবলম্বন মাত্র। অরিত্র তিয়াসা আর তাদের একরত্তি পাভেলের ছোট্ট নৌকাটাও এই ঝড়ে বেসামাল। অস্থির জীবন আরও অস্থিরতর করে দেয়, দুর্বল হয়ে পড়ে সম্পর্কের বুনিয়াদ।’
ছবির কাহিনি সম্পর্কে পরিচালক আরও জানিয়েছেন, ‘তিয়াসার জীবনে ঝড়ো হাওয়ার মতো আসে এক তরতাজা যুবক জায়েদ। দৈনন্দিন দম বন্ধ জীবনে সেই এক ঝলক মুক্তির উদ্দাম আবেগ ভাসিয়ে দেয় তিয়াসাকে নিষিদ্ধ পরকীয়ার নেশায়। হঠাৎ নেমে আসে চরম বিপর্যয়। এরই মধ্যে ছোট্ট পাভেলের আকস্মিক মৃত্যু, তাও আবার বিষক্রিয়ায়। চিকিৎসক রাইয়ান রায়ের রিপোর্টের ভিত্তিতে সন্তানের হত্যার অভিযোগে মা ওঠেন কাঠগড়ায়। ইথিলিন গ্লাইকল পয়জনিং। সরকারি উকিলের ক্ষুরধার যুক্তি আর রায়ান রায়ের ফরেনসিক রিপোর্ট যখন তিয়াসার মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত করে তুলেছে, তখন তার পক্ষে শহরের অন্যতম গ্ল্যামারাস আধুনিক ও দক্ষ ডিফেন্স আইনজীবি অদিতি বোস হাজির করেন জেনেটিক বিশেষজ্ঞ ডক্টর অনলাভ রায় চৌধুরীকে।’
কিন্তু কী ঘটবে এরপর? হ্যাঁ, এরপর যা ঘটবে, তা আরও চমকপ্রদ। ইথিলিন গ্লাইকল পয়জনিং-এর সঙ্গে হুবহু মিলে যায় জন্মগত একটি অসুখ মিথাইল মেলোনিক এসিডিমিয়া। সুতরাং পাভেলের মৃত্যুর কারণ বিষক্রিয়া নাও হতে পারে। বেনিফিট অফ ডাউট-এ জামিন পায় তিয়াসা।
কিন্তু এ কোন পৃথিবী ? মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে তার খুব কাছের পরিচিত দুনিয়াই এখন তার দিকে তাকিয়ে আছে চরম অবিশ্বাস আর সন্দেহের দৃষ্টিতে। ব্যতিক্রম শুধু তার স্বামী অরিত্র। নিজেদের সন্তানের সম্ভাব্য হত্যাকারিনীর স্ত্রী-র পাশে তার অনড় অবস্থান বিস্মিত করে সকলকে।
ইতিমধ্যে ঘটনা মোড় নয় অন্যদিকে। জেলে থাকতে তিয়াসা জানতে পারে যে, সে দ্বিতীয়বারের জন্য অন্তঃসত্ত্বা। যথাসময়ে দ্বিতীয় সন্তান জন্মগ্রহণ করে এবং আবার সেই শিশুর অসুস্থতার ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এবার সতর্ক পরিবার অনতিবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করায় ও শিশুটি প্রাণ রক্ষা পায়। অমোঘ নিয়তির মতো পরীক্ষার রিপোর্ট আসে, অসুস্থতার কারণ ইথিলিন গ্লাইকল পয়জনিং। আবার সন্তান হত্যা, আবার প্রয়োজন হয় অকাট্য প্রমাণের। লায়ন রায়ের পয়জনিং তথ্য-প্রমাণে সমাজ শিউরে ওঠে মাতৃত্বের এই নৃশংস রূপ দেখে।
তিয়াসার জামিন নাকচ হয় এবং পাভেলের হত্যার কারণে তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা হয়। সবকিছু শেষ হয়েও কিছু যেন বাকি থাকে। একটা ইমেইল আসে রায়ান রায়ের কাছে। সেই মেইল-এ জানা যায়, এক ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের কথা। কীভাবে সুপরিকল্পিতভাবে প্লট করে এই মৃত্যু ঘটানো। কে দায়ী এই ছোট্ট শিশুটির মৃত্যুর জন্য? উত্তর পাওয়ার জন্য ‘নীরব মৃত্যুদণ্ড’ ছবিটি দেখার অনুরোধ করেছেন পরিচালক সৌমিক।
‘নীরব মৃত্যুদণ্ড’ ছবির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সৌম্যদেব ভট্টাচার্য, মহুয়া দাশগুপ্ত, সংগীতা মুখোপাধ্যায়, রাজর্ষি মুখোপাধ্যায়, ঐশি রায়, সুকান্ত চক্রবর্তী প্রমুখ।
পরিচালক নিজেই লিখেছেন এই ছবির কাহিনি এবং চিত্রনাট্য। সিনেম্যাটোগ্রাফার আফ্রিদি এবং অভিরাজ। সম্পাদনা করেছেন সুদীপ ম্রিধা। ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে কয়েকটি রবীন্দ্রসংগীত। গানগুলি গেয়েছেন উৎসব দাস এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সংগীত আয়োজনে ছিলেন পরাগ বরণ। পরিচালকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী মাসের মধ্যে বিভিন্ন প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে ছবিটি।