বাচ্চাকে সামলাতে গিয়ে পরিশ্রম বেড়ে যায় মায়েদের। সন্তান লালন-পালনের জন্য দীর্ঘ সময় পেরিয়ে আসতে গিয়ে অনেক মা-ই সমাজ এবং সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে নিজেদের ঠিক করে খাপ খাইয়ে নেওয়া থেকে পিছিয়ে পড়েন। সন্তানই তাদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠে তখন। অথচ এই সন্তান যখন জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে, তখন মায়ের জন্য সময় থমকে দাঁড়িয়ে যায়। আধুনিকতার আঁচ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার ফলে, নতুন নতুন আবিষ্কারের কথা একপ্রকার অজানাই থেকে যায় মায়ের জীবনে। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে বদলানো উচিত। এর জন্য ব্যক্তিত্বেও বদল আনতে হবে। কারণ ব্যক্তিত্ব সামগ্রিক ভাবে এমনই একটি বিষয়, যা সবার নজর কাড়বে এবং আপনাকেও খুশি রাখবে।
মায়ের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করার পাশাপাশি, মানুষ হিসেবেও আপনাকে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে হবে। আপনার চারপাশের মানুষজন যত বেশি করে আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবে, তত সহজে আপনি জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারবেন এবং সফল মা হয়ে উঠতে পারবেন। কর্মক্ষেত্রেই হোক কিংবা সংসারে, নিজেকে সবার কাছে প্রেজেন্টেবল করে তুলতে হবে। তাই নিজেকে প্রফেশনালি দক্ষ করে তোলাও যেমন জরুরি, ঠিক ততটাই জরুরি নিজের পার্সোনালিটি ডেভেলপমেন্ট। ভিতর এবং বাইরে উভয় ক্ষেত্রেই নিজেকে সমৃদ্ধ করে তুলতে হবে।
আপনার শিক্ষা, রুচি, আচার-ব্যবহার, কথা বলার স্টাইল, শব্দচয়ন—— সব মিলিয়েই কিন্তু আপনি এবং আপনার থেকেই সবকিছু শিখবে আপনার সন্তান। তাই প্রথমে খুঁজে বের করুন, কোন কোন বিষয়ে আপনার ত্রুটি রয়েছে। একবার এটা চিহ্নিত করতে পারলেই, ব্যক্তিত্ব বদলে ফেলে সবার নজর কাড়তে সুবিধে হবে।
লুক-এর প্রতি নজর
মডার্ন ড্রেস ও হেয়ারস্টাইল নিয়ে অনেক মায়ের মধ্যে একটা দ্বিধা কাজ করে। কে কী বলবে, কী ভাববে? সবার আগে এই ভাবনারই বদল দরকার। প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস। দ্বিধা, হীনমন্যতা দূর করে নতুন লুকে নিজেকে আপ টু ডেট করে নিন। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির মনোবিদ এলেন ল্যাঙ্গারের রিসার্চ এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। তিনি ২৭ থেকে ৮৩ বছর বয়সি ৪৭ জন মায়ের উপর রিসার্চ চালিয়েছিলেন। মুখের গঠন অনুযায়ী প্রত্যেককে হেয়ার কাট ও কালার টাচ দেন। সঙ্গে মানানসই মডার্ন পোশাক। দেখা যায়, যেসব মায়েরা নিজেদের ইয়ং লুক-এর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, তাদের অনেক বেশি উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। বয়সটাও একধাপে অনেকটা কমে গেছে।
ঠিক উলটো পরিস্থিতি অন্যদের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ অন্তর আর বাহ্যিক তারুণ্য— দুইয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকাটা জরুরি। সেক্ষেত্রে মনকে তাজা রাখার পাশাপাশি দরকার হেয়ারস্টাইল এবং পোশাকের পরিবর্তনও। সঙ্গে স্টাইলিশ অ্যাক্সেসরিজ। তাহলেই নিজেকে অনেক বেশি আকর্ষণীয় ও সতেজ লাগবে৷ লো কনফিডেন্স-কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে জীবনটা উপভোগ করুন। অনেকের হালকা রঙের পোশাক পছন্দ। তাদের বলব, মাঝেমধ্যে নিজেকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করুন। জিন্স-এর সঙ্গে রংবাহারি জ্যাকেট, কখনও বা ফ্যাশনেবল গাউন ট্রাই করুন। অন্যের সমালোচনার ভয় ঝেড়ে ফেলে, নিজেকে স্মার্ট করে তুলুন।
কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, যাতে সদর্থক ভাবনা আপনাকে ঘিরে রাখে। ডিপ্রেশন নয়। জীবন একটাই। তাই মায়ের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি, বেঁচে থাকার মানে খুঁজে নিতে হবে আপনাকেই। জীবনটাকে কীভাবে আপনি চালিত করবেন তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য বিরাট শিক্ষিত বা অভিজাত পারিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড থাকার প্রয়োজন নেই। বরং অনেক বেশি জরুরি হল অন্তরের তাগিদেই কিছু কাজ করা।
এক নজরে
o অন্যদের খুশির খবর আনন্দের সঙ্গে শুনুন। মন খুলে হাসুন পছন্দের গান শুনুন। গুনগুন করুন। পারলে একটু নেচেও নিন
o খুশির মুহূর্তগুলি স্মৃতিপটে সাজিয়ে রাখুন। দুঃখকে বিদায় জানান
O মাথা ঠান্ডা রেখে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করুন
O সদর্থক ভাবনাচিন্তার মানুষের সঙ্গে বেশি করে সময় কাটান
O মনের মধ্যে দুঃখ-কষ্ট চেপে না রেখে বন্ধু, স্বামী কিংবা সন্তানের সঙ্গে শেয়ার করুন
O অন্যের পাশে দাঁড়ান
O সবরকম নেশা থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন
O ওজন বাড়তে দেবেন না। শরীর ফিট রাখুন
O মায়ের দায়িত্ব পালন এবং কেরিয়ারের পাশাপাশি, বিবাহিত জীবন ও সেক্সলাইফ এনজয় করুন
O কাজ, এন্টারটেইনমেন্ট এবং বিশ্রামের মধ্যে ভারসাম্য রাখুন
O সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং-এর সাহায্য নিয়ে নতুন নতুন বন্ধু বানান।