প্রশ্নঃ আমার বয়স ২৭ বছর। আমাদের বংশে গ্লুকোমার মতো চোখের অসুখের একটা ধারা রয়েছে। আমার ঠাকুরদা, তাঁর বাবা সকলেই গ্লুকোমার কারণে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন বলে শুনেছি। আমি জানতে চাই এই অসুখটি কী এবং কতটা ক্ষতিকারক?
উত্তরঃ আপনার ঠাকুরদা’র কিংবা তাঁর বাবা এই অসুখে আক্রান্ত হয়ে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন মানেই যে আপনারও এই সমস্যা হবে, এমন কোনও ভয় নেই। তবে আপনাকেও চোখের যত্ন নিতে হবে। তাই এই রোগটি সম্পর্কে আগে থেকে বিশদে জেনে রাখা উচিত।
আসলে, গ্লুকোমা চোখের একটি জটিল রোগ এবং এই রোগে চোখের স্নায়ু ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেইসঙ্গে, ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টিশক্তিও কমে যায়। এমনকী এতে এক সময় রোগী অন্ধত্ব বরণ করতে বাধ্য হয়। অসুখের মূল কারণ হল চোখে ফ্লুইড জমে যাওয়া। এই তরলের নাম অ্যাকুয়াস হিউমর। এই তরল বেরনোর রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে তা জমতে শুরু করে চোখে। তখন অপটিক নার্ভে চাপ পড়ে গ্লুকোমা হয়। তবে সময়মতো ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করলে এ অন্ধত্বের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চোখের অভ্যন্তরীণ উচ্চচাপ এজন্য দায়ী। অসুখ ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া উচিত। ডাক্তার, খাওয়ার ওষুধ এবং আই ড্রপ দিতে পারেন। এতে যদি কাজ না হয় তাহলে লেজার সার্জারি করতে হয়। এটি জটিল অপারেশন একেবারেই নয়।
এই রোগের সুনির্দিষ্ট কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া না গেলেও অদ্যাবধি চোখের উচ্চচাপই এ রোগের প্রধান কারণ বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে স্বাভাবিক চাপেও এ রোগ হতে পারে। চোখের উচ্চচাপই ওষুধ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, যা গ্লুকোমা রোগের প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই রোগী এই রোগের কোনও লক্ষণ অনুধাবন করতে পারেন না। চশমা পরিবর্তনের সময় কিংবা নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষার সময় হঠাৎ করেই চিকিৎসক এই রোগ নির্ণয় করে থাকেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে উক্ত লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। যেমন চোখ ও মাথা ব্যথা হয়, চোখে চাপ লাগতে পারে, দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে, ঝাপসা দেখা কিংবা রামধনুর মতো রং দেখতে পারেন, চোখ লাল হয়ে যেতে পারে এবং চোখে ব্লাইনড স্পট অর্থাৎ নির্দিষ্ট একটি জায়গায় দেখতে পাবেন না, এমন কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।