মর্মান্তিক সড়ক ট্র্যাফিক দুর্ঘটনায় গুরুতর পেলভিক ইনজুরির পরে, এক তরুণ স্বাভাবিক ভাবে মলত্যাগ করার ক্ষমতা হারিয়েছিলেন। তিনি প্রাকৃতিক পথ দিয়ে মলত্যাগ করতে অক্ষম ছিলেন দীর্ঘ দশ বছর। দুর্ঘটনার পরবর্তী জীবনে তিনি আরও এক ভয়ংকর পরিণতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। কলকাতার এক শীর্ষস্থানীয় হাসপাতালে এই তরুণ রোগীর কোলোস্টমি করা হয়েছিল, কিন্তু মলদ্বারের স্ফিংটার ফাংশন সংশোধন করতে পারেনি। এর পর প্রায় দশ বছর তিনি প্রাকৃতিক পথ দিয়ে মলত্যাগ করতে অক্ষম ছিলেন এবং পরিবর্তে তার পেটের সঙ্গে সংযুক্ত একটি ব্যাগ ব্যবহার করে মল নিকাশের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। তবে দীর্ঘ যন্ত্রণা ভোগের পর, অবশেষে রোগী সেই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছেন গ্র্যাসিলোপ্লাস্টি নামক সার্জারি-র পর। আর এই সার্জারি করেছেন কনসালটেন্ট জিআই সার্জন ডা. সঞ্জয় মণ্ডল।
এখন প্রশ্ন, কী এই গ্র্যাসিলোপ্লাস্টি সার্জারি?
গ্র্যাসিলোপ্লাস্টিতে রোগীর উরু (গ্রাসিলিস পেশী) থেকে সামান্য অংশ কেটে নেওয়া হয় এবং এটিকে মলদ্বারের নতুন স্ফিংটার হিসাবে কাজ করার জন্য স্থাপন করা হয়। এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয়েছিল, কারণ রোগীর মূল পায়ু স্ফিংটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তাই মলদ্বার প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছিল বলা যায়। প্রতিস্থাপিত পেশীকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক স্ফিংটার-এর মতো কাজ করার উপযুক্ত ব্যবস্থা করা হয়, যা রোগীকে অন্ত্রের কার্যপ্রণালী নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
রোগীর মলদ্বারের স্ফিংটার ফাংশন সংশোধনের এই কাজটি খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল এবং সেই চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্ট করে গ্র্যাসিলোপ্লাস্টি সার্জারি-কে সফল করে তোলেন ডা. সঞ্জয় মণ্ডল। গ্র্যাসিলোপ্লাস্টি এবং অ্যানাল ক্যানেল স্টেনোসিসের ফ্ল্যাপ মেরামত সহ, এক বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করে রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন ডা. সঞ্জয় মণ্ডল।
মলদ্বার ক্যানেল স্টেনোসিসের ফ্ল্যাপ মেরামত একটি কৌশল, যা সংকীর্ণ মলদ্বার ক্যানেলকে প্রশস্ত এবং মেরামত করতে ব্যবহৃত হয়। এই রোগীর ক্ষেত্রে গুরুতর আঘাতের কারণে পায়ুপথে আঘাত পায় এবং পায়ুপথ সরু হয়ে যায়। যার ফলে মলত্যাগ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ফ্ল্যাপ মেরামতের সঙ্গে ক্যানেল প্রশস্ত করার জন্য থাই থেকে টিস্যু ব্যবহার করা হয় এবং স্বাভাবিক মলত্যাগের পথ তৈরি করা হয়।
সার্জারি-র পর দীর্ঘ ছয় মাস ব্যায়াম এবং ফিজিওথেরাপিকে মাধ্যম করে রোগী তার পায়ুপথে শক্তি ও কার্যকারিতা ফিরে পায় এবং ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।
ডা. সঞ্জয় মণ্ডল প্রসঙ্গত জানিয়েছেন, এই অস্ত্রোপচারের সাফল্য শুধুমাত্র একটি মেডিকেল মাইলফলকই চিহ্নিত করে না, বরং রোগীকে নতুন স্বাভাবিক শারীরিক সক্রিয়তা ফিরিয়ে দিয়ে মানসিক শক্তি জুগিয়েছে।”
ডা. সঞ্জয় মণ্ডল, কনসালটেন্ট জিআই সার্জন, (ল্যাপারোস্কোপি এবং অনকোসার্জারি), এএমআরআই হাসপাতাল, কলকাতা।