১৯৭৮ সালের আগে যত বাচ্চার জন্ম হয়েছে, তারা সবাই মাতৃগর্ভে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর স্বাভাবিক মিলনেই জন্ম নিয়েছেন। কিন্তু তারপর থেকে আইভিএফ পদ্ধতি চলে আসার ফলে পুরো ছবিটা বদলে গেছে। আর এখন প্রতি মিনিটে অন্তত একজন বাচ্চার ভ্রূণ তৈরি হচ্ছে টেস্টটিউব-এ পুরুষের স্পার্ম এবং নারীর এগ ফার্টিলাইজ করে। তাই বলা যায়, সারা পৃথিবীতে অসংখ্য ভ্রূণ মাতৃগর্ভে তৈরি না হয়ে, আইভিএফ অর্থাৎ ইনভিট্রো ফার্টিলাইজ পদ্ধতিতে হচ্ছে।
এখন মেয়েরা যেহেতু ঘরে-বাইরে নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন বেশিরভাগ সময়, তাই তাদের কাছে বাচ্চার জন্ম দেওয়ার বিষয়টি এক বিড়ম্বনায় পরিণত হয়েছে। কীভাবে সবকিছু সামলে উঠে বাচ্চা নেবেন একজন কর্মরতা নারী, এটা ভাবতে ভাবতেই বয়স ৪০ বছর পার হয়ে যায়। আর বাচ্চা নেওয়ার সঠিক বয়স পার হয়ে যাওয়ার পর যদি স্বামীর স্পার্ম কাউন্ট কিংবা স্ত্রী-র এগ্ প্রোডাকশন কমে যায় কিংবা ইউটেরাস-এ কোনও সমস্যা দেখা দেয়— তাহলে তখন তারা নিরুপায় হয়ে আইভিএফ সেন্টারগুলির দ্বারস্থ হন।
আসলে কেরিয়ার গড়ার জন্য অতি ব্যস্ততা এবং প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়ে শামিল হতে গিয়ে পারিবারিক জীবন এবং স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক চাহিদা পূরণের বিষয়টি ভাবতে ভুলে যাচ্ছে মানুষ। আর যখন ভাবার অবসর পান কিংবা ভাবতে বাধ্য হন, তখন সময় অনেকটা পার হয়ে যায়— স্বপ্ন আর পূরণ হয় না স্বাভাবিক পন্থায়। কারণ যাই হোক না কেন, স্বাভাবিক ভাবে বাচ্চার জন্ম দিতে অক্ষম হচ্ছেন এখন অসংখ্য নারী। আর তাই ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা আইভিএফ-এর চাহিদা বাড়ছে সারা পৃথিবীতে। সমীক্ষা অনুযায়ী, এখন ১২৫জন বাচ্চার মধ্যে ১জন বাচ্চা হয় আইভিএফ পদ্ধতিতে। তবে আশা করা হচ্ছে, আগামী দিনে আইভিএফ-এর সংখ্যা হয়তো আরও বাড়বে।
এখন সবকিছুই হয় প্ল্যান মাফিক। বাচ্চার জন্ম থেকে শুরু করে স্কুলে ভর্তি, এমনকী ডক্টর, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি কী হবে ভবিষ্যতে, তার সবটাই যেন পূর্ব নির্ধারিত! অতএব বাচ্চা জন্মানোর বিষয়টিও যে স্বাভাবিক ভাবে না হয়ে আইভিএফ পদ্ধতিতে হবে, এ আর আশ্চর্যের কী? আর এই আইভিএফ-এর বিষয়টি যত বাড়বে, বিবাহিত দম্পতির কাছে তা খরচাসাপেক্ষ কিংবা বিপর্যয়ের হলেও, আইভিএফ সেন্টারগুলির রমরমা ব্যাবসা চলতে থাকবে।