দীপাবলি মানেই উপহার এবং মিষ্টান্নের আদান-প্রদান। কিন্তু কারও জন্য উপহার কেনাটা খুব সহজ কাজ নয়। সব সময় উপহার দিতে গিয়ে মনে হয় নতুন কিছু করা বা কেনা দরকার। কিন্তু করতে গিয়ে কাজটা খুব সহজ হয় না। পরিচিত, আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবদের উপহার কিনতে গিয়ে সেই জামাকাপড়, ড্রাই ফ্রুটস, মিষ্টি ইত্যাদি ছাড়া আমরা আর কিছু ভাবতে পারি না। বাচ্চাদের পছন্দকে তো আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনেই করি না! অধিকাংশ সময়েই আমরা ছোটোদের উপহার নিয়ে মাথা ঘামাই না। অথচ দীপাবলির মতো বিশেষ উৎসবে একটা ছোটো উপহারও শিশুদের আনন্দে ভরিয়ে তুলতে পারে। উপহার যে সবসময় কোনও জিনিস হতে হবে, তার কোনও মানে নেই।
ঈশিতার মা একজন সিংগল মাদার। তিনি একটি বড়ো কোম্পানিতে ভালো পদে চাকরি করেন। পাঁচ বছরের মেয়ের কোনও ইচ্ছাই অপূর্ণ রাখেন না। অনেকদিন ধরেই তিনি লক্ষ্য করছিলেন, ছোট্ট ঈশিতা কোথাও কোনও গান বাজলেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মতো নাচতে থাকে অথচ বাড়িতে আর কেউ নাচ জানে না। ঈশিতার মায়ের মনে হয়েছিল মেয়ের নাচের প্রতি বিশেষ। ভালোবাসা রয়েছে। ফলত তিনি মেয়েকে বাড়ির কাছেই একজন ভালো কত্থক ডান্সারের কাছে ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন ঠিক দীপাবলির আগেই।
ঈশিতা যখন জানতে পেরেছে এটাই মায়ের তাকে দেওয়া দীপাবলির গিফ্ট, তখন ও এতটাই আনন্দ পেয়েছে, যা সে জীবনে আর কখনও পায়নি।
পছন্দের উপহার
ধীরাজ ভট্টাচার্যের দুই ছেলে। ছোটো ছেলে জয় ১৭ বছরের , রান্নার প্রতি অসম্ভব আকর্ষণ। এই বয়সেই একজন দক্ষ রাঁধুনে হয়ে উঠেছে ও। ইচ্ছে হলেই রান্নাঘরে গিয়ে নিজের মতন কিছু রান্না করে সকলের সামনে পরিবেশন করে। যে-পদটি রান্না করে সেটি দেখতে যতটা লোভনীয় হয়, খেতেও ঠিক ততটাই সুস্বাদু। মা-বাবার উৎসাহে জয় ইনস্টাগ্রাম এবং ইউটিউবে নিজের চ্যানেল খুলেছে যেখানে তার তৈরি প্রতিটি রান্নার পদ সকলের সাথে শেয়ার করে। এটা দারুণ সমাদৃত হচ্ছে।
ধীরাজ ছেলের ট্যালেন্টকে আরও উৎসাহ দিতে দীপাবলির উপহার হিসেবে ওকে ওর পছন্দের সেলিব্রিটি কুক-এর কুকারি ক্লাসে ভর্তি করে দিয়েছেন। এতে জয়ও খুব খুশি কারণ তার পরিবারের সদস্যরা সকলে তার গুণের কদর করছে। ধীরাজও মনে মনে জানেন, ছেলে যদি এই ফিল্ডে ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে চায়— তাহলে এটাই হবে ওর লক্ষ্যের দিকে প্রথম এবং সঠিক পদক্ষেপ। কলকাতায় শান্তনু মুখার্জি এবং রিচার ছোটো মেয়ে রুমি, হায়ার সেকেন্ডারি তে হিউমানিটি সাবজেক্ট-এ ৯৯ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেছে। এছাড়াও সিইউইটি (কিউট)-এর পরীক্ষায় ‘বেস্ট ফোর’ বিষয়ে ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। স্কুলে রুমি বরাবরই টপার ছিল। সুতরাং এই দীপাবলিতে ওর জন্য সুন্দর একটি উপহার মা-বাবার থেকে প্রা প্য বটেই।
উপহার একটাই কিন্তু কাজ দুটো
রুমির সাফল্যে শান্তনু আর রিচা ঠিক করেন মেয়েকে ভালো ক্যামেরা-যুক্ত মোবাইল ফোন উপহার দেবেন দীপাবলিতে। কারণ রুমির ছবি তোলার শখ প্রচণ্ড। পাবলিক বাসে, ট্রামে মেয়েকে এখন ট্রাভেল করতে হবে। ফলে মোবাইল সঙ্গে থাকাও জরুরি। ওই একই মোবাইল দিয়ে সে নিজের শখও পূর্ণ করতে পারবে।
যে-কোনও উৎসবেই মানুষ নিজের বাজেট অনুযায়ী খরচ করে। কিন্তু যদি বাচ্চার জন্য কোনও গিফ্ট কিনতে হয় তাহলে বাচ্চার পছন্দ এবং প্রয়োজনের কথাটাও মাথায় রাখা উচিত।
ভালোবাসায় মোড়া উপহার
বাচ্চা ট্যালেন্টেড হলে তবেই সে স্পেশাল গিফ্ট পাওয়ার যোগ্য এমনটা কিন্তু ঠিক নয়। যে-কোনও উৎসবেই বাচ্চাকে উপহার থেকে বঞ্চিত রাখা উচিত নয়। তাকে তার নিজের পছন্দের বই, ম্যাগাজিন, চকোলেট ইত্যাদি কিনে দিতে পারেন— এতে পড়ার প্রতিও তার আগ্রহ বাড়বে। এখন বই পড়া মানেই বেশিরভাগই স্কুল কলেজের টেক্সট বইয়ের চাহিদামতো জ্ঞান সীমিত রাখা। হায়ার এডুকেশনও অনেক সময় কোনও কাজে আসে না। গল্পের বই তাকে এক অন্য ভুবনে এনে ফেলবে।
আসলে উৎসবেই সুযোগ ঘটে সকলের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার। বাচ্চাদের উৎসব ভালো লাগে কারণ নিজের প্রিয়জনদের কাছ থেকে পাওয়া উপহারে ভালোবাসার ছোঁয়া লুকিয়ে থাকে।
ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব হল দীপাবলি। এটি সংস্কৃত শব্দ থেকে উদ্ভূত এবং এর অর্থ হল সজ্জিত প্রদীপের সারি। দীপাবলি মানেই অন্ধকারের উপর আলোর আধিপত্য, অজ্ঞতার উপর জ্ঞান, হতাশার উপর আশা এবং খারাপের উপর ভালোর জয়। অথচ এই সময় শব্দদূষণ, বায়ুদূষণের প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শহর এবং পরিবেশ। শব্দদূষণ, উৎসবের সঙ্গে শব্দবাজির তাণ্ডবের মেলবন্ধন বর্তমানে প্রকৃতির জন্য ভাবনার বিষয়। সকলকে সোচ্চার হতে হবে দূষণ প্রতিরোধে। তাই বাচ্চাদের হাতে শব্দবাজি উপহার হিসেবে তুলে না দিয়ে, আসুন উৎসবকে পরিবেশবান্ধব ও সুন্দর করে তুলি। এই উপলক্ষ্যে ভেষজ পণ্য উপহার হিসেবে বাছতে পারেন। উপভোগ করুন দীপাবলি— তবে শব্দে নয়, আলোয়।