গত কয়েক দশকে অভিভাবকত্বের ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেরিতে হলেও ভারতীয়রা ভালো অভিভাবকত্বের বিষয়ে আলোচনা করছেন কিংবা পরামর্শ নিচ্ছেন। অভিভাবকত্ব মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে কঠিন এবং সবচেয়ে জটিল কাজগুলির মধ্যে পড়ে। গত দেড় শতাব্দীর অগণিত গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, পিতামাতারা তাদের সন্তানদের ব্যক্তিত্ব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চান।
সমস্যা হল, অভিভাবকত্ব পিতামাতার কাঁধে এক বিরাট দায়িত্ব, অথচ ভালো পিতামাতা হওয়ার দক্ষতা অর্জনের জন্য কোনও আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বা স্ক্রিনিং নেই। যখন থেকে ভারতীয় সমাজ যৌথ পরিবার থেকে নিউক্লিয়ার সেট-আপে রূপান্তরিত হয়েছে, তখন থেকেই পিতামাতার জীবনশৈলীতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। পিতামাতারা আর তাদের প্রবীণদের কাছ থেকে কার্যকর উপদেশ পান না এখন কিংবা নেন না। এইরকম পরিস্থিতিতে ভারতীয় পিতামাতাদের, বিশেষকরে শহুরে অভিভাবকদের দু'টি বিভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে— সম্পূর্ণ অজ্ঞ এবং অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন পিতামাতা।
কনসালটেন্ট সাইকোলজিস্ট শ্রীতমা ঘোষ-এর বক্তব্য এবং পরামর্শ:
O আমাদের বর্তমান সামাজিক শিক্ষা অনেক সময় সন্তানকে সুফল দেয় না সে ভাবে। প্রায়ই বাবা-মা তাদের সন্তানকে বলেন— “তুমি প্রশংসনীয় কিছু করলে, অন্যরা প্রশংসা করবে এবং সেটাই হবে আমাদের জয়।' কিন্তু প্রশ্ন হল, সন্তান যদি প্রশংসনীয় কিছু কাজ করে, তাহলে প্রশংসা পাওয়া উচিত তার, মা-বাবা কেন এক্ষেত্রে নিজেদের জয়ী মনে করবেন? তাই সন্তানের কৃতিত্বের স্বীকৃতি তাকেই দিন এবং অন্যরাও যাতে আপনার সন্তানের ভালো কাজের প্রশংসা করেন, সেই বিষয়ে তাদেরও উৎসাহিত করুন। মনে রাখবেন, আপনার সন্তান যদি তার ছোটো-বড়ো কৃতিত্বের স্বীকৃতি পায়, তাহলে তাদের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের আত্ম-ধারণাকে উন্নত করবে। এটি তাদের মধ্যে আরও আত্মবিশ্বাস বাড়াবে।
O ভারতীয় পিতামাতারা প্রায়শই তাদের সন্তানকে অন্যের কর্মক্ষমতার সঙ্গে তুলনা করতে চান। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল এবং অস্বাস্থ্যকর। এর ফলে আপনার সন্তানের অহেতুক মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে এবং সে যদি প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়, তাহলে তা যদি সে মেনে নিতে না পারে, তাহলে সে মানসিক শক্তি হারিয়ে ভেঙে পড়তে পারে, এমনকী আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে পারে। অতএব, সন্তানকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করে তাকে চরম ক্ষতির দিকে ঠেলে দেবেন না।