প্রীতম ফোনটা রেখে উত্তেজনায় হাঁফাচ্ছিল। অনন্যা আসছে ওর ফ্ল্যাটে, আর ফ্ল্যাটে সে এখন একা। অনন্যাই ক’দিন ধরে বলছিল- তোমাদের ফ্ল্যাটটা দেখতে যাব। কবে যাব বলো?
প্রীতম বলেছিল— ফ্ল্যাটে আসবে! বাবা মা তো সন্দেহ করবে তাহলে! কী পরিচয় দেব?
—বোকার মতো কথা বলছ কেন? তোমার বাবা-মা যখন থাকবে না, তখনই যাব। তাহলেই হল তো?
—ও, তাহলে ঠিক আছে, বলেই ঢোঁক গিলল প্রীতম। বলছে কী মেয়েটা! প্রেমিকের ফ্ল্যাটে প্রথম আসবে, তাও যখন প্রেমিক একা! কী সাহস!
—কী হল? ভয় পাচ্ছ নাকি? আমি বাঘ ভাল্লুক নই, যে তোমাকে খেয়ে ফেলব। অনন্যার গলায় শ্লেষ!
—না, না, ভয় পাব কেন? ঠিক আছে। বাবা মা তো দু’একদিন পরেই ছোটোমাসির বাড়ি যাবে। তখন আমি তোমাকে ফোন করে দেব। তুমি চলে এসো।
—বাহ, দারুণ মজা হবে। তোমার সব কবিতার বই দেখব সেদিন।
—সাবধানে আসবে কিন্তু, কেউ যেন কিছু জানতে না পারে। শেষে কে কী ভাববে!
—ঠিক আছে, ঠিক আছে, অত বলতে হবে না। ভীতুর ডিম একটা।
এসে গেল সেই দিন। সকাল থেকেই খালি ভেবেছে প্রীতম, কখন সেই কাঙ্ক্ষিত সময়টা আসবে, গতকাল রাতে টেনশনে ভালো ঘুম পর্যন্ত হয়নি। বিকেলে প্রীতম জানিয়ে দিল চলে এসো, বাবা মা নেই, রাস্তা ক্লিয়ার!
অনন্যা বলল, “ওকে ডার্লিং। এখনই আসছি, পাঁচ মিনিটের মধ্যে।’ প্রীতমের বুকের মধ্যে হার্টটা যেন তখন উত্তেজনা আর আনন্দে লাফাচ্ছে।
বাবা-মা তো এই সবে বেরোলেন। আসতে এখনও ঘন্টা দুয়েক। ছোটো মাসির বাড়িতে ওদের গুরুদেব আসছেন। কী সব অনুষ্ঠান হবে। সকালেই প্রীতম জিজ্ঞেস করেছিল দুরুদুরু বুকে— মা, ছোটো মাসির বাড়ির অনুষ্ঠান কবে যেন?
মা বলেছিলেন— আজই তো, তুই যাবি নাকি? তাহলে চল, সবাই একসঙ্গেই যাই।
প্রীতম বলেছিল— না, না, আমার পড়া আছে। আর তাছাড়া ওইসব গুরুদেবের গানটান আমার ভালো লাগে না। বলেই ভাবল বাবা- মা কিছু আবার সন্দেহ না করে! প্ল্যানটা না বিগড়ে যায়। এ সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কোনও সমস্যা হয়নি। বাবা-মা বিকেল বিকেলই বেরিয়ে গেলেন। যাওয়ার সময় প্রীতমকে বলে গেলেন — বাইরে বেরোবি না কোথাও। এখানেই পড়বি। আর না দেখে কাউকে দরজা খুলবি না। আমরা এক-দেড় ঘন্টার মধ্যেই ফিরে আসছি।
প্রীতম জানে দেড় নয় পাক্কা দু’ঘণ্টা লাগবে। তবুও সাবধানের মার নেই, এক ঘণ্টার মধ্যেই অনন্যাকে ছেড়ে দিতে হবে। কিন্তু এই এক ঘন্টা কী করবে দুজনে? অনন্যাকে জড়িয়ে ধরে কিস করবে? ধুর, সে তো কতই করেছে। আজ আরও বেশি কিছু চাই। কিন্তু অনন্যা যদি রাজি না হয়? যদি বাবা-মা এসে যায়? আগামী একটা ঘন্টা কী কী ঘটতে পারে, ভাবতেই পারছিল না প্রীতম।
আর মাত্র পাঁচ মিনিট। তাড়াতাড়ি বারমুডাটা ছেড়ে জিন্সটা পরে নিল প্রীতম, উপরে একটা দারুণ দেখতে হলুদ টি শার্ট পরল, ক’দিন আগেই কেনা। এখন বেশ দেখাচ্ছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, চুলটায় হাত চালিয়ে আলগা ভাবে গুছিয়ে নিল, একটু কেয়ারলেস থাক। হঠাই ও ভাবল, আরে এত সেজেগুজে কি কেউ বাড়িতে থাকে নাকি? তার চেয়ে সাধারণ নীল স্যান্ডো গেঞ্জিটাই ভালো। ওর ব্যায়াম করা পেটানো চেহারা, বেশ স্মার্ট আর সেক্সি দেখাবে, আবার ঘরোয়াও।
আবার টি শার্ট ছেড়ে ও স্যান্ডো গেঞ্জিটা পরে ফেলল। ডিও মাখবে নাকি? নাঃ, সেটাও থাক। অনন্যা যেন না ভাবে, ও আসবে বলে প্রীতম সেজেগুজে রেডি হয়ে রয়েছে! খুব লজ্জার ব্যাপার হবে সেটা। অনন্যা যা স্মার্ট মেয়ে, ওকে ল্যাজেগোবরে করতে ছাড়বে না। তার চেয়ে সাধারণ ভাবে থাকাই ভালো। কোন ঘরে বসাবে? খুবই সাধাসিধা ফ্ল্যাট। সামনের ঘরটাই ভালো। একটা চেয়ার আর বড়ো খাটটা আছে। খাটেই বসবে দুজনে, তারপর খাটেই… আর ভাবতে পারে না প্রীতম।
বারান্দার কাছে গিয়ে আলতো উঁকি মেরে বাইরে দেখে নিল অনন্যা আসছে নাকি। কেউ দেখে ফেলবে না তো ওকে ফ্ল্যাটে আসতে, তাহলেই চিত্তির। যদি বাবা-মার কানে যায় সর্বনাশ হবে, ভাবতেই শিউরে উঠল ও। কিন্তু এখন আর ফিরে যাবার উপায় নেই, একটু রিস্ক তো নিতেই হয়। মনে মনে সাহস সঞ্চয় করল প্রীতম। ধুর, কেউ জানতে পারবে না। মাত্র তো এক ঘণ্টার ব্যাপার !
কী করবে দুজনে? খাটে বসে গল্প? কীসের গল্প? নতুন কেনা কবিতার বইগুলো তো কবে থেকেই অনন্যা দেখতে চেয়েছিল। ফ্ল্যাটটাও দেখতে চেয়েছে। কী যে দেখার আছে এই ম্যাড়মেড়ে ফ্ল্যাটটাতে! দুটো ঘর, ডাইনিং, কিচেন বাথরুম আর বারান্দা। তার মধ্যে বারান্দায় বের হওয়া যাবে না। ওপাশের ফ্ল্যাটগুলো থেকে সবাই দেখে ফেলবে। বারান্দার দরজাটা তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দিল প্রীতম। বার বার ঘড়ি দেখতে থাকল। পাঁচ মিনিট তো হয়ে গেছে, এখনও আসছে না কেন অনন্যা? আসবে তো! যদি না আসে কোনও কারণে? ইস্, তাহলে তো সুযোগটাই নষ্ট। আর কি এমন দিন আসবে?
আর বারান্দা দিয়ে বাইরে দেখা যাবে না, দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। সদর দরজার কাছে সিঁড়িতে, কান খাড়া করে শুনতে চেষ্টা করে প্রীতম কেউ কি আসছে? সিঁড়িতে পায়ের শব্দ ওকে ঝাঁকিয়ে দিয়ে যায়। এই বুঝি আসছে অনন্যা, আর মাত্র কয়েকটা মিনিট। বুক দুরদুর করে অজানা আশঙ্কায়— কী হয়, কী হয়।
(ক্রমশ……)