সবুজ গাছগাছালি, ধানখেত, সবজিখেত, আম-লিচুর বাগান এবং নদী পরিবেষ্টিত হয়ে বিরাজ করছে মুর্শিদাবাদ।একসময় বাংলার নবাবদের আধিপত্য ছিল এই মুর্শিদাবাদে। তারপর মুর্শিদাবাদ ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দখলে। তাই, ইতিহাসের গন্ধ লেগে আছে মুর্শিদাবাদের আনাচেকানাচে। আর ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত সেই মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জে এখন পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে–‘হাউস অফ শেহেরওয়ালি’।
আসলে, সারা বিশ্বের মিউজিয়াম হোটেলগুলি এখন পর্যটকদের আকর্ষণ করছে। যেখানে ইতিহাস জীবন্ত হয়ে ওঠে এবং পর্যটকরা প্রকৃত সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারেন। তথ্য এবং বিনোদনকে একত্রিত করে, অতীতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে এবং প্রকৃত ইতিহাসকে জানতে ও বুঝতে সাহায্য করে এই মিউজিয়াম হোটেলগুলি।
শেহেরওয়ালি সংস্কৃতির সঙ্গে ইতিহাসের মেলবন্ধন ঘটিয়ে, ‘হাউস অফ শেহেরওয়ালি’ বিলাসিতা এবং ঐতিহ্যের সঙ্গম ঘটিয়েছে। এর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং ফেলে দেওয়া ঐতিহাসিক সামগ্রীর অনন্য পুনঃব্যবহার ও পুনঃসংস্করণের মাধ্যমে রাজকীয় রূপ দিয়েছে। মুর্শিদাবাদের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই মিউজিয়াম হোটেলটি এএসআই দ্বারা সুরক্ষিত প্রায় ৫০টি প্রধান সাইটের ৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে অবস্থিত। শেহেরওয়ালি হাউসটি বিশাল স্থানবিশিষ্ট, যা প্রধান শেহেরওয়ালি সরদার পরিবারের আদলে তৈরি, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সহ, অবসর যাপনের আরামদায়ক এক অভিজ্ঞতা অর্জন নিশ্চিত করে।
মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জে অবস্থিত ‘হাউস অফ শেহেরওয়ালি’ তার শাশ্বত সৌন্দর্য এবং অতুলনীয় আতিথেয়তার জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। পূর্ব ভারতে এই ধরণের মিউজিয়াম হোটেল প্রায় বিরল বলা যায়। ইতিহাসের গন্ধ মাখা এই মিউজিয়াম হোটেলটির অবস্থান আজিমগঞ্জের ভাগীরথী নদীর পাড়ে। শান্ত, সুন্দর পরিবেশে সময় কাটানোর জন্য একেবারে আদর্শ আশ্রয়। ঐতিহ্য, আধুনিকতা এবং সূক্ষ্ম প্রাচীন শিল্পে সজ্জিত ‘হাউস অফ শেহেরওয়ালি’ দেবে রাজকীয় অভিজ্ঞতা।
পাশেই রয়েছে একটি সুন্দর জৈন মন্দির। মিউজিয়াম হোটেলটি ব্রিটিশ, ডাচ, ফরাসি এবং পর্তুগিজ সংগ্রহশালার পাশাপাশি, শেহেরওয়ালি, মোগল এবং বাঙালি পরিবারের ঐতিহ্য তুলে ধরে, যা নান্দনিকতা এবং ঐতিহাসিক কাহিনির এক অনন্য মিশ্রণ তৈরি করে। এই শিল্পের সংমিশ্রণ প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে পড়ে ‘হাউস অফ শেহেরওয়ালি’-কে একটি মিউজিয়াম হোটেলে পরিণত করে, যেখানে মুর্শিদাবাদের গৌরবময় অতীতকে প্রদর্শন করা হয়।
‘হাউস অফ শেহেরওয়ালি’ও ইতিহাসের মূল্যবান স্মৃতি বহন করে চলেছে। সন্ধ্যায় এক কাপ চা পান করতে-করতে, ছাদ থেকে নদীর মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। আশেপাশের রাস্তার দু’দিকে সবুজের সমারোহও চোখকে আরাম দেয়। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত টাটকা খাবার আর নানারকম মিষ্টি পাওয়া যায় আশপাশের দোকানগুলিতে। হাউস অফ শেহেরওয়ালির অস্তিত্ব, ঐতিহ্য এবং রক্ষকের ভূমিকায় রয়েছেন প্রদীপ চোপড়া। যিনি মুর্শিদাবাদের জৈন সম্প্রদায়ের শিকড়যুক্ত। তাঁর লক্ষ্য—এই ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং উদযাপন করা। শুধু তাই নয়, শিল্প এবং প্রাচীন জিনিসগুলির প্রতি রয়েছে তাঁর আবেগ মিশ্রিত সংযোগ।