বয়স অল্প হলে যে-কোনও পোশাক পরলে যেমন মানিয়ে যায়, কখনও আবার তাদের সেই নতুন পোশাকই ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হয়ে ওঠে। কিন্তু বয়স ৩০-৩৫-এ পৌঁছালেই বুড়িয়ে যাচ্ছেন, নিজেকে আর ফ্যাশনেবল রাখা সম্ভব নয়— এমন ধারণা করে নেওয়াটা ঠিক নয়।

ফ্যাশন ডিজাইনারদের মতে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহিলারা যদি সঠিক পোশাক নির্বাচন করেন, তাহলে তারাও সৌন্দর্যে নতুন প্রজন্মকে ভালোমতো টেক্কা দিতে পারবেন।

অল্প বয়সে ম্যাচিওর লুক পাওয়ার জন্য কখনও মায়ের শাড়ি কিংবা সালোয়ার নিয়ে কিশোরীরা পরেই থাকে। কিন্তু শরীর, মন যত ম্যাচিওর করবে, ততই খুব কম প্রয়াসে নিজের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা সহজ হয়ে যাবে। দরকার শুধু ওয়ার্ডরোব মেকওভার।

বাহারি সব ডিজাইনের কুর্তি, কামিজ শুধু ক্যাজুয়াল পোশাক হিসেবেই নয়, সান্ধ্য পার্টিতেও প্রাধান্য পাচ্ছে ব্যাপক ভাবে। পরিধেয় পোশাকের ধরনে নতুনত্ব আনলে যেমনটি ভালো লাগবে নিজের, তেমনই অন্যদের চোখেও হয়ে ওঠা যায় আকর্ষণীয়। ভদ্র-নম্র পোশাক হিসাবে গোটা উত্তর ভারতে লম্বা ঝুলের কামিজ ও সালোয়ার বা পালাজো স্যুটের জয়জয়কার। কাপড়ের ধরন ও প্যাটার্নভেদে বিভিন্ন দাম পড়ে এইসব পোশাকের। ডিজাইনাররা নিজস্ব পছন্দ এবং তরুণীদের কথা মাথায় রেখে, নিয়ে এসেছেন বিভিন্ন মনমাতানো ডিজাইনের কুর্তি আর কামিজ।

সালোয়ার স্যুটের সুন্দর মার্জিত শৈলী চিরকালই ফ্যাশনেবল। নরম আরামদায়ক ফ্যাব্রিক, সুন্দর কাট দ্বারা আকর্ষণীয় করা হয়েছে এইসব পোশাককে। কখনও মাল্টিকালার ফ্লাওয়ার মোটিফ, কখনও প্রিন্টেড বা ফাইন এমব্রয়ডারি করা ইয়োক বা হেমলাইন। স্টোন ফিটিং-সহ থ্রি-কোয়ার্টার হাতা। যেন হাজারো রঙের সংযোজন ঘটেছে এইসব পোশাকে।

বিয়েবাড়িতেও সালোয়ার স্যুট খুবই মানানসই। এই পোশাক পরতে চাইলে, সবচেয়ে ভালো মানাবে সিল্কের কুর্তা আর বেনারসি দুপাট্টার কম্বিনেশন। সিল্ক কুর্তার সঙ্গে মানিয়ে যায় যে-কোনও উজ্জ্বল রঙের দুর্দান্ত একটি বেনারসি দুপাট্টা। সুবিধে হচ্ছে, বাঙালিদের বাড়িতে বেনারসি এক-আধটা পাওয়া যাবেই। অনেক সময় মা-দিদিমাদের পুরোনো বেনারসিও অযত্নে পড়ে থাকে আলমারির এক কোণে। সেই শাড়িগুলিকে কাজে লাগানোর একটা চেষ্টা করে দেখাই যায়।

এমন অনেক ডিজাইনার আছেন, যাঁরা পুরোনো বেনারসির পাড় বা আঁচলটুকু দারুণ ভাবে কাজে লাগিয়ে আপনার জন্য তাক লাগানো পোশাক বানিয়ে দিতে পারেন। বেনারসি শাড়ির ভালো অংশটুকু কেটে নিয়ে খুব ভালো মানের লাইনিং লাগিয়ে আস্ত কুর্তা তৈরি করে নেওয়া সম্ভব। কারুকাজ করা আঁচল দিয়ে বানানো যায় স্কার্ফ। স্রেফ পাড়টুকু খুলে নিয়ে অন্য কোনও সলিড কালারের শাড়িতে লাগিয়ে নিন, চমৎকার দেখাবে!

যেহেতু আজকাল কামিজের কারিগরি তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতোই সুন্দর, তাই এর সঙ্গে একগাদা গয়না পরে পোশাকের সৌন্দর্যটা নষ্ট করার মানেই হয় না! যে-কোনও একটি তাক লাগানো গয়না বেছে নিন। তা ঢোকার হতে পারে, হতে পারে কানের ভারী দুল বা হাতের ব্রেসলেট। মেক-আপ করুন পোশাকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। লিপস্টিক, আইশ্যাডো বা ব্লাশ অন-এ অতি উচ্চকিত রঙের ব্যবহার কিংবা দারুণ হেয়ারস্টাইল ছাড়াও আপনি ঝলমলিয়ে উঠবেন অনুষ্ঠানবাড়িতে!

সঠিক মাপ ও শেপ-এর পোশাক

সব বয়সেই ফিগার মেনটেইন করতে পারবেন অর্থাৎ ৩৪-২২-৩৬ ফিগার হবে- এটা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভবপর নাও হয়ে উঠতে পারে। তার মানে এই নয় যে, সঠিক শেপ- এর ফিটিংস ড্রেস পরা ছেড়ে দিতে হবে। ফিগার যদি সুন্দর হয়, যে-কোনও বয়সেই মাপ অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করতে পারেন, ফলে নিজের পারফেক্ট বডিশেপ অপরের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেই এবং নিজের পছন্দের পোশাকেই হয়ে উঠতে পারবেন অনন্যা।

বয়স বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে পেটে যদি সামান্য মেদ-ও জমা হয়, , চিন্তার কিছু নেই। বডি হাগিং ড্রেস যেমন টামি হাইড করবে, ঠিক তেমনই পাবেন পারফেক্ট লুক।

যদি ব্রেস্ট লাইন সামান্য ঝুঁকে গেছে বলে মনে হয়, তাহলে সাপোর্টিভ ব্রা পরে সঠিক লুক আনতে পারেন। বডি শেপার শেপওয়্যার, সাপোর্টিভ ব্রা-এর নানা ভ্যারাইটি এখন মার্কেট এবং অনলাইনেও সহজে অ্যাভেলেবল।

ব্ল্যাক শেডস পোশাক

ওয়ার্ডরোব-এ ব্ল্যাক শেডস-এর কালেকশন অবশ্যই রাখুন। যেমন ব্ল্যাক ড্রেস, টপ, কুর্তি, শাড়ি, জিন্‌স ইত্যাদি। এভারগ্রিন ব্ল্যাক শেড কখনওই আউট অফ ফ্যাশন হবে না। যে-কোনও সিজন-এ, নিজের খুশিমতো পার্টিতে, ফর্মাল মিটিং-এ অথবা অনুষ্ঠান বা ফেস্টিভ্যালে ব্ল্যাক ড্রেস, শাড়ি— সবকিছুই পরা যেতে পারে। কালো রঙের পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং হ্যান্ডব্যাগ, হাতঘড়ি, ফুটওয়্যার সবকিছুই আজও ফ্যাশনে ইন।

নি-লেংথ ড্রেস

আগে পার্টিতে ড্রেস পরে অনায়াসেই যখন নিজেকে ক্যারি করতে পেরেছেন, তাহলে এখন করতে কীসের লজ্জা? ৩০ বছর বয়স পেরিয়ে যাওয়া মানে আপনি ড্রেস পরে আর পার্টি এনজয় করতে পারবেন না— এমন নয়। ফ্যাশন এবং কমফর্ট দুটোরই খেয়াল রেখে শর্ট ড্রেস-এর বদলে হাঁটু পর্যন্ত ড্রেস পরুন, আপনার সৌন্দর্য বা ফ্যাশনে এতটুকু ঘাটতি হবে না।

স্ট্র্যাপি টপস

কলেজে থাকাকালীন স্ট্র্যাপি টপস পরতে যখন দ্বিধা করেননি, তখন একটু বেশি বয়সে এসে কেন এটা অ্যাভয়েড করবেন? এখনও নিজের ওয়ার্ডরোব-এ স্ট্র্যাপি টপস রাখতেই পারেন। কিন্তু যখন কিনবেন, তখন একটু চওড়া স্ট্র্যাপ-এর ড্রেস বা টপ হলেই ভালো হয়। এতে আপনার কমফর্ট লেভেল-ও বজায় থাকবে আর দেখতেও স্টাইলিশ লাগবে।

ওয়ান পিস ড্রেস

ওয়ান পিস, গাউন, ম্যাক্সি, বিচ ড্রেস ইত্যাদি ৩০ বছর বয়সের পরেও অনায়াসে পরতে পারেন। এই ধরনের আউটফিট-এ যথেষ্ট ফ্যাশনেবল হয়ে উঠতে পারবেন। পার্টি, অনুষ্ঠানে ওয়ানপিস বা গাউন পরতে পারেন, আবার হলিডে সেলিব্রেশনের সময় বিচ ড্রেস আপনার পার্সোনালিটির সঙ্গে মানানসই হতে পারে। রেগুলার ওয়্যার-এর জন্য ম্যাক্সি ড্রেসও ট্রাই করতে পারেন।

জিন্‌স

টিনএজারস থেকে শুরু করে, সব বয়সের মহিলারাই জিন্স পরতে পছন্দ করেন। তবে একটু বেশি বয়সে জিন্স-এর  সঙ্গে টাইট ফিট স্কিনি টি-শার্ট একটু বিসদৃশ লাগতে পারে। ফর্মাল শার্ট, লুজ কুর্তার সঙ্গে স্মার্ট দেখতে লাগবে। লং ওয়েট-এর বদলে হাই ওয়েট জিন্‌স আপনাকে বেশি মানাবে।

শাড়ি

রেগুলার ড্রেস বা প্যান্টস, টপ, জিন্স ইত্যাদির লুকে যদি বোর ফিল করতে আরম্ভ করেন, তাহলে শাড়ি ট্রাই করে দেখতে পারেন। চেহারায় ভালো একটা পরিবর্তন আসবে। শরীরের খামতিগুলো শাড়ির সাহায্যে অনায়াসেই লুকিয়ে ফেলা সম্ভব আকষর্ণীয় লুক বজায় রেখেই। শাড়ির সঙ্গে স্লিভলেস, ব্যাকলেস, হল্টার অথবা টি-নেক ব্লাউজ পরুন, আপনার স্টাইল স্টেটমেন্ট অনেকেরই ঈর্ষার কারণ হতে পারে। বিশেষ কোনও জায়গায় রয়্যাল লুক ক্যারি করতে হলে বেছে নিন ডিজাইনার শাড়ি।

মিডিয়াম-সাইজ স্কার্ট

শর্ট স্কার্ট বা খুব লম্বা স্কার্ট নয়, হাঁটু অবধি বা হাঁটুর একটু নীচে অবধি স্কার্ট পরতেই পারেন। টি-শার্ট বা টপ-এর পরিবর্তে শর্ট, কুর্তির সঙ্গে পেয়ার করুন। এটি যথেষ্ট স্মার্ট ড্রেস। ডার্ক বা ব্রাইট শেড লং স্কার্টের সঙ্গে ম্যাট কালার এবং লাইট কালারের কুর্তি আপনাকে দেবে ব্যালেন্সড লুক।

জ্যাকেট অথবা কোট

জিন্স অথবা স্কার্টের সঙ্গে টাইট ফিটিং টপ, টি-শার্ট যদি পরেন, উপরে পরে নিন জ্যাকেট বা কোট, যাতে নিজেকে সফেস্টিকেটেড লুক দেওয়া যায়। যদি আপনার পোশাক ফুলস্লিভস হয়, তাহলে স্লিভলেস জ্যাকেট বা কোট আপনার সাজকে পারফেক্ট করে তুলবে।

আরো গল্প পড়তে ক্লিক করুন...